ক্রিস্টমাসের অনেক আগে থেকেই সেজে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী স্কটল্যান্ড রাজধানী এডিনবার্গ। জেমস বন্ড-শার্লক হোমস এর শহর এডিনবার্গ। রঙিন আলোয় ঝলসে উঠেছে ঐতিহ্যের শহর। দেদার বিকোচ্ছে জগত বিখ্যাত স্কচ হুইস্কি। এই হুইস্কির প্রথম লিখিত বর্ণনা পাওয়া যায় ১৪৯৪ সালে। স্কটিস কোষাগারের ঐতিহাসিক রেকর্ডে।
কনকনে শীতে এডিনবার্গের চারপাশের রঙটা রামধনুর মতন। রাস্তার দুপাশে ক্রিস্টমাসের মেলা। উৎসবের আবহে চারিদিকে শুধু “জিঙ্গেল বেলস- জিঙ্গেল বেলস”। কেক,চকলেট, পুডিং, প্রেস্ট্রি আর ভরপুর স্কচে মেতেছে স্কটরা। লেসারে UK-এর ফ্ল্যাগ থেকে সান্তা হরিণ সবই ছুটে বেড়ায় বাড়ির দেওয়াল, কিংবা বাগানে। এমনকি রাস্তার দুধারে সারি দিয়ে সাজানো পাইনের ফাঁকে উঁকি মারে ক্রিস্টমাস।
বাঙালিদের কাছে কলকাতার পার্কস্ট্রিট থেকে হেদুয়া বড়দিন নিয়ে যেমন মাতামাতি আর নতুন বছরকে পাবার আনন্দ থাকে, ঠিক তেমনটাই চলে এখানে। এডিনবার্গের ব্যাস্ত শহরে লোকজন ক্রিস্টমাসের কেনাকাটায় ব্যাস্ত, শহরের শপিং মলগুলোতে চলছে দেদার ডিসকাউন্ট। যদিও কলকাতার তুলনায় এখানকার জনসংখ্যা খুবই কম।
তবে স্কটল্যান্ডের সাজানো শহর এডিনবার্গ ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে বিরাট একটা আকর্ষণীয় ব্যাপার। এখানে ওখানে ছড়িয়ে তার ইতিহাস। তার সাথে শুরু হয়েছে ক্রিস্টমাস ফেস্টিভ্যাল,পাথর আর সবুজ ঢাকা প্রিন্সসেস স্ট্রিট গার্ডেনে যথারীতি প্রতিবছরের মতো এবারেও একাধিক দেশের হরেকরকম হাতে বানানো জিনিসের পসার বসেছে। আট থেকে আশি সকলেই সন্ধের পর বাড়ির বাইরে। ফেস্টিভ্যালের সময় দেশ- বিদেশের ভিন্ন স্বাদের খাবারগুলো সত্যিই লোভনীয় আর সুস্বাদু। ব্র্যান্ডেড জিনিস সহ সবেতেই ছাড় চলেছে বেশ কিছুদিন। একেবারে জলের দামে চলে বেচাকেনা। কাজেই জিনিসপত্র কেনার জন্য লম্বা লাইন । এবছরও বড়দিনের কয়েকদিন আগে থেকেই ছন্দে ফিরছে এডিনবার্গ। এমনিতেই এখন দিন খুব ছোটো সকালে সূর্যের মুখ দেখলে খামখেয়ালি আবহওয়ায় বেশ মজা লাগে। স্কটিস উইস্কি,প্যানকেক থেকে লন্ডনের চিকেন টিক্কার স্পেশাল স্টলের ব্যবস্হা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। দুস্থদের জন্য চলে খাবার বিতরণ। ইউরোপের সবদেশই ব্যাস্ত ক্রিস্টমাস এর লম্বা ছুটিতে। এডিনবার্গের প্রবাসী ভারতীয়রাও অধিকাংশ ছুটি কাটাতে চলে যায় নিজের দেশে কিংবা অন্য দেশে। তবে গোটা ইউরোপ ২৫শে ডিসেম্বর কিন্তু ঘরবন্দি থাকে। ঘরেই চলে দেদার পার্টি। ক্রিস্টমাসের আনন্দ পেতে বিদেশিরাও পারি জমায় এই দেশটায়। ইতিহাসের পাতায় মোরা দেশটার বর্ণনার শেষ নেই। অভিযাত্য গরিমায় ভরপুর এডিনবার্গ শহরে বিদেশীরা ক্রিস্টমাসে এসেও দেখতে চলে যায় বরেণ্য লেখক আর্থার কোনান ডয়েল সৃষ্ট পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ও জনপ্রিয় গোয়েন্দা শার্লক হোমসের মূর্তি লেখকের বাড়ির কাছেই।দেখতে যান লেখক এর সংরক্ষিত বাড়িও। ঐতিহ্যের এই শহর এডিনবার্গেই ১৮৫৯ সালে জন্মেছিলেন স্যার আর্থর কোনান ডয়াল। ‘শার্লক হোমস’ গোয়েন্দা চরিত্রকে নিয়ে সারা পৃথিবীতে বহু চলচ্চিত্র ও সিরিজ তৈরি হয়েছে। এছাড়াও এই শহরে জন্মেছিলেন আর এক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেতা শন্ কনারি। ‘জেমস বন্ড’ চরিত্রে যিনি সারা পৃথিবীতে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। স্যার টমাস শন্ কনারি একজন স্কটিস অভিনেতা ও চলচ্চিত্র প্রযোজক। তিনি ইয়ান ফ্লেমিংয় সৃষ্ট জেমস বন্ডের নাম ভূমিকায় বন্ড চলচ্চিত্রগুলোতে অভিনয়ের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত লাভ করেছেন। তাঁর পোশাকি নামই হয়ে গিয়েছিল ‘জেমস বন্ড’। ১৯৬২ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তিনি মোট ৭টি বন্ড ছবিতে অভিনয় করেছেন।
জেমস বন্ড-শার্লকের শহর মেতেছে বড়দিনে
Follow Us :