ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে জীবন৷ করোনার ডেল্টা সংক্রমণ নিয়ে বিশ্বজুড়ে নৈরাশ্যের মধ্যেও আনন্দের রেশ কলকাতার কুমোরটুলিতে৷ করোনার তৃতীয় ঢেউ আসার আগেই কুমারটুলির দুর্গা প্রতিমা পৌঁছে যাবে বিদেশে৷ করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিধিনিষেধ, সতর্কবার্তা, দ্রুত টিকাকরণ, অক্সিজেন, বেড, এসব নিয়ে জর্জরিত রাজ্যবাসী। এই পরিস্থিতিতে আদৌ পূজা হবে কিনা সে নিয়ে রয়েছে সংশয়৷ গতবছর থেকে অনেক পূজা কমিটিরই অর্ডার কমে গিয়েছে৷ এমনই অভিযোগ কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের৷ কোভিড তাঁদের কাজে থাবা বসিয়েছে। রুজি রোজগারেও টান পড়েছে৷ গত বছর পূজাতে তেমন আয় হয়নি শিল্পীদের৷ এই বছরও আশঙ্কায় দিন কাটছে তাঁদের। কারণ তৃতীয় ঢেউ আসার সম্ভাবনায় অনেকে পূজা নিয়ে সন্দিহানও৷ তাছাড়াও প্রবাসীরা লকডাউনে অনেকেই দেশে ফিরে এসেছেন৷ করোনার জন্য নিয়মকানুনেও এখন অনেক কড়াকড়ি৷ তাই বিদেশে প্রবাসীদের বাঙালি সংগঠনগুলি সেভাবে পুজো করবে কি? যদিও যেখানে করোনার প্রকোপ কম সেখানে পুজো নিয়ে উৎসাহ তৈরি হয়েছে৷ ফলে, মৃৎশিল্পী মহলে বাড়তি অক্সিজেন জোগাচ্ছে বিদেশের পূজা৷
আপাতত প্রতিমা বিদেশ পাড়ি দিলে তবেই শিল্পীরা আয়ের মুখ দেখবেন৷ আগের থেকে বিদেশে দু্র্গা প্রতিমার চাহিদা ইদানীং বেড়েছে৷ কিন্তু করোনার জন্য এখন ছবিটা আলাদা৷ তিরিশ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজে জড়িত শিল্পী মিন্টু পালের তৈরি দুটি ফাইবার গ্লাসের প্রতিমা বার্লিন এবং নিউ জার্সি পাড়ি দিচ্ছে৷ মৃৎশিল্পীরা চাইছেন, ছোট করে হলেও যেন পুজো হয়৷ কলকাতার কয়েকটি ক্লাব ইতিমধ্যে প্রতিমার বায়না দিতে শুরু করেছে৷ বর্তমানে বিদেশের সঙ্গে কুমোরটুলির যোগ আরও সহজ করে দিয়েছে প্রযুক্তি৷ মৃৎশিল্পীরা জানান, আগে ফোনের মাধ্যমেই অর্ডার আসত৷ এখন অনলাইনে কথা হয়৷ হোয়াটসঅ্যাপ বা ভিডিও কনফারেন্সেই অর্ডার আসে, প্রতিমা পছন্দ করেন কমিটির কর্মকর্তারা৷ প্রতিমা শিল্পী কৌশিক ঘোষ জানিয়েছেন, ‘গতবছর আমি প্রায় ছ’খানা দুর্গা প্রতিমা বিদেশে পাঠিয়েছি৷ প্রতি বছরই প্রায় ৩০ টি করে দুর্গা করে প্রতিমা বিদেশে পাঠাতাম৷ ৯ টি দুর্গা বিদেশে পাঠিয়েছেন। গোটা কুমোরটুলি থেকে ৫০ টির মত প্রতিমা বিদেশ পাড়ি দেয়৷ কিন্তু এবার এই অতিমারির জন্য সেটা ৫০ শতাংশেরও বেশি কমে গিয়েছে৷’
কলকাতার বাবুন পালের ফাইবার গ্লাসের তৈরি এক চালচিত্রের সাবেকি ঘরানার মৃন্ময়ী দুর্গা বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। তবে প্রতিমা তৈরির ক্ষেত্রে সমস্যাও রয়েছে কারণ যে সরঞ্জাম চাইছেন বিদেশীরা সেই সরঞ্জাম তাঁদের কাছে এই মুহূর্তে নেই, এমনকী ওখানে গান-বাজনার জন্য হারমোনিয়ামটি পর্যন্ত এখান থেকে পাঠাতে বলা হয়েছে। অথচ এই করোনা বিধিনিষেধের মধ্যে সেই সরঞ্জাম বিদেশে পাঠাতে বেগ পেতে হচ্ছে বাবুন পালকে। তাই বেশ কিছু দুর্গা প্রস্তুত হয়ে গেলেও বিদেশে পাড়ি দিতে পারছে না। অন্যদিকে, জল পথে বিদেশে দুর্গা পাঠাতেও সমস্যা। তবু বুক বাঁধছেন বাবানের মতো অনেক মৃৎশিল্পীও৷ তাঁরা বিদেশে পূজার সূচনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন৷ প্রতিমা শিল্পী অশোক বলেন, ‘আমাদের এই প্রতিমা তৈরি করেই জীবিকা নির্বাহ হয়। করোনার পরে একটু সামলে নিয়েছিলাম৷ আবার যদি সেই পরিস্থিতি হয়, তা হলে আমাদের খুবই সমস্যা হবে৷ বিদেশে কিছু প্রতিমা গেলে আমাদের সঙ্কট কিছুটা দূর হবে৷’ তাই বিদেশে দুর্গা পৌঁছানর বরাত পেতেই আশার আলো দেখছেন প্রতিমা শিল্পীরা।