আর সাকুল্যে এক মাস। ২০২২ সালে কাতারে শুরু হতে চলেছে গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ, বিশ্বকাপ ফুটবল। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। কাতার বিশ্বকাপের জন্য স্টেডিয়াম ও অন্যান্য জরুরি নির্মাণের কাজে গত বছর দশেক ধরে যুক্ত রয়েছেন হাজার হাজার শ্রমিক। যাদের অধিকাংশের বাসস্থান ভারত, পাকিস্তান বা বাংলাদেশ।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার প্রায় ১০ বছর আগে থেকেই বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছিল। এরপর শুরু হয় প্রস্তুতি। সেই প্রস্তুতির মধ্যেই ঘটে গিয়েছে অসংখ্য অমানবিক বিপর্যয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বিশ্বকাপের জন্য স্টেডিয়াম-সহ বিভিন্ন যে নির্মাণের কাজ চলছে, তাতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্তত ৬,৫০০ শ্রমিকের প্রাণহানি হয়েছে। ২০১০-২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে কাতারে গড়ে ভারত, বাংলাদেশ পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা থেকে আসা ১২ জন শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি শ্রমিক মারা গিয়েছেন ভারতের। অন্তত ২,৭১১ জন। ১০১৮ জন বাংলাদেশের শ্রমিকদের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও নেপালের ১,৬১৪, পাকিস্তানের ৮২৪ এবং শ্রীলঙ্কার ৫৫৭ জন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন নির্মাণ কাজ চলাকালীন।
আরও পড়ুন: ৩১ অক্টোবরের আগেই প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা, ব্রিটেনের মসনদে কি ভারতীয় বংশোদ্ভূত?
কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজন করতে যাওয়া একটি দেশের জন্য নির্মাণকাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সে সব তো দূরের কথা, ন্যূনতম ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাপারে কাতারের ফুটবল আয়োজক কর্তৃপক্ষের কোনও আগ্রহ ছিল না। অবশ্য ভারত নিজের দেশের নিহত শ্রমিকদের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে ঠিক এজন্যই দেশের নিহত এক শ্রমিক মধু বোল্লাপাল্লির মৃত্যুর উল্লেখ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার নামে টানাপোড়েনের শেষে বোল্লাপাল্লির মৃত্যুর জন্য তাঁর পরিবারকে মাত্র দেড় লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছে কাতারের কর্তৃপক্ষ। ঝকঝকে আয়োজন আর নানা তাক লাগিয়ে দেওয়া অনুষ্ঠানের আবেশে হয়তো চাপা পড়ে যাবে এই সব মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা। কিন্তু ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে থাকবে প্রাণহীন ওই উপাখ্যানের ইতিকথা।