বালিগঞ্জ: বালিগঞ্জের উপনির্বাচনে সিপিএম তথা বামেরা বিজেপিকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল। শুধু তাই নয়, চার মাস আগে কলকাতার পুরভোটে কিংবা ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বালিগঞ্জে সিপিএমের ভোট যেখানে পাঁচ শতাংশের কাছাকাছি ছিল, সেখানে তাদের ভোট ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। এই ফলাফল দেখে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট কিছুটা হলেও খুশি হতেই পারে। নতুন রাজ্য সম্পাদক হিসেবে মহম্মদ সেলিমও এই ভোট শতাংশ বৃদ্ধির জন্য কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন। করবেন কি না, সেটা অন্য বিষয়।
বালিগঞ্জের এই ফলাফল দেখে সিপিএম নেতারা আশ্বস্ত হতে পারেন এই ভেবে যে, এবার বোধহয় তাদের ক্রমাগত রক্তক্ষরণের ধারা বন্ধ হতে চলেছে। বালিগঞ্জে সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। সেই ভোট কিছুটা হলেও বামেদের দিকে ফিরেছে বলে রাজনৈতিক মহলের দাবি। সেই সব চুলচেরা বিশ্লেষণ পরে হবে। কিন্তু সাদা চোখে যেটা দেখা যাচ্ছে, সেটা হল, এক ধাক্কায় বালিগঞ্জে সিপিএমের ভোট এক বছরের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে।
এই ফলাফলের জন্য সিপিএম তার অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেলে অভিনন্দন জানিয়েছে বালিগঞ্জের সিপিএম প্রার্থী সায়রা শাহ হালিমকে। টুইটেই লেখা হয়েছে, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী পেয়েছিলেন মাত্র ৮৪৭৫ ভোট। আর চার মাস আগে কলকাতা পুরসভায় নির্বাচনে বালিগঞ্জ কেন্দ্রের অন্তর্গত বিভিন্ন ওয়ার্ডে বামেদের সম্মিলিত ভোট ছিল ১১, ২৪২।
আরও পড়ুন: Saira Shah Halim: ভোটে হারলেও নৈতিক জয় তাঁরই, দাবি বালিগঞ্জের বাম প্রার্থী সায়রার
ঘটনাচক্রে গত বছর বিধানসভা ভোটে বালিগঞ্জে সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন এবারকার প্রার্থী সায়রা শাহ হালিমের স্বামী ফুয়াদ হালিম। গত দুই তিন বছর ধরে এনআরসি, এনপিআর বিরোধী আন্দোলনে সায়রা ছিলেন কলকাতায় আন্দোলনের সামনের সারিতে। গত বছর স্বামীর হয়ে জোরদার প্রচারও চালান তিনি। ভোটের ময়দানে এবারই প্রথম। রাজ্য বিধানসভার প্রয়াত অধ্যক্ষ হাসিম আবদুল হালিমের পুত্রবধূ প্রথমবার ভোটে নেমেই অনেকটাই বাজিমাত করেছেন। তিনি বামেদের ভোট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশে টেনে তুলেছেন। এবার বামেদের ভোট যেমন বেড়েছ, তেমনি কমেছে তৃণমূলের ভোট। গত বছর প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায় বিধানসভা ভোটে বালিগঞ্জে জয়ী হন ৭০.৬ শতাংশ ভোট পেয়ে। এবার তৃণমূল প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় পেয়েছেন ৪৯.৬৯ শতাংশ ভোট। সিপিএম প্রার্থী হিসেবে সায়রার স্বামী গতবার মাত্র ৫.৬১ শতাংশ ভোট পান। এবার সায়রার ভোট ৩০.৬ শতাংশ। বিজেপি প্রার্থী গতবার পেয়েছিলেন ২০.৬৮ শতাংশ ভোট। এবার বিজেপির ভোট ১২.৮৩ শতাংশ। বিজেপি প্রার্থী কেয়া ঘোষের জামানত জব্দ হয়ে গিয়েছে। উল্লেখ করার মতো আরও হিসেব আছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যে ওয়ার্ডে থাকেন, সেই ৬৫ নম্বরে সিপিএম প্রার্থী ৯২০ ভোটের লিড দিয়েছেন। পাশের ৬৪ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল পুরভোটে ৯১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। সিপিএম প্রার্থীর ভোট ছিল মাত্র ৩ শতাংশ। এবার ওই ওয়ার্ডে সিপিএম প্রার্থী ২৫০ ভোটে লিড পেয়েছেন।
আরও পড়ুন: Ballygunge Bye Election: বালিগঞ্জে বিজেপিকে ১৮ হাজার ভোটে পিছিয়ে খেলা শেষ সিপিএমের সায়রার
সব মিলিয়ে বলা যেতে পারে, প্রথম ভোটের ময়দানে নেমেই তাক লাগিয়ে দিয়েছেন প্রয়াত অধ্যক্ষের পুত্রবধূ সায়রা শাহ হালিম। ফল প্রকাশের পর সায়রার দাবি, নৈতিক জয় হয়েছে তাঁরই। লড়াই জারি থাকবে।