মেদিনীপুর: বেনাচাপড়া কঙ্কালকাণ্ড নিয়ে ফের সিপিএমের (CPM) জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষের নামে এফআইআর (FIR) দায়ের। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সল্টলেক (Saltlake) ময়ুখভবনে এমএলএ-এমপি কোর্টে এই কাণ্ডের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হওয়ার আগে, অভিযোগকারীকে হুমকি দেন তিনি। অভিযোগ গ্রহণ করার পরেই, এবার অভিযোগকারীকে নিরাপত্তারক্ষী দিল পুলিশ (Police)।
১০ মার্চ সল্টলেক ময়ূখভবনে এমএলএ-এমপি কোর্টে বেনাচাপড়া কঙ্কাল কান্ড নিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হওয়ার কথা। সেই প্রক্রিয়া শুরুর আগেই, এই কাণ্ডের প্রধান অভিযোগকারী ও সাক্ষী শ্যামল আচার্যকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল সুশান্ত ঘোষের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: Nisith Pramanik: নিশীথের গাড়িতে হামলায় চাপানউতোর চলছেই, বিজেপির থানা ঘেরাও নিয়ে সতর্ক পুলিশ
আনন্দপুর থানায় লিখিত অভিযোগে শ্যামল আচার্য উল্লেখ করে বলেন, সাক্ষী দিতে যাওয়ার নোটিস পাওয়ার পরেই বেশ কয়েকজন যুবক মুখে কাপড় বেঁধে এসে হুমকি দেয়। বলে এই মামলায় সাক্ষ্য দেওয়া থেকে সরে দাঁড়াতে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, সাক্ষ্য যদি দেনও, তাহলে যেন মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়। না হলে সপরিবারে খুন করে পুঁতে ফেলা হবে। পাশপাশি হুমকি ফোনও করা হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনার পর তৃণমূলের ওই ব্লকের সহ সভাপতি শ্যামল আচার্যকে নিরাপত্তারক্ষী দিয়েছে পুলিশ।
ঘটনায় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিপিআইএমের জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ।তিনি বলেন, আমাদের পাগল কুকুরে কামড়ায়নি কিংবা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলিনি। ভিত্তিহীন অভিযোগ নস্যাৎ হতে চলেছে জানতে পেরে এই সমস্ত মিথ্যা অভিযোগ করেছে তারা। কেশপুর বা পশ্চিম মেদিনীপুরে সিপিআইএমের তেমন জোর নেই যে ওদের হুমকি দেবে।
তৃণমূলের জেলা কোঅর্ডিনেটর অজিত মাইতি বলেন, সিপিএম, সিপিএমের জায়গাতেই রয়েছে। সুশান্ত ঘোষ এই কাণ্ডের প্রধান অভিযোগকারীকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। ওর বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা হয়েছে পুলিশে। আমরা ছেড়ে কথা বলব না।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর জেলার আনন্দপুর থানার অন্তর্গত বেনাচাপড়ায় নয় জন তৃণমূল কর্মী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটে। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে, স্থানীয় তৃণমূল কর্মী শ্যামল আচার্য তাঁর বাবা নিখোঁজ অজয় আচার্য সহ নয় জনের নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। এরপরে ২০১১ সালের ৫ জুন সুশান্ত ঘোষের বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে বেনাচাপড়া এলাকায় একটি পুকুরপাড় খুঁড়ে অনেকগুলি নরকঙ্কাল উদ্ধার হয়। ঘটনা তদন্তে নামে রাজ্য পুলিশ ও সিআইডি।
সেই কান্ডেই নাম জড়ায় সুশান্ত ঘোষের। ২০১১ সালের আগস্ট মাসে আদালতের নির্দেশে সুশান্ত ঘোষকে গ্রেফতার করা হয়। এই কাণ্ডে সুশান্ত ঘোষ সহ মোট ৫৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। মামলা চলাকালীন বিভিন্ন সময়ের মৃত্যু হয় ১০ জনের। বাকিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় পুলিশ ও সিআইডি। সাত মাস জেলে থাকার পর, শর্ত সাপেক্ষে সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পান সুশান্ত ঘোষ। তবে, মামলা চলছিল। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ফের স্বাভাবিক ভাবে রাজনীতি শুরু করেছিলেন সুশান্ত ঘোষ। বর্তমানে দীপক সরকারের পরে সিপিআইএমের জেলা সম্পাদক পদে বসেন সুশান্ত ঘোষ।