ইস্তানবুল: একটি ধ্বংসস্তূপের উপর বসে রয়েছে এক প্রবীণ। ভাঙা বাড়ি চাপা পড়ে রয়েছে তার কোনও প্রিয় জনের দেহ। বাইরে বেরিয়ে আছ শুধু হাতের কয়েকটি আঙুল। তিনি ওই আঙুলটি চেপে ধরে বাইরের দিকে নীরব তাকিয়ে রয়েছেন। এইরকম বহু মর্মান্তিক দৃশ্যের সাক্ষী এখন তুরস্কের মানুষ। সেই ভূমিকম্প বিধ্বস্ত তুরস্কে আশার আলো দেখাচ্ছে ভারতীয় সেনা। সেখানে ভারতীয় সেনা খুলে ফেলেছে আস্ত একটি অস্থায়ী হাসপাতাল। সেই হাসপাতালের অন্যতম তত্ত্বাবধানে থাকা মেডিক্যাল অফিসার মেজর ড. বীণা তিওয়ারি (Maj Dr Beena Tiwari)। তিনিই সেখানে যেন ‘লেডি উইথ দ্য ল্যাম্পের ভূমিকায়’। শুশ্রুষা করে সেখানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। হাতায়ে এক বৃদ্ধা আবেগে তাঁকে জড়িয়ে ধরেছেন সেই ছবি ভাইরাল হয়েছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার হওয়া ছয় বছরের শিশুকন্যা নাসরিনের (Nasreen) সঙ্গেও তাঁর ছবি দেখা গিয়েছে। নাসরিন নামের ওই শিশুকন্যাকে ভারতীয় সেনার ৬০ প্যারাফিল্ড (Army’s 60 Parafield ) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ওই হাসপাতালে এখন ১৪ জন ডাক্তার, ৮৬ জন প্যারামেডিক্যাল স্টাফ। একটি বড় অংশের জনতাকে দেখা গিয়েছে সেখানে শুশ্রুষার জন্য ভিড় করেছেন।হাতায়ে ভারতীয় সেনা ৩০ বেডের ওই ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করেছে। অপারেশেন দোস্ত নামে ওই হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে শুশ্রুষা চলছে। মেজর ড. বীণা তিওয়ারি দেরাদুনের (Dehradun) বাসিন্দা। দিল্লির আর্মি কলেজ অফ মেডিক্যাল সায়েন্স থেকে তিনি স্নাতক। তিনি পরিবারে তৃতীয় প্রজন্মের আর্মি অফিসার। এর আগে তিনি অসমে পোস্টিং ছিলেন। তাঁর স্বামীও একজন মেডিক্যাল অফিসার (medical officer)।
আরও পড়ুন: Valentines Day and AI: ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে তোমার হৃদয় দোলাবে একটি আমি, প্রেমের ঠিকানা এবার এআই
তুর্কির হাতায়ে (Turkey’s Hatay province) এখন মাইনাস ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চারিদিকে ধ্বংসস্তূপ (homes damaged or destroyed)। চরম ঠাণ্ডা, খাবারের অভাব, হতাশায় ভুগছেন সেখানকার মানুষ। তাঁবুতে সবাইকে ঠাঁই দেওয়ার মতো জায়গা নেই। সেখানে প্রবল ঠাণ্ডায় গৃহহীন বহু। অনেককে সুপারমার্কেট, পার্ক, রাস্তার ধারে ঠাঁই কোনও মতে ঠাঁই নিয়েছে।
ভারত থেকে বৃহস্পতিবারের মধ্যেই ছয়টি বিমান তুরস্কে পৌঁছেছে। উদ্ধারকারী দল, ওষুধ, ডগ স্কোয়াড রয়েছে তাতে। সোমবার ৭.৮ ম্যাগনিটিউড ভূমিকম্পে ১৭ হাজার ৬০০ জনের মৃত্যুর খবর এখনও পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে। এখনও অনেকে নিখোঁজ।
তবে এখনও ক্যাম্পে খোলা আকাশের নীচে প্রবল ঠাণ্ডাতেই রাত কাটাচ্ছেন অনেকে। এয়ারপোর্টের রানওয়েও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে হাতায়ের মতো বেশ কিছু জায়গায় সড়ক পথেই ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে যেতে হচ্ছে। তবে আশার কথা এখনও ধ্বংসস্তূপের ভিতর থেকে মিলছে প্রাণের স্পন্দন। বীণার মতো সেনারা শুশ্রুষা করে তাঁদের প্রাণের স্রোতে ফেরানোর ব্যবস্থা করছেন।