কলকাতা: দোলের দিন গঙ্গাবক্ষে তৃণমূল নেতা মদন মিত্রের সঙ্গে নৌকাবিলাসে গিয়ে সেলফি তুলেছিলেন অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, পায়েল সরকার এবং তনুশ্রী চক্রবর্তী৷ ততদিনে প্রার্থী হিসেবে তাঁদের নাম ঘোষণা করে দিয়েছিল বিজেপি৷ ওই সময় দলের প্রবীণ নেতা তথাগত রায় তিন প্রার্থীর রাজনৈতিক বিচারবুদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন৷ ত্রয়ীর নৌকাবিলাস যাত্রাকে কটাক্ষ করে তাঁদের ‘নগরীর নটী’ বলেও বিঁধেছিলেন৷ সেই ‘নটীর’ একজন আজ বৃহস্পতিবার দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন৷ তার পর তথাগত রায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘ঘাড় থেকে ভূত নামল৷’
আরও পড়ুন: বিজেপির সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘোষণা অভিনেত্রী শ্রাবন্তীর
এদিন বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের কথা ঘোষণা করেন টলিউড অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়৷ লেখেন, বিজেপিতে কাজের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে৷ যা শুনে তথাগত রায় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ও দলের কোন কাজে লাগত? বিজেপি ভাগ্যবান৷ ঘাড় থেকে ভূত নামল৷’ তার পরই তিনি স্বমূর্তি ধারণ করেন টুইটারে৷ একুশের ভোটে বিপর্যয়ের জন্য মাইক্রো ব্লগিং সাইটে নিয়ম করে দলের কয়েকজন নেতার উপর রাগ-ক্ষোভ বর্ষণ করেই চলেছেন৷
শ্রাবন্তীর মত অভিনেত্রীদের যোগদান করিয়ে কৈলাস বিজয়বর্গীয়রা দলকে ডুবিয়েছেন বলে আরও একবার সোচ্চার হলেন ঠোঁটকাটা তথাগত৷ লেখেন, ‘আমাদের এক পুরোনো কর্মী দিনদুয়েক আগে লিখেছিলেন, উনি জয়নগরে সভা পরিচালনা করছিলেন। কৈলাশ বিজয়বর্গীয় শ্রাবন্তী সম্বন্ধে বলছিলেন, ওর মুখ দিয়ে প্রায় লালা ঝরছিল। এই সব নেতার হাতে বিজেপির প্রার্থী চয়নের ভার ছিল। এর পরে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির যে এই অবস্থা হবে এ আর বিচিত্র কি ? ’ তথাগতর টুইটের পর আবার দ্বিধাভক্ত বিজেপি৷ কেউ যেমন তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন৷ কেউ আবার টুইটের শব্দচয়ন ও ভাষার বিরোধিতা করেছেন৷ তাঁদের প্রশ্ন, এবার কী তথাগতর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেবে না দল?
আমাদের এক পুরোনো কর্মী দিনদুয়েক আগে লিখেছিলেন, উনি জয়নগরে সভা পরিচালনা করছিলেন। কৈলাশ বিজয়বর্গীয় শ্রাবন্তী সম্বন্ধে বলছিলেন, ওর মুখ দিয়ে প্রায় লালা ঝরছিল। এই সব নেতার হাতে বিজেপির প্রার্থী চয়নের ভার ছিল। এর পরে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির যে এই অবস্থা হবে এ আর বিচিত্র কি ? https://t.co/ZTTS83HULI
— Tathagata Roy (@tathagata2) November 11, 2021
শ্রাবন্তীর সঙ্গে একুশের ভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পল৷ সেই তিনি বলেন, ‘শ্রাবন্তীর সঙ্গে দলের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল৷ তখন উনি এই সব অভিমানের কথা জানাতেই পারতেন৷ সেটা না করে সোশাল মিডিয়ায় দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করলেন৷’ রাজনীতিতে ‘জুনিয়র’ শ্রাবন্তী কী করে বিজেপিতে থেকে কাজ করতে না পারার অভিযোগ তুললেন তাতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অগ্নিমিত্রা৷ তাঁর কথায়, ভোটের সময় অনেক বিজেপি নেতা-কর্মী তাঁর হয়ে পরিশ্রম করেছিলেন৷ ভোটের পর অনেকেই ঘর ছাড়া হন৷ তাঁদের পাশে থাকার জন্য তিনি কি কিছু ভেবেছিলেন? প্রশ্ন তোলেন অগ্নিমিত্রা৷
শ্রাবন্তীর দল ছাড়ার কোনও প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়ে দেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার৷ একই প্রতিক্রিয়া দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের৷ তাঁর বক্তব্য, ভোটের পর উনাকে আমি দলের কোনও অনুষ্ঠানে দেখিনি৷ আমরা চাই না কেউ দল ছাড়ুক৷ তবে এভাবে টুইট করে দল ছাড়ায়, তাতে বিজেপির গ্রহণযোগ্যতা বা ভাবমূর্তি কোনওটাই নষ্ট হবে না৷
আরও পড়ুন: বাণিজ্য সম্মেলনে কত কর্মসংস্থান হয়েছে জানতে চাইলেন রাজ্যপাল
শ্রাবন্তীর বিজেপি ছাড়ার খবরকে ‘শুভ লক্ষণ’ বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের তরুণ নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য৷ লেখেন, ‘হুজুগে আমরা অনেকেই ভুল করে ফেলি৷ ঠাকুমা বলতেন, কত তাড়াতাড়ি সেটাকে শুধরে নিচ্ছি সেটাই আসল বুদ্ধির পরিচায়ক৷ একটি বাঙালি বিরোধী দল থেকে আরেকজন বাঙালি বেরিয়ে এলেন৷ এটা শুভ লক্ষণ৷’ রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, বিজেপিতে বিয়োগ মেলা চলছে৷