আলিপুরদুয়ার: মানুষেরই অবহেলায় ফেলে দেওয়া প্ল্যাস্টিকের বয়ামের ফাঁদে আটকে প্রাণ যেতে বসেছিল এক মা কুকুরের। আবার গুটিকতক মানুষের চেষ্টায় প্রাণ বাঁচল সেই পথ কুকুরের। সঙ্গে রক্ষা পেল ওই সদ্য মা হওয়া কুকুরের গুটিকয়েক একরত্তির। রবিবার দুপুরে এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকল আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটা শহরের দেবন্ধুপাড়া।
সাতদিন আগে খিদের তাড়নায় কারুর ফলে যাওয়া একটি প্ল্যাস্টিকের বয়ামের ভিতরে রাখা খাবারের লোভে মাথা ঢুকিয়ে ছিল ওই কুকুরটি। তাতেই বিপত্তি। ওই বয়ামে মাথা আটকে যাওয়াতে মহা ফাঁপরে পড়ে। নিজের শত চেষ্টাতেও আর মুক্তি মেলেনি তার। খিদে-তেষ্টায় প্রায় মরণাপন্ন হয়ে দিকভ্রান্তের মতো ছোটাছুটি করতে থাকে।
অন্যদিকে, মায়ের দুধের অভাবে প্রাণ সংশয় হয়ে ওঠে সদ্যোজাত শাবকদের। কিন্তু ঘটনাটি নজর এড়ায়নি স্থানীয় একদল যুবক ও কিশোরের। একদিকে যেমন কুকুরটিকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তাঁরা। অন্যদিকে, শুকনো নালায় পড়ে থাকা শাবকদের আদরযত্নে প্রতিপালন করতে থাকেন। শেষপর্যন্ত রবিবার দুপুরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে কব্জা করা হয় মা কুকুরকে। তারপর প্রায় দু’ঘন্টার চেষ্টায় ধারাল কাটার দিয়ে কাটা হয় ওই বয়াম। মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মা কুকুরটি ছুটে যায় তার শাবকদের খোঁজে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন শুভদীপ, রোহন, দেবাশিস, রাজদীপ, সৌরিক ও রাহুলরা।
আরও পড়ুন- মুঠো মুঠো মৌমাছি মুখে পুরলেন দার্জিলিংয়ের বিজেপি বিধায়ক, ভাইরাল ভিডিয়ো
শুভদীপ নাগ জানিয়েছেন, মুখে বয়াম আটকে যাওয়ার দরুন কুকুটির অসহায় অবস্থা লক্ষ্য করেই আমাদের সবার মন কেঁদে উঠেছিল। সঙ্গে খুদে শাবকগুলির প্রাণ বাঁচানোটাও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ফলে একটা শেষ ঝুঁকি নিয়েছিলাম সবাই মিলে। শেষ পর্যন্ত প্রায় ধুঁকতে থাকা মা কুকুর ও তার শাবকদের রক্ষা করতে পেরে কী যে স্বস্তি হচ্ছে তা বলে বোঝাতে পারব না।
স্থানীয় পশুপ্রেমী মৃন্ময় সরকার জানিয়েছেন, ওদের জন্যে কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। সত্যিই এখনও সব মানুষের ভিতর থেকে মনুষ্যত্ব চলে যায়নিষ বিশিষ্ট পশুপ্রেমী ও ন্যাফ মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, মানুষ ও পশুর সহাবস্থানের বড় উদাহরণ আর কীই বা হতে পারে? কুকুর যেমন মানুষের প্রকৃত বন্ধু, ঠিক তেমনই ফালাকাটার ওই নবীন প্রজন্মের ছেলেগুলি সমাজকে এক নতুন শিক্ষা দিল কুকুরটির প্রাণ বাঁচানোর মধ্য দিয়ে।