Thursday, June 12, 2025
Homeফিচারমোহন ভগবতের 'পপুলেশন পলিসি' কি অভিন্ন দেওয়ানি বিধির খণ্ডিত রূপ ?

মোহন ভগবতের ‘পপুলেশন পলিসি’ কি অভিন্ন দেওয়ানি বিধির খণ্ডিত রূপ ?

Follow Us :

জয়ন্ত চৌধুরী : এবার লক্ষ্য জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মোড়কে ধর্মীয় বিভাজনকে আরও তীক্ষ্ণ আরও আগ্রাসী করে তোলা। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের ‘এক দেশ এক বিধান’ তত্বের আশু কর্মসূচি পপুলেশন পলিসি প্রণয়নে ভারত জুড়ে প্রচার তারই অঙ্গ। নরেন্দ্র মোদি প্রধান মন্ত্রীর তখতে বসার পর থেকে সঙ্ঘ নির্দিষ্ট রাম মন্দির, জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধরা বিলোপ, তিন তালাক রদ -সম্পন্ন। নাগরিকত্ব আইন প্রণয়ন করলেও তা কার্যকর করার প্রশ্নে ‘ধীরে চলো’ কৌশল নিতে বাধ্য হয়েছে বিজেপি সরকার। এই সরকারের প্রাণ ভোমরা সঙ্ঘ সে বিষয়ে যথেষ্ট বিরক্ত। এই প্রেক্ষাপটেই কেন্দ্রের উপর চাপ বাড়াতে জাতীয় পপুলেশন পলিসি প্রণয়নে তৎপর হতে কেন্দ্রকে বার্তা দিলো সঙ্ঘ। যা আদতে খণ্ডিত আকারে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চাপানোর ছক বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা।

বিজয়া দশমীর বাৎসরিক ভাষণে সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত অন্যান্য অনেক বিষয়ে মতামত দিলেও তাঁর ভাষণের প্রধান অভিমুখ ছিল দেশের মুসলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি। তবে নিছক জন্ম নিয়ন্ত্রণ এর লক্ষ্য নয়। কোনো রাখঢাক নেই। সুস্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছেন এই জনসখ্যা বৃদ্ধিতে সম্প্রদায়গত বৈষম্য দূর করতে তাঁরা বদ্ধ পরিকর। অর্থাৎ যার উৎসভূমি ‘অখন্ড’ ভারত নয় এমন ধর্মাবলম্বী (ইসলাম,খ্রিস্টান) জনসংখ্যা বৃদ্ধি রুখতে হবে।

আরও পড়ুন : অবশেষে সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা বাবুলের

রাতারাতি সঙ্ঘ এমন উদ্যোগ নিয়েছে এমনটা নয়। উল্লেখ্য, হিন্দু জনগোষ্ঠীর সংখ্যাবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে উত্তর-পূর্ব ভারতে সঙ্ঘের বিভিন্ন নামের শাখা সংগঠন নিয়মিত ‘পরাবর্তন’ (ধর্মান্তরিত খ্রিস্টানদের হিন্দু ধর্মে দিক্ষিতকরণ) কর্মসূচি পালন কৰে চলেছে। এই ধরনের সামাজিক প্রক্রিয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপে হিন্দুত্ব আগ্রাসনে সঙ্ঘের প্রস্তাবিত দাওয়াই পপুলেশন পলিসি। প্রসঙ্গত,গত ছয়-সাত বছর ধরে সঙ্ঘ অনুমোদিত অজস্র সংগঠন গ্রামে গঞ্জে সোশ্যাল মিডিয়ায়, ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে বৃহত্তর হিন্দু সমাজ কীভাবে পিছিয়ে পড়ছে এবং তার ‘ভয়ঙ্কর’ পরিণতি নিয়ে নানা কাল্পনিক তথ্যসহযোগে প্রচার করে চলেছে।উত্তর প্রদেশে আসন্ন বিধানসভা ভোটের মুখে যোগী আদিত্যনাথের সরকার জন্মনিয়ন্ত্রণ আইন আনতে তৎপর হয়ে উঠেছে। এসবই সঙ্ঘের জন্মলগ্ন থেকে তৈরি করা এজেন্ডা অনুসারী। এবার কোভিড আবহে দেশ যখন গভীর সংকটে তখন মোহন ভগবৎ-রা জনসংখ্যার ভারসাম্য রক্ষায় আসরে নামলেন।

কেন্দ্রে ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় বসার পর থেকে সঙ্ঘের এজেন্ডা যা প্রায় নয় দশক আগে তৈরি হয়েছিল তা পূরণ করে চলেছে। ১৯২৫ সালে নাগপুরে কেশব বলীরাম হেডগেওয়ার প্রতিষ্ঠিত আর এস এস, যার একমাত্র লক্ষ্য ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা। সেই উদ্দেশ্যেই এক দেশ এক বিধান এর নামে একদলীয় শাসন কায়েমের স্বপ্ন হেডগেওয়ার,গোয়ালকারদের। বহুত্ববাদ তার ঘোরতর শত্রু। ভারতীয় গণতন্ত্রের বহুদলীয় ব্যবস্থা তার পথের কাঁটা। দেশের সংবিধানের বিয়াল্লিশতম সংশোধনীর ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটিকে উপরে ফেলার লক্ষ্যে অটল প্রায় শতবর্ষের দোরগোড়ায় পৌঁছানো আর এস এস। সেই লক্ষ্যপুরণের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে সঙ্ঘের হিন্দু রাষ্ট্র নির্মাণের স্বপ্ন। অতএব হিন্দুত্বের রাষ্ট্রীয় আধিপত্য তার একমাত্র মোক্ষ। সেই পথে প্রধান অন্তরায় ভারতের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ভুক্ত জনসংখ্যা। তবে সংবিধানে সংখ্যালঘু বলতে সমস্ত অহিন্দু সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও সঙ্ঘের নিশানায় কেবলমাত্র মুসলমান ও উত্তর পূর্ব রাজ্যগুলির খ্রিস্টানরা। সঙ্ঘের অনুশাসন অনুসারে পার্শি, জৈন, বৌদ্ধ, শিখ,বৈষ্ণব সবই হিন্দু। কেননা এগুলির উৎসস্থল সঙ্ঘ বর্ণিত অখন্ড ভারতে (পাকিস্তান,বাংলাদেশ,আফগানিস্তানসহ )। সঙ্ঘের মতে, সব মিলিয়েই হিন্দু কিন্তু কোনো ধর্ম নয়,হিন্দু একটা জাতি,এক বিশেষ জীবনধারা বা বিচারধারা। উল্লেখ্য, বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে (সি এ এ)বিদেশে অর্থাৎ মুসলমান অধ্যুষিত আফগানিস্তান,বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে চলে আসা জৈন ,বৌদ্ধ ও শিখদের পাশাপাশি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নাগরিক স্বীকৃতির সংস্থান রয়েছে।

আরও পড়ুন : উত্তরাখণ্ডে ভূমিধসে আটকে পড়ল গাড়ি, উদ্ধারকাজে বিআরও

সম্প্রদায়গত বৈষম্য বলতে মোহন ভগবৎ ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন, তাও তিনি খোলাখুলি বলে দিয়েছেন নাগপুরে হেডগেওয়ার ভবনের বাৎসরিক বক্তৃতায়। দেশে মুসলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির কথা বলে বস্তুত গেলগেল রব তুলেছেন আর এস এস প্রধান। তবে এটা তাঁর কোনো তাৎক্ষণিক বক্তৃতা বা মুখ ফসকে বলে ফেলা নয়। আজ থেকে সাত বছর আগে তামিলনাড়ুর কোয়ামবাতুরে (২০১৫ ) সঙ্ঘের সর্ব ভারতীয় সভায় ভারতের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় নীতি প্রণয়নের পক্ষে প্রস্তাব পাশ হয়। সেই সম্মেলনের সিংহভাগ সময় সঙ্ঘের শীর্ষ স্থানীয় প্রতিনিধিরা এই প্রসঙ্গে আলোচনায় ব্যয় করেছিলেন। সেই প্রস্তাবে ১৯৫২ সালের প্রথম জনসুমারীরপরিসংখ্যানের সঙ্গে সর্বশেষ ২০১১ সালের তুলনা করা হয়। শিখ,পার্শি,বৌদ্ধসহ সামগ্রিক ‘হিন্দু জনসংখ্যার’ হার ৮৮শতাংশ থেকে ৬০ বছরের ব্যবধানে ৮৩ শতাংশে নেমে গিয়েছে। একই সময়ে মুসলমান জনসংখ্যা ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ হয়েছে। উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে কয়েক দশকের ব্যবধানে ধর্মান্তকরনের জেরে খ্রিস্টান সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। কোয়ামবাতুরের সেই প্রস্তাবের রেশ টেনেই ভগবৎ পপুলেশন পলিসি তৈরির বার্তা দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি সরকারকে। যার মোদ্দা কথা হলো জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতি সব নাগরিকের জন্য অভিন্ন হোক। রুখতে হবে মুসলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি। ঘুরিয়ে বললে , দেশের আর্থিক দৈন্য দশা, ক্রমবর্ধমান আর্থিক ও সামাজিক বৈষম্য,কর্মসংকোচন, খাদ্যভাবের মতো জনজীবনের সমস্ত বিপন্নতা সরসঙ্ঘ চালকের মার্গদশনমূলক দীর্ঘ ভাষণে ঠাঁই পায়নি। ভারতীয় সমাজে মুসলমান জনসংখ্যাই যেন একমাত্র সমস্যা। যার আশু সমাধানে পপুলেশন পলিসি খুব জরুরি। আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনেই এই বিষয়ে বিল সংসদে আনতে মোদি সরকারকে একপ্রকার বার্তাই দেওয়া হয়েছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের দাবি। হ্যাঁ, পেট্রো পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ বা কোভিড কালে রেকর্ড বেকারত্ব নয়, জনসংখ্যার ভারসাম্যের গালভরা শব্দের আড়ালে সামাজিক বিভাজন তীক্ষ্ণতর করাই লক্ষ্য সঙ্ঘের। যা পক্ষান্তরে দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়নের ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে। সঙ্ঘের শতবর্ষ আসন্ন। হাতে বছর চারেক সময়।’গুরুজীর’ স্বপ্ন পূরণে তাই দেশে হিন্দু মৌলবাদ প্রতিষ্ঠায় উদগ্রীব ভক্তকূল।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Ariyan Khan | বাঁকড়া কাণ্ডে গ্রে/ফতা/র আরিয়ান খান, গ্রে/ফতা/রের পর কী কী বলে দিলেন?
01:09:55
Video thumbnail
Jagannath Temple | জগন্নাথের আর্শীবাদ কার দিকে? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
01:55:58
Video thumbnail
BJP | Vidhan Sabha | বিধানসভায় তুলকালাম, বিজেপি বিধায়কদের তুমুল বি/ক্ষো/ভ, দেখুন কী অবস্থা
03:10:50
Video thumbnail
Jagannath Temple | ৬২৯ বছরে মাহেশের স্নানযাত্রা, ভক্তদের বিরাট ঢল, দেখুন মাহেশ থেকে সরাসরি
01:10:31
Video thumbnail
Donald Trump | লস এঞ্জেলেসে কা/র্ফু জারি, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা,উ/ত্তাল আমেরিকা,কী করবেন ট্রাম্প?
02:15:10
Video thumbnail
Donald Trump | ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে বিক্ষো/ভ, দিশাহারা ট্রাম্প! এ কোন আমেরিকা? দেখুন এই ভিডিও
01:58:26
Video thumbnail
Volodymyr Zelenskyy | হার আসন্ন, যে কোনও মুহূর্তে দেশ ছাড়বেন জেলনস্কি, দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
02:19:05
Video thumbnail
S. Jaishankar | 'প্রয়োজনে পাকিস্তানের ভিতর ঢুকে মা/রব ' বি/স্ফো/রক জয়শঙ্কর
38:10
Video thumbnail
Priyanka Gandhi | প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর বিরুদ্ধে ইলেকশন পিটিশন কেরালা হাইকোর্টে, কী হবে এবার?
46:36
Video thumbnail
Digha Jagannath Temple | দিঘায় জগন্নাথের স্নান যাত্রার মুহূর্ত না দেখলে মিস, দেখুন Live
02:34:16