পুরুলিয়া: প্রশাসনিক বৈঠকে পুরুলিয়ায় গিয়ে সুরেশ আগরওয়ালের বিশাল ভুঁড়ি দেখে তাজ্জব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ঝালদা পুরসভার চেয়ারম্যান সুরেশের ওজন ১২৫ কেজি৷ বিরাট তাঁর মধ্যপ্রদেশ৷ এই চেহারা নিয়ে তিনি হাঁটাচলা করেন কী করে তা প্রশাসনিক বৈঠকে জানতে চান কৌতূহলী মুখ্যমন্ত্রী৷ সরল মনে সুরেশ বলে ফেলেন, সকালে তাঁর ‘পকোড়ি’ খাওয়ার অভ্যোস৷ তবে প্রতিদিন দেড় ঘণ্টা ব্যায়াম করেন৷ সুগার-প্রেশার নেই৷ কোনও ওষুধ খান না৷ অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে মমতা তাঁর ব্যায়ামের ‘ডেমো’ দেখতে চান৷ জানতে চান, কী ব্যায়াম করেন? নিজের আসনে দাঁড়িয়ে সুরেশ তখন শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে শুরু করেন৷ তাঁর দাবি, দিনে এক হাজার বার কপালভাতি করেন৷ নিজের কানকে আর বিশ্বাসই করতে পারলেন না মমতা৷ ঝালদার চেয়ারম্যানকে তিনি সোজা স্টেজে এসে প্রাণায়ম দেখাতে বলেন৷ সেই সঙ্গে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন সুরেশকে৷ বলেন, ‘আপনি স্টেজে এসে দেখাতে পারলে আমি দশ হাজার টাকা দেব৷’ ভারী মধ্যপ্রদেশ নিয়ে সুরেশ মুখ্যমন্ত্রীর প্রলোভনে পা দেননি৷ শেষে মমতা বলেই ফেলেন, ‘আপনি ঠিক মতো নিশ্বাস নেন না৷ ওই রকমই পেট নাচান৷’ মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসতে থাকেন সরকারি আধিকারিকরা৷ আড়ালে আবডালে বলতে থাকেন, শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে ঢপ দিয়ে লাভ নেই৷
এমনিতেই স্বাস্থ্যের ব্যাপারে ভীষণ সচেতন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ নিয়ম মেনে খাওয়া-দাওয়া, ব্যায়াম, প্রাণায়ম সবই করেন তিনি৷ হাঁটাহাঁটির ব্যাপারে তো আলাদা করে সুনাম রয়েছে তাঁর৷ ষাটোর্ধ্ব মমতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাঁটতে গেলে রীতিমতো মাথার ঘাম পায়ে পড়ে সুঠাম চেহারার পুলিস অফিসারদের৷ সোমবার পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠকে সুরেশ আগরওয়ালকে দেখে মমতার স্বাস্থ্য সচেতন রূপ বেরিয়ে আসে৷ ঝালদার চেয়ারম্যান কিছু সমস্যার কথা তাঁকে জানানোর জন্য মাইক হাতে নেন৷ কিন্তু ওসব না শুনে সুরেশের চেহারা নিয়ে প্রশ্ন করতে থাকেন তিনি৷ এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে কিছুক্ষণ রসিক কথাবার্তা চলে৷ রইল দু’জনের কথোপকথনের সেই অংশ…
মমতা- আপনার ভুঁড়ি যেভাবে বাড়ছে আপনি যে কোনও দিন ব্লক করে যাবেন মনে হচ্ছে
সুরেশ- না, হবে না দিদি
মমতা- হাঁটাচলা করছেন না কি?
সুরেশ- দিদি শোনেন, আমার না সুগার আছে না প্রেশার
মমতা- নিশ্চয়ই লিভারে প্রবলেম আছে
সুরেশ- কিচ্ছু নেই
মমতা- ডেফিনেটলি আছে… না হলে এত বড় মধ্যপ্রদেশ হল কী করে?
সুরেশ- আমি এখনও পর্যন্ত কোনও মেডিসিন খাই না৷ এটা রেকর্ড
মমতা- রেকর্ড ঠিক আছে৷ হাঁটাহাটি করেন?
সুরেশ- রোজ ব্যায়াম করি এক-দেড় ঘণ্টা৷ কিন্তু তেলেভাজা খেয়ে ফেলি৷ সকালে পকোড়ি খাবই খাব৷ ছোট থেকে অভ্যেস হয়ে আছে৷ কিন্তু ডেলি দেড় ঘণ্টা ব্যায়াম করি৷
মমতা- ও খেলে কোনওদিনও কমবে না এটা৷ কী কী ব্যায়াম করেন
সুরেশ- অনুলোম-বিলোম
মমতা- আপনি তো প্রাণায়ম দেখাচ্ছেন৷ প্রানায়মে তো ভুঁড়ি কমে না৷ ওতে ওয়েট কমে না৷ আর কী কী প্রাণায়ম করেন৷
সুরেশ- সবগুলো করি দেড়ঘণ্টা করে৷
মমতা- কী ব্যায়াম করেন? ভুড়ির কী ব্যায়াম করেন?
সুরেশ- শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে থাকেন..
মমতা- আরে ও তো কপালভাতি.. কতবার করেন?
সুরেশ- একহাজার বার
মমতা- অ্যাঁ! একহাজার বার? হতে পারে না৷ আপনি যদি এখানে স্টেজে এসে করে দেখাতে পারেন আমি দশ হাজার টাকা দেব৷ এখনই..
সুরেশ- পাঁচটার পরে… সকালে করতে হয় না হলে পাঁচটার পরে.. পাঁচটার পরে করে দেখিয়ে দেব ম্যাডাম
মমতা- কিছুতেই পারবেন না.. একহাজার বার করলে আপনার ভুঁড়ি থাকত না৷ আপনি শ্বাস নিশ্বাস টানেন না তাহলে.. ওই রকমই পেট নাচান৷ ঠিক তো? কপালভাটি আমিও করি…