কলকাতা: নন্দিনী (Nandini)। সোশ্যাল মিডিয়ায় বোধহয় এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম। আর হবেই না বা কেন, ডালহাউসি (Dalhousie) চত্বরে নন্দিনীর ভাতের হোটেল এখন খাদ্যপ্রীয় কলকাতাবাসীর অন্যতম লাঞ্চ ডেস্টিনেশন হলেও, তাঁর লড়াইয়ের কাহিনিটা কিন্তু কোনও ওয়েব সিরিজ কিংবা সিনেমার গল্পের চেয়ে কম নয়। ভিনরাজ্যের চাকরি ছেড়ে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে বাবার একসময়কার ভাড়া নেওয়া হোটেলকে জনপ্রিয় করে তোলা। নন্দিনী ওরফে মমতা গঙ্গোপাধ্যায় (Mamata Ganguly), কারও কাছে আবার ডালহাউসির অফিস পাড়র পাইস হোটেল দিদি, যাই বলুন না কেন, গুজরাটের বেসরকারি সংস্থার চাকরি ছেড়ে কলকাতায় চলে আসা বাড়ির মেজো মেয়ের জীবন অসীম সংগ্রামে ভরা। সেই জীবন সংগ্রামকে কুর্নিশ জানিয়ে মানবাধিকার কমিশনের (Human Right Commission) পক্ষ থেকে দ্য হিউম্যানিটারিয়ান সার্টিফিকেট অ্যাওয়ার্ড (The Humanitarian Certificate Award) তুলে দেওয়া হয়েছে কলকাতার অন্যতম ব্যস্ততম অঞ্চল ও ডালহাউসির অফিস পাড়ার জনপ্রিয় নাম পাইস হোটের নন্দিনীর হাতে। তাঁর হাতে এই সম্মান গত বুধবার (১২ এপ্রিল) তুলে দিয়েছেন রাজ্যের মানবাধিকার কমিশনের সাধারণ সম্পাদিকা ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী পায়েল সরকার (State General Secretary of Human Right Commission and Popular Actress Payel Sarkar)। অল ইন্ডিয়া হিউম্যান রাইটসের পক্ষ থেকে এই সম্মান পেয়ে খুব খুশি নন্দিনী ওরফে মমতা এবং তাঁর বাব-মা।
নন্দিনী নামটা এখন প্রায় ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছে। সৌজন্যে সোশ্যাল মিডিয়া (Social Media)। ফেসবুকের ফিডে উঠে আসা ১০টা পোস্টের মধ্যে ৪টি পোস্ট নন্দিনী এবং তাঁর পাইস হোটেল নিয়েই। ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা সেরে গুজরাটে বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন মমতা। দিদি আর বোন দু’জনেই চাকরি করেন। করোনার (Corona Pandemic) সময় বাবার ব্যবসা জোর ধাক্কা খায়। শুনে আর থাকতে পারেননি। চাকরি ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন বাবাকে সহযোগিতা করতে, আর তারপর নিজের কাঁধেই যাবতীয় দায়িত্ব তুলে নেন। কারণ একটাই তিনি যখন অসুস্থ হয়ে প্রায় প্যারালাইজড হয়ে পড়েছিলেন, সেই সময় বাবা-মা মেয়েকে সারিয়ে তুলেছিলেন শুশ্রূষা করে। নন্দিনীর বাবা রুটারি দোকানে হেল্পারি করতেন। সংসারে টাকান যোগান দিতে, সেই সময় মমতার বাবা এই পাইস হোটেলের জায়গা ভাড়া নেন। সেটাই এখন হয়ে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া ও খেতে আসা লোকজনের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
সকাল হলেই বাবা শিয়ালদহ থেকে বাজার করে আনেন, তারপর মা সব্জি কাটা আর মশলা বাটার দিকটা সামলান। এরপর, রান্না করা আর লোকজনকে খাবার পরিবেশন করা, সবটাই একাহাতে সামলান নন্দিনী। একসময় প্রতিদিন ৩০ প্লেট খাবার রেঁধে লোকসান হতো, কিন্তু হঠাৎ করেই ভাগ্যের চাকা ফিরে যায়। একদিন তাঁর দোকানে ডিম-ভাত খেয়ে এসেছিলেন একটি ছেলে। আবদার ছিল, খাবো এবং ভিডিয়ো (Video) করব। মুখে হাসি নিয়ে তাতে রাজিও হয়ে গিয়েছিলেন। তারপরই ভাগ্য চাকা ঘুরে যায়। ওই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল (Viral) হয়ে ওঠে। জনপ্রিয় হয়ে ওঠে পাইস হোটেল
নন্দিনীর ভাতের হোটেল এবং তাঁর অসীম লড়াই সম্পর্কে কী বলছেন রাজ্যের মানবাধিকার কমিশনের সাধারণ সম্পাদিকা এবং অভিনেত্রী পায়েল? মমতা এবং তাঁর বাবা-মায়ের হাতে সম্মান তুলে দিয়ে মানবাধিকার কমিশনর পক্ষ থেকে অভিনেত্রী বলেছেন, “এই সম্মানটি নন্দিনীর পরিবারের প্রাপ্য। কারণ, নন্দিনীর বাবা-মা বৃদ্ধ বয়সেও মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোদ, ঝড়, বৃষ্টিকে তোয়াক্কা না করে মানুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন।”