কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: বসতির নাম ‘এক কিডনি গ্রাম’। পশ্চিম আফগানিস্তানের হেরাটের কাছের ওই গ্রামে কিডনি বিক্রি করে দিনযাপন করেন মানুষরা। সেখানকার চারিদিকে শুধুই অভাব আর অভাব। তালিবানরা আফগানিস্তান দখলের পর ক্রমেই ভেঙে পড়েছে সে দেশের অর্থনীতি। এতটাই দুর্বিষহ অবস্থা, খাওয়ার জোগাড় করতেই হিমসিম খাচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দারা। অভাব আর ঋণে জর্জরিত আফগানরা পরিবার চালাতে নিজের কিডনি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
হেরাটের ওই গ্রামে থাকেন নুরউদ্দিন। বয়স ৩২। তাঁর বাড়ির সামনের এক গাছ থেকে ছেঁড়াফাটা কাপড় ঝুলছে। জানালায় পাল্লার বদলে প্লাস্টিকের চাদর। একসময় হেরাটের এক কারখানায় কাজ করতেন তিনি। যা বেতন পেতেন, তাতে কোনওমতে সংসার চলে যেত। আফগানিস্তান তালিবানদের দখলে আসার পর বেতন এক ধাক্কায় অনেকটাই কমে যায়। ভালো কাজ পাওয়ার আশায় ওই কারখানা ছেড়ে দেন নুরউদ্দিন। তারপর আর নতুন কাজ পাওয়া হয়ে ওঠেনি তাঁর। সংসার চালানোই কষ্টকর হয়ে ওঠে নুরউদ্দিনের পক্ষে। পেট চালানোর দায়ে আড়াই হাজার ডলারে নিজের একটি কিডনি বিক্রি করেন নুরউদ্দিন। এখন আর কাজের আশা করেন না তিনি। কারণ, কিডনি বিক্রি করায় কাজ করার ক্ষমতা হারিয়েছেন। বারো বছরের ছেলে জুতো পালিশ করে যা পায়, তাতেই টেনেটুনে সংসার চলছে নুরউদ্দিনের।
হেরাটের ওই কিডনি গ্রামে তিন সন্তান, স্বামীকে নিয়ে থাকেন আজিতা। অভাবের তাড়নায় দুই সন্তানই ভুগছে চরম অপুষ্টিতে। ছেলেদের দিকে তাকাতেও কষ্ট হয় অভাবী মায়ের। খাবার জোগাড় করতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে আজিতার। তার উপর ঋণের বোঝা। অবশেষে আড়াই হাজার ডলারে নিজের কিডনি বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। তাতেও পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি। সংসার চালাতে এবার আজিতার স্বামীও একটি কিডনি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: Naveen Shekharappa Janagoudar: খাবার কিনতে বেরনোই কাল হল শেখরাপ্পার!
আরও করুণ অবস্থা তিন সন্তানের জননী আজিজার। দেড় হাজার ডলারে নিজের কিডনি বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। তবুও সংসারের হাল ফেরেনি। এবার নিজের সন্তানকেই বেচে দেবেন আজিজা। এমনটাই তিনি জানান সংবাদ সংস্থাকে।
সারা পৃথিবীতে কিডনি দেওয়ার প্রক্রিয়া যথেষ্ট জটিল। সবচেয়ে আগে প্রয়োজন কিডনি দানের সম্মতি। সাধারণত রোগীর কোনও নিকট আত্মীয়ই কিডনি দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পায়। তাও নানান নিয়ম কানুনের বেড়াজাল ডিঙিয়ে কিডনি দিতে হয়। কিন্তু বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে সেসবের কোনও বালাই নেই। মাজার-ই-শরিফের এক হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক মহম্মদ ওয়াকিল মতিন বলেন, কিডনি দেওয়ার ক্ষেত্রে দাতার লিখিত অনুমতি অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু আফগানিস্তানের যা অবস্থা, কে এসব দেখবে? আমরা চিকিৎসকরা কে দাতা, কে প্রাপক, তা নিয়ে অত মাথা ঘামাই না। আর এটা দেখা আমাদের কাজও নয়।
অন্য এক হাসপাতালের কিডনি রোগের প্রধান জানান, দেশে কিডনি রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসার ফলোআপেরও কোনও ব্যবস্থা নেই। এই প্রসঙ্গে তালিবান প্রশাসকরা কোনও মন্তব্যে নারাজ। তবে এক প্রবীণ চিকিৎসক জানান, এই বিষয়গুলি দেখার জন্য শীঘ্রই একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি হচ্ছে।