কলকাতা: আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে (Panchayat Election) বিজেপি (BJP) এবং তৃণমূলকে (TMC) ঠেকাতে বামেরা সব দলের সঙ্গেই কথা চালাচ্ছে। দুদিন ব্যাপী সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক শেষে বুধবার দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, কংগ্রেস, আইএসএফ, এসইউসি, সিপিআই(এমএল) প্রভৃতি সব দলের সঙ্গেই কথা হচ্ছে। এমনকি বামফ্রন্টের বাইরের বাম দলগুলির সঙ্গেও জেলা, ব্লক ও রাজ্য স্তরে আলোচনা চলছে। পরিস্থিতি বুঝে পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে বামফ্রন্ট ও সহযোগী হিসেবে লড়াই হতে পারে। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক এই দলগুলির সঙ্গে জোটের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি। তিনি বলেন, স্থানীয় মানুষের চাহিদা অনুযায়ী গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ ভিত্তিক আলোচনা চলছে জোট নিয়ে। তৃণমূলের দুর্নীতি এবং বিজেপির সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রাজ্যের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। জাতি, ধর্ম, সাম্প্রদায়িকতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বামেদের লড়াই চলবে।
রাজ্য কমিটির বৈঠকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সিপিএম সূত্রের খবর, তাঁদের জেলাভিত্তিক প্রার্থী তালিকা তৈরির কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। এবার বহু তরুণ মুখকে পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট দেওয়া হবে বলে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলনে জেলায় জেলায় যেভাবে তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে আসছে, তাতে খুশি সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ইদানিং আন্দোলনগুলিতে অনেক সাধারণ মানুষও শামিল হচ্ছে। বিভিন্ন জেলায় বসে যাওয়া কর্মী নেতারাও আবার সক্রিয় হয়ে উঠছেন। রাজ্য কমিটি মনে করছে, এটাও ভালো লক্ষন। একাধিক জেলার নেতারা দাবি করেন, ভয় ভেঙে ছাত্র , যুব এবং সাধারণ কর্মীরা পথে নামছেন। এই প্রসঙ্গেই গত কয়েকদিনে হাওড়ার শান্তি মিছিল, কলকাতার শান্তি মিছিল, বারাসতের দুর্নীতি বিরোধী মিছিলের কথাও উঠে আসে রাজ্য কমিটির বৈঠকে।
সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকে দুদিনই উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে সেলিমের সঙ্গে ইয়েচুরিও উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইয়েচুরি বলেন, যেকোনও মুল্যে জাতীয় স্তরে বিজেপিকে হারাতেই হবে। এমন একটা বাতাবরণ তৈরি করার চেষ্টা চলছে, যেন যেই জিতুক, সরকার গঠন করবে বিজেপি। তিনি বলেন, এটা হাস্যকর। রাজনীতি আর পাটিগণিত এক নয়। একসময় তৃণমূল এনডিএতে বিজেপির সঙ্গে ছিল। আবার সুযোগ পেলে আবার যাবে। তৃণমূলের বিজেপি বিরোধিতাও আজ প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। তাদের যুদ্ধ একেবারেই লোক দেখানো।
জাতীয় রাজনীতি প্রসঙ্গে ইয়েচুরি বলেন, রাজ্য ভিত্তিক বোঝাপড়া একরকম, জাতীয় স্তরে অন্যরকম। সেই বোঝাপড়া নির্বাচন পরবর্তী ক্ষেত্রে চূড়ান্ত হবে। ২০০৪ সালে এভাবেই ইউপিএ তৈরি হয়েছিল। ওই বছর এবং তারও আগে ১৯৯৬ সালে ফ্রন্ট তৈরি হয়েছিল ভোটের পরে। বিজেপি বিরোধী ভোটকে যতটা সম্ভব একত্র করাই সিপিএমের লক্ষ্য। তিনি বলেন, ২০০৪ সালে বাংলা, ত্রিপুরা এবং কেরলে সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের বিরোধিতা ছিল। সেবার বামেরা লোকসভায় ৬১টি আসন পায়। তার মধ্যে এই তিন রাজ্য থেকেই বামেরা বেশি আসন পায়। ৬১টির মধ্যে ৫৭টি আসনে বামেরা কংগ্রেসকে হারিয়েছিল। কিন্তু দেশের সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে বিজেপিকে দূরে রাখতে বামেরা কেন্দ্রে কংগ্রেসকে সমর্থন দেয়। তাঁর মতে, রাজ্যভিত্তিক রাজনৈতিক সমীকরণ এবং কেন্দ্রে সরকার গঠনের প্রশ্নে দায়বদ্ধতার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা।