জ্যাভলিনে স্বপ্নের সোনা জয় ভারতের। এই জ্যাভলিনই আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে সৌরদীপের কাছে।
দেশজুড়ে এখন একটাই কথা, নীরজ চোপড়া ও তাঁর বর্ষা নিক্ষেপ। টোকিও অলিপিক্সে জ্যাভলিনে সোনার পদক জয়ী নিরজ। তাঁর এই সাফল্যে গর্বিত গোটা দেশ। অথচ এই ঘটনার সম্পূর্ণ বিপরীত ঘটনা ঘটছে শহর কলকাতার পিজি হাসপাতালে। পিজির অধীনেই বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সে ৩ নম্বর কেবিনে শুয়ে ফেসবুকে নীরজের সোনা জয়ের ভিডিও দেখছিল বছর ১৩’র সৌরদীপ। তখনও সে বুঝে উঠতে পারেনি কোন ক্যাটাগরিতে সোনা জিতেছে নীরজ। হাসিমুখেই সে তার বাবাকে খবরটা দিল। আর পর মুহূর্তেই সে জানতে পারে, ঠিক কোন ক্যাটাগরিতে সোনা জিতেছে নিরজ চোপড়া। সৌরদীপের বাবা জানতে চাইলেন “সোনা জিতেছে তা বেশ কোন খেলায় জিতেছে?” এই প্রশ্নের উত্তরে চুপ করে থাকে সৌরদীপ। তাকে দেখেই বাবার খটকা লাগে। ছেলের হাত থেকে মোবাইল ফোনটা নিয়ে দেখতেই ছেলের চুপ করে যাওয়ার কারণটা বুঝতে পারেন বাবা।
আরও পড়ুন : এনআরএসে রাজ্যের দ্বিতীয় কিডনি প্রতিস্থাপন কেন্দ্র
ঠিক এক বছর আগে ২০২০’র ১৩ জানুয়ারি। চোখের সামনে ভেসে উঠল সেই দুঃস্বপ্নের দিন। ওই দিনই শ্যামপুরের নাওদা নারায়ন চন্দ্র বিদ্যাপীঠ স্কুলের মাঠে স্পোর্টস চলছিল। বল খেলতে খেলতে মাঠের মাঝে চলে আসে সৌরদীপ। তখনই আচমকা তার মাথায় ৪ সেন্টিমিটার জ্যাভলিনের ফলা গেঁথে যায়। জ্যাভলিনের তীক্ষ্ণ অংশ মস্তিষ্কের ভেতরের স্নায়ুগুলোর এমন ভাবে ক্ষতি করে যে, ঘটনার পর থেকে অসাড় হয়ে যায় সৌরদীপের একটি হাত ও পা। এরপর দু’টি অস্ত্রোপচার করে আপাতত কিছুটা সুস্থ সৌরদীপ। হাসপাতালের বেডে শুয়ে সেই স্মৃতি আবারও তাড়া করে বেড়াচ্ছে বাবা ও ছেলেকে। সেই দিনের সেই ঘটনার পর পিজি হাসপাতালের ট্রমা কেয়ারে নিয়ে আসা হয়েছিল সৌরদীপকে। প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে চলেছিল অস্ত্রোপচার। মস্তিষ্কের ভার কমানোর জন্য সৌরদীপের মাথার কিছুটা অংশ কেটে সরিয়ে রাখা হয়েছিল। সেটিকে আবার পুনরায় বসানোর জন্য আগামী বুধবার আরও একটি অস্ত্রোপচার হবে তার। সে কারণেই এখন বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ভর্তি রয়েছে সৌরদীপ। সেদিনের সেই দুর্ঘটনার পর থেকে পক্ষাঘাত ভুগছে সৌরদীপ। তার বাঁ হাত আর বাঁ পা কাজ করছিল না। ফিজিওথেরাপি করে পা খানিকটা ভাল হলেও একটি হাত এখনও অচল।
আরও পড়ুন : পানিপথ থেকে টোকিও, নীরজের সোনার সফর
জ্যাভলিনে সোনার পদক জয়ের ঘটনার পর থেকেই আবারও আতঙ্ক গ্রাস করেছে সৌরদীপকে। পুজোর পর স্কুল খুলবে এমন কথা শুনেছিল সে। কিন্তু আর সে স্কুলে যেতে চাইছে না। এক সময় পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা ছিল তার ধ্যান জ্ঞান। এখন খেলার নাম শুনলেও ভয় লাগে সৌরদীপের। বাবার হাত ধরে কোনোক্রমে বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাসপাতালে আসা। ব্যাস এটুকুই। এখন খালি একটাই কথা বলছে সৌরদীপ। নীরজের সোনা জয়ে খুশি হলেও ভয় লাগছে তাঁর। সেদিনে স্কুলের ঘটনা যেন আবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই একটি ভিডিও ভেসে উঠছে যেখানে নীরজ চোপড়া জ্যাভলিন নিয়ে ছুটছেন আর পর মুহূর্তেই সেটি ছুঁড়ছেন। এই ভিডিও যতবার দেখছে, ততবার আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে সৌরদীপ। তার কেবল মনে হচ্ছে, ওই জ্যাভলিন যেন আবারও তাড়া করছে তাঁকে। তাই ফোনের স্ক্রিনে যখনই ওই ভিডিও ভেসে উঠছে, সঙ্গে সঙ্গে স্ক্রল করে দিচ্ছে সৌরদীপ। একজনের খুশি আর এক জনের কাছেই অভিশাপ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।