পূর্ব বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমান জেলার গর্বের শিল্প নতুনগ্রামের কাঠের পুতুল। পূর্বস্থলীর নতুনগ্রামের কাঠের পুতুলের ‘জিআই’ বা ‘জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন’ তকমা পাওয়ার কাজ কিছুটা এগোল। ওই তকমার জন্য আর্জি জানানো হয়েছিল। সে মতো জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে কাঠের পুতুল সম্পর্কে আরও কিছু খুঁটিনাটি বিষয় জানতে চেয়েছে ‘জিআই ড্রাইভ মিশন’।
‘জিআই’ বা ‘জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন’ তকমা দেওয়ার অর্থ হল, কোনও একটি অঞ্চলের জনপ্রিয় পণ্যকে ভৌগোলিকভাবে চিহ্নিত করা। এর আগে এই জেলার সীতাভোগ-মিহিদানা ও দক্ষিণ দামোদরে উৎপাদিত গোবিন্দভোগ চালও ‘জিআই’ তকমা পেয়েছে। কোন পণ্য ‘জিআই’ তকমা পাবে, তা ঠিক করে কেন্দ্রের ‘ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অব ইন্ডিয়া’-র অন্তর্গত সংস্থা ‘জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন রেজিস্ট্রি’।
প্রশাসন সূত্রের খবর, রসগোল্লার ‘জিআই’ তকমা নিয়ে বাংলা আর ওড়িশার মধ্যে টানাটানির পরে বিশেষ ‘সেল’ তৈরি করা হয়। তারাই এক-একটি অঞ্চলের বিশেষত্ব তুলে ধরে ‘জিআই’ তকমা পাওয়ার জন্য আবেদন করে থাকে। পূর্বস্থলীর নতুনগ্রামের কাঠের পুতুলের জন্যও জেলা প্রশাসনের দাবি, জেলার আঞ্চলিক ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে প্রায় দেড়শো বছর ধরে জড়িয়ে রয়েছে নতুনগ্রামের কাঠের পুতুল। শিল্পীদের তৈরি পেঁচা, রাজারানি ও গৌর-নিতাইয়ের বেশ সুনাম রয়েছে। ভোটের সময় জেলা প্রশাসনও ‘ম্যাসকট’ হিসেবে নতুনগ্রামের পেঁচাকেই তুলে ধরেছিল। এখানকার শিল্পী শম্ভুনাথ ভাস্কর ১৯৫৭ সালে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পান।
শিল্পীদের নিয়ে তৈরি করা হয়েছে শিল্পগ্রাম। ‘ইউনেস্কো’র সঙ্গে তারা যুক্তও হয়েছে। নতুনগ্রামে তৈরি করা হয়েছে ‘হাব’। সেখানে থাকার জায়গা, কাজের জায়গা থেকে মিউজিয়াম পর্যন্ত করা হয়েছে। শিল্পীরা অনলাইনে বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। বিদেশিদেরও ওই গ্রামে যাতায়াত রয়েছে। ‘জিআই’ তকমা পেলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে নতুনগ্রামের পুতুলের মিলবে স্বীকৃতি।
নতুনগ্রামের ৮২টি পরিবারের ২৮৯ জন এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। বছরে কোটি টাকার উপরে বিকিকিনি হয়। জিআই ছাপ ও লোগো পেলে নতুনগ্রামের পুতুলের কদর আরও বাড়বে। জিআই তকমা মিললে নতুনগ্রামের সঙ্গে অগ্রদ্বীপ স্টেশন এলাকার শিল্পীরাও লাভবান হবেন।