এই শহর জানে তার প্রথম সবকিছু। গড়িয়াহাটে দাঁড়িয়ে ফুচকা খেতে ভালোবাসতেন তিনি। সেখান থেকেই উল্কার মতো উত্থান। সনৎ ঘোষের ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল তার রূপের ছটা । মডেল কোঅর্ডিনেটর আশিস ব্যানার্জীর জহুরির চোখ ঠিক খুঁজে বের করেছিল কোয়েনাকে। Gladrags এর মঞ্চে মুকুট জয়ের পর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে একদিন পাড়ি দিয়েছিলেন আরবসাগর তীরে মুম্বাইতে। তখন হাতে একের পর এক মডেলিং এসাইনমেন্ট, ছবির অফার। রাম গোপাল ভার্মার রোড, এক খিলাড়ি এক হাসিনা, আপনা সপ্না মানি মানি তাকে নিয়ে গেছিলো সাফল্যের চূড়োয়।কিন্তু আচমকাই ছন্দপতন। কসমেটিক সার্জারির মাধ্যমে চেয়েছিলেন নিজেকে আরও মোহময়ী করে তুলতে। তার সমসাময়িক বিপাশা, শিল্পার ক্ষেত্রে সার্জারি সফল হলো। কিন্তু কপাল খারাপ বাঙালি কোয়েনার। কসমেটিক সার্জেনের মুহূর্তের ভুলে ওলোট পালট হয়ে গেলো সবকিছু। এমনকি নিজের স্বাভাবিক সৌন্দর্যও ফিরে পেলেন না আর। হারিয়ে গেলেন ধীরে ধীরে রুপোলি পর্দার ফ্লাশবাল্বের ঝলকানির সামনে থেকে।৭ই জানুয়ারী নিজের জন্মদিনে আবারও পিছন ফিরে দেখা। একটি সর্বভারতীয় চ্যানেলকে সাক্ষাত্কার দিতে গিয়ে ঝরে পড়লো একরাশ অভিমান। যে বলিউড একসময় তাকে আগলে রাখতো, কোয়েনা না গেলে পার্টি জমতোই না, তারাই ধীরে ধীরে দূরত্ব বাড়াতে শুরু করলেন। একদিকে সার্জারির ক্ষত নিয়ে অবসাদে দিন কাটছে। হাতছাড়া হচ্ছে একের পর এক কাজ। অন্যদিকে কাছের বন্ধুরা দূরে সরে যাচ্ছে। তার ভাষায় ক্যামেরার সামনে কত ভালোবাসা, কত কাছের বলে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা। আদতে বলিউড সেদিন স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই বোঝে নি. পাশে থাকা তো দূরের কথা। একবার ফোন করে খোঁজও নেয়নি কোয়েনা মিত্রর কিভাবে দিন কাটছে। কতটা অর্থাভাবে রয়েছেন তিনি। এরাই আবার সিনেমার চিত্রনাট্যে জ্ঞানগর্ভ কথা বলে। উপদেশ দেবার চেষ্টা করে। সমাজ, সময় এবং মানুষকে সঠিক দিকে চালিত করার চেষ্টা করে। আসলে পুরোটাই মুখোশের খেলা।সত্যি কথাগুলোই সহজ ভাষায় বলে দিয়েছেন কোয়েনা। কুর্নিশ কোয়েনাকে। অন্তত একজন অভিনেত্রী প্রকাশ্যেই কসমেটিক সার্জারি এবং ইন্ডাস্ট্রির দ্বিচারিতা নিয়ে কথা বলার সাহস দেখিয়েছেন। ঠিক দেখিয়েছিলেন এই কোয়েনা মিত্রই মডেল কোঅর্ডিনেটর আশীষ ব্যানার্জীর মৃত্যুর পর. কলকাতা শহরে মডেলিংকে যিনি সাবলম্বী করেছিলেন, যার হাত ধরে কয়েকশো মডেল খ্যাতির আলোয় এসেছিলেন সেই আশীষের মৃত্যুর দিনে মাত্র দুজন মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন দেহটা শ্মশানে নিয়ে যাবার জন্য। খ্যাতির চরম সীমায় থেকেও সেদিন কিন্তু কলকাতার ফ্যাশন সার্কিটের বিরুদ্ধে একমাত্র মুখ খুলেছিলেন কোয়েনা মিত্র।
Html code here! Replace this with any non empty text and that's it.