কলকাতা: ফের আদালতে বিচারপতির ভর্ৎসনার মুখে পুলিস। অশ্লীল ভিডিয়ো (Intimate Video Viral) ভাইরালে অভিযুক্ত এক ব্যক্তির জামিন সংক্রান্ত মামলার শুনানির সময় কলকাটা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির তিরষ্কারের মুখে পড়লেন তদন্তকারী অফিসার। বিচারপতির প্রশ্ন, ‘মানুষ কেন আপনাদের কাছে যাবে? আপনাদের কাছে গেলে মানুষ সুরাহা পাচ্ছে না! আপনারা হয় মানুষকে অবজ্ঞা করছেন অথবা তদন্ত করলেও মোটিভেটেড তদন্ত করছেন।’
বাঁকুড়া থানা এলাকার বাসিন্দা অমিতা পালের সঙ্গে সুজিত করের (পরিবর্তিত নাম) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীকালে সেই সম্পর্ক আরও গভীর হয়। অমিতা ও সুজিতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ভিডিয়ো গোপনে রেকর্ডিং হয়। পরবর্তীকালে সেই ভিডিও সুজিতের বন্ধুদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আপলোড করা হয় বলে অভিযোগ।
বিষয়টি শুধু হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ নয়, সোশাল মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে। অমিতা বাঁকুড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পু্লিস তদন্তে নেমে সুজিতের বন্ধুদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সকল সদস্যকে গ্রেফতার করে। সুজিতের গ্রেফতার হওয়া বন্ধুদের মধ্যে সৌমেন ঘোষ নামে একজন কলকাতা হাইকোর্টে জামিনের আবেদন জানান।
সৌমেনের আইনজীবীর দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে সৌমেন কোনওভাবেই যুক্ত নয়। ফরেনসিক রিপোর্ট অনুযায়ী সৌমেনের মোবাইল থেকে কোনও তথ্যই পাওয়া যায়নি। পাল্টা সরকারি আইনজীবীর দাবি, সৌমেনের আইনজীবী আদালতের কাছে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন। ফরেনসিক রিপোর্টে বলা আছে, সৌমেন ও তাঁর বন্ধুরা মোবাইল থেকে ওই ভিডিয়োটি ডিলিট করে দিয়েছে। বিষয়টি ফরেনসিক রিপোর্টে উল্লেখ করা আছে।
আরও পড়ুন: Torn Jeans: ছেঁড়া জিনস পরা চলবে না, কলকাতার কলেজে পোশাক ফতোয়া
দুই পক্ষের আইনজীবীর সওয়াল পর্ব শোনার পর বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ কেস ডাইরি খতিয়ে দেখে। এর পর বিচারপতি বলেন, সমাজে এসব কী হচ্ছে! কোন পুলিস আধিকারিক এর তদন্ত করছেন? এটা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের অপরাধ। কিন্তু তদন্তকারী অফিসার তথ্যপ্রযুক্তি অপরাধ আইনের ৬৭সি ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগই আনেননি। এদিকে তিনি চার্জশিট পেশ করে দিয়েছেন।
বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির কথায়, ‘মোবাইল থেকে যে কেউ ভিডিয়ো ডিলিট করতে পারেন। কিন্তু তদন্তকারী অফিসারদের দেখা উচিত, কার মোবাইল থেকে প্রথম ভিডিয়োটি আপলোড করা হয়েছিল, কবে আপলোড হয়েছিল, কোন সময় আপলোড হয়েছিল। তদন্তে সেই সংক্রান্ত কোনও তথ্যই নেই। এইতো তদন্তের নমুনা!’
পুলিসকে তিরষ্কার করে বিচারপতি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ কেন যাবে আপনাদের কাছে? সাধারণ মানুষ কোনও অভিযোগ নিয়ে গেলে, হয় আপনারা সেই অভিযোগ গ্রহণ করেন না অথবা গ্রহণ করলেও তা প্রভাবিত হয়ে তদন্ত করেন। আপনারা মানুষের মনে আস্থা ফেরান।’
আরও পড়ুন: খোলা মঞ্চে পোশাক খুলে মেয়েদের অশ্লীল নাচ, গ্রেফতার নাবালিকা-সহ ২১
বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি এই কথা বলেই জামিন সংক্রান্ত মামলাটি শুনতে অস্বীকার করেন। ফলে এই মামলার শুনানি হবে বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে। আইনজীবী মহলের মতে, বিচারপতির এই মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। তদন্তে এই ধরনের গাফিলতির জন্য আইনজীবীদেরও অনেক সময় বিচারপতিদের রোষের মুখে পড়তে হয়, এমনটাই মত সরকারি আইনজীবীদের।