Friday, August 1, 2025
Homeজেলার খবরসাইকেলে চড়েই সুন্দরবনের দ্বীপে দ্বীপে 'অক্সিজেন ম্যান'

সাইকেলে চড়েই সুন্দরবনের দ্বীপে দ্বীপে ‘অক্সিজেন ম্যান’

Follow Us :

রাজু দাস, গোসাবা: আমরা উত্তরবঙ্গের ‘অ্যাম্বুলেন্স দাদা’র কথা শুনেছি, যিনি অসুস্থ রোগীর পাশে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পদ্মশ্রী পুরস্কার পেয়েছেন। তেমনই আজ আমরা একজন মানুষের কথা বলব বিপদের সময় যিনি মানুষের পরিত্রাতা। করোনাকালে মানুষ যখন অক্সিজেনের জন্য হাহাকার করছে সেই সময় আক্রান্ত মানুষদের জন্য একা হাতে অক্সিজেন সরবরাহ করে চলেছেন সৌমিত্র মণ্ডল।সুন্দরবনের প্রত্যন্ত দ্বীপে দ্বীপে করোনা আক্রান্তদের বাড়িতে পৌঁছে যান গোসাবার বালি দ্বীপের বাসিন্দা সৌমিত্র। এই কাজে একমাত্র সঙ্গী তাঁর সাইকেল।ফোন পেলেই নিজের সাইকেলের পিছনে অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটার চাপিয়ে এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে পৌঁছে যাচ্ছেন এই যুবক। প্রতিদিন নিয়ম করে বিভিন্ন দ্বীপে দ্বীপে ঘুরে ঘুরে বহু মানুষের অক্সিজেনের সমস্যা মেটাচ্ছেন তিনি। তাঁর কাজে খুশি গোসাবা ব্লক প্রশাসন থেকে শুরু করে ব্লক স্বাস্থ্য দফতর। 

 

 দীর্ঘদিন ধরেই সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের ৯ টি দ্বীপের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ ডায়বেটিস, রক্তচাপ জনিত সমস্যায় আক্রান্ত। সৌমিত্র চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে সমস্ত রোগীদের হাতে বিনামূল্যে ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে আসছেন।এবার করোনা সংক্রমণের জেরে অক্সিজেনের অভাবে বহু মানুষের মৃত্যু ঘটছে। আর গোসাবার মতো প্রত্যন্ত দ্বীপে একদিকে যেমন অক্সিজেন সিলেন্ডারের যথেষ্ট অভাব রয়েছে, তেমনি একের পর এক নদী পার করে সিলিন্ডার রিফিলিং-এর যথেষ্ট অসুবিধা রয়েছে যারফলে অক্সিজেনের অভাবে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এই সমস্যার কথা অনুভব করে নিজের পরিচিত দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় সৌমিত্র একটি অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটর সংগ্রহ করেছেন মাস দুয়েক আগে। আর চিকিৎসকদের কাছ থেকে সেটির ব্যবহার শিখে নিয়েই অসুস্থ মানুষ যাদের অক্সিজেনের অভাব রয়েছে তাঁদের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছেন এই সৌমিত্র ওরফে অক্সিজেন ম্যান।  

 

পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, শৈশব থেকেই বিভিন্ন ধরনের সমাজসেবা মূলক কাজে যুক্ত সৌমিত্র। পড়াশোনা শেষে গোসাবার একটি স্কুলে আংশিক সময়ের শিক্ষক হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন তিনি। কিন্তু বছর তিনেক আগে সেই কাজ হাতছাড়া হয়ে যায়। কাজের খোঁজে হন্যে হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে কাজ না পাওয়ার হতাশায় নিজেই আক্রান্ত হন ডায়বেটিসে। তবে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ভেঙে পড়েন নি তিনি। পরে আরও এগিয়ে যাওয়ার দিকে পা বাড়ান বছর ঊনত্রিশের এই যুবক।নিজে শিক্ষকতা ছেড়ে দিলেও  সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার দুঃস্থ ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার জন্য বইপত্র জোগাড় করা থেকে শুরু করে তাঁদের স্কুল, কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করেন তিনি।  

সৌমিত্র বলেন, “আমাদের চারিদিকে গাছগাছালি আর ম্যানগ্রোভের অরণ্য। তবুও অক্সিজেনের অভাবে এই দ্বীপের মানুষ মারা যাবে এটা মেনে নিতে অসুবিধা হচ্ছিল। তাই কয়েকজন পরিচিতের সহযোগিতায়  একটা অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটার মেশিন সংগ্রহ করি। নিজের মতো করেই এই দ্বীপাঞ্চলের মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।” তাঁর এই কাজে খুশি বিডিও থেকে শুরু করে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক। এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে সৌমিত্রের যাওয়া আসার জন্য বিনামূল্যে নৌকা-পারাপারের ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন স্থানীয় বিডিও। ‘অক্সিজেন ম্যান’কে কাছে পেয়ে যারপরনাই খুশি গ্রামবাসীরা।

RELATED ARTICLES

Most Popular


Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39