কলকাতা: উত্তর কলকাতার সঙ্গে দক্ষিণ এবং মধ্য কলকাতার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হল টালা ব্রিজ (Tala Bridge) বা টালা সেতু। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে সাধারণ মানুষের জন্য ফের খুলে দেওয়া হয় এই ব্রিজ। এবার টালা সেতুতে যানবাহনের বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণে স্পিড ডিটেকশন ক্যামেরা (Speed Detection Camera) বসাতে উদ্যোগী হয়েছে লালবাজার (Lal Bazar)। ইতিমধ্যেই এই ক্যামেরা বসানোর তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। জানা যাচ্ছে, টালা সেতুর দুই প্রান্তে সেতুতে ওঠার মুখে এই ক্যামেরাগুলি বসানো হবে। আগামী মাসের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে বলে আশা পুলিশকর্তাদের।
লালবাজার সূত্রের খবর, শহরের বিভিন্ন সেতু ও উড়ালপুলে বেপরোয়া গতি রোধ করতে আগেই গতি পরিমাপক এই ক্যামেরা বসানো হয়েছে। কোনও গাড়ি বেঁধে দেওয়া গতিসীমার উপরে উঠলেই এই ক্যামেরার সাহায্যে সেই গাড়িকে চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে, রাতের শহরে যখন ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীরা রাস্তায় থাকেন না, সেই সময়ে সব চেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে এই ক্যামেরাগুলি। ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মীদের কথায়, টালা সেতু সবসময়ই পুলিশি নজরদারির আওতায় থাকে। তবে পুলিশের নজর এড়িয়ে অনেক সময় মোটর বাইক এবং গাড়ি বেপরোয়া গতিতে যায়। এই ধরনের যানবাহনকে ধরার জন্যই সেতুর দুই প্রান্তে রাস্তার মাঝে ওই গতি পরিমাপক ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে, মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার পর রাজ্যের সবকটি ব্রিজেরই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। ২০১৯-এর অক্টোবরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে টালা ব্রিজ ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর ২০২০-র পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় ব্রিজ ভাঙা। ওই বছরের এপ্রিলে শেষ হয় সেই কাজ। অগস্টে সেতুর নির্মাণ শুরু করে লার্সেন অ্যান্ড টুবরো লিমিটেড। প্রায় ৪৬৮ কোটি টাকা খরচ করে ৮০০ মিটার লম্বা নতুন টালা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। চার লেনের ওই সেতুতে যান নিয়ন্ত্রণের জন্য ছজন পুলিশকর্মী বা সিভিক ভলান্টিয়ারকে মোতায়েন করা রয়েছে। এ ছাড়াও সেতুতে রয়েছে ১৮টি ক্যামেরা। যার সাহায্যে চালানো হয় নজরদারি।
উল্লেখ্য, টালা ব্রিজের নাম হেমন্ত সেতু। আগে ব্রিজকে চলতি কথায় বলা হত, কাউ ক্রসিং ব্রিজ। প্রসঙ্গত, ১৯৭৩ সালের ৫ অক্টোবর সারা ভারত ফরওয়ার্ড ব্লকের চেয়ারম্যান প্রয়াত নেতা হেমন্তকুমার বসুর স্মরণে এই ব্রিজের নাম রাখা হয়েছিল হেমন্ত সেতু। ১৯৭১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি শ্যামপুকুর স্ট্রিটে এই রাজনৈতিক নেতার উপর হামলা হয়েছিল। ভোজালি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল তাঁকে। এতদিন ধরে টালা সেতুর নাম রয়ে গিয়েছিল হেমন্ত সেতুই। নবনির্মিত সেতুর নাম সেটাই রাখা হয়েছিল কিনা, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে।