আলিপুরদুয়ার: আবার প্রকাশ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এবার আলিপুরদুয়ারের নিউল্যান্ডস কুমারগ্রাম সংকোশ (এন কে এস ) পঞ্চায়েত প্রধানকে পদত্যাগের নির্দেশ দিতেই, দলের জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে বালি-পাথর কারবারিদের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ আনলেন তৃণমূলেরই এক প্রধান। এমনকী পাচারকারীদের কাছ থেকে লরিপ্রতি ৫০০-১০০০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুললেন তাঁর বিরুদ্ধে।
আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রাম ব্লকের এন কে এস পঞ্চায়েত। এই পঞ্চায়েতে ১৪ টি আসন। তৃণমূল কংগ্রেস ১৩ এবং বিজেপির ১টি। প্রধান নির্বাচিত হয়েছিলেন রানা বিশ্বাস। এদিন এন কে এস গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রানা বিশ্বাস অভিযোগ করেন, ‘জেলা প্রশাসন সংকোশ নদীর অবৈধ বাঁধ ভেঙে দেয়। এর পর থেকেই আমার উপর অত্যাচার বেড়ে যায়। বালি-পাথর পাচারের অবৈধ কারবার বন্ধ হয়ে যায়।’
এছাড়াও তিনি বলেন, ‘বালির ট্রাক প্রতি ৫০০ টাকা থেকে হাজার টাকা পেতেন শাসকদলের জেলা সভাপতি প্রকাশচিক বরাইক। আমাকে ৪ তারিখ জেলা পার্টি অফিসে ডাকা হয়। বালি মাফিয়াদের করা গাড়িতে ওই মিটিংয়ে গিয়েছিলেন পঞ্চায়েত সদস্যরা। আমাকে পদত্যাগ করার কথা বলেন। আমি সমাজ ও পরিবেশ রক্ষার কাজ করেছি। এখানে উলটো ঘটনা ঘটছে। যদি দুর্নীতি থাকে তবে কমিটিতে ওই পঞ্চায়েত সদস্য আছেন।আমি যদি বালি ও পাথরের দুর্নীতে থাকতাম তবে এটা ভাঙার চেষ্টা কেন করতাম।’
কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে রানা বিশ্বাসের পদত্যাগের দাবিতে একাধিকবার সরব হয়েছেন এন কে এস পঞ্চায়েত সদস্যরা। একাধিকবার এন কে এস গ্রাম পঞ্চায়েতে অফিসের সামনে পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান সকলে। তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যদের অভিযোগে গত ৪ জানুয়ারি রানা বিশ্বাস ও পঞ্চায়েত সদস্যদের জেলা তৃণমূল কার্যালয়ে ডাকা হয়। দীর্ঘ বৈঠক শেষে রানা বিশ্বাস এবং উপপ্রধানকে পদত্যাগের নির্দেশ দেয় জেলা তৃণমূল। এর পরেই রানা বিশ্বাস জেলা সভাপতি প্রকাশচিক বরাইকের বিরুদ্ধে বালি পাথর মাফিয়াদের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ তোলেন। জেলা তৃণমূলের সিদ্ধান্তের পর উপপ্রধান কোলেশটিকা বাকলা গত ৫ জানুয়ারি পদত্যাগ করলেও রানা বিশ্বাস তারপর থেকে এখনও পদত্যাগপত্র দেননি।
আরও পড়ুন- Bankura Resort : পরিকাঠামোহীন বনশ্রী রিসর্ট লিজ-ডাকে বিতর্কে শ্যামনগর পঞ্চায়েত
এন কে এস গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কোলেশটিকা বাকলা অভিযোগ করেন, প্রধান নিজের খেয়ালে কাজ করতেন। অনেক কাজ হয়নি কিন্তু টাকা উঠেছে। মোট ১২ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। তাই আমরা প্রধানের বিরুদ্ধে নেমেছি। ১০ জন পঞ্চায়েত সদস্য প্রধানের বিরুদ্ধে হলেও বাকি ২ জন প্রধানের পক্ষে রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে’।
এ ব্যাপারে তৃণমূলের জেলা সভাপতি প্রকাশচিক বরাই বলেন, গত ৪ জানুয়ারি পঞ্চায়েত সদস্যদের অভিযোগে প্রধান রানা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে দল সিদ্ধান্ত নেয়। তাঁকে প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করার কথা বলা হয়। তবে উনি দলের সেই সিদ্ধান্তকে অবমাননা করেছেন। নিজের দোষ ঢাকতে আমার উপর মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন। ওনাকে এই বিষয়ে আইনি নোটিস পাঠানো হয়েছে। দলে কোনও দুর্নীতিবাজদের বরদাস্ত করা হবে না। আমার বিরুদ্ধে প্রমাণ থাকলে সেই সময় অভিযোগ কেন করেননি। আমি পুলিস এবং প্রশাসনকে বলেছি এই বিষয়ে সঠিক তদন্ত করতে। যে বা যারা এই বিষয়ে দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তাতে যদি আমার বিরুদ্ধে কোনও তথ্য-প্রমাণ থাকে তাহলে দল আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।