কলকাতা: নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর আপত্তি উপেক্ষা করে বিজেপি নেতা রাকেশ সিংকে মাদক মামলায় বুধবার জামিন দেয় হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। কিন্তু বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ জামিনে মুক্তি দিলেও ত্রুটিপূর্ণ নির্দেশের কারণে জেল থেকে এখনও ছাড়া পাননি বিজেপি যুব মোর্চা নেতা রাকেশ সিং। শুক্রবার ত্রুটির বিষয়টি ডিভিশন বেঞ্চের নজরে আনা হলে, নতুন করে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিগত কত টাকার বন্ডে জামিন তা নিয়ে বিভ্রান্তির কারণেই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এদিন সংশোধিত নির্দেশে জানিয়েছেন, রাকেশ সিংয়ের জামিনের জন্য ১লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডের সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা করে আরও ৪টি সিকিওরিটি বন্ড জমা দিতে হবে।
এক সময় বাংলার রাজনীতিতে কংগ্রেসের শ্রমিক নেতা হিসাবেই পরিচিত ছিলেন রাকেশ সিং। শ্রমিক নেতা হিসেবে জনপ্রিয় হলেও বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়েনি। ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর অনুগামী। আদালত চত্ত্বরেই এক মামলার সাক্ষী ও কতর্ব্যরত পুলিশকে হেনস্থা করার অভিযোগে রাকেশ সিং গ্রেফতারও হয়েছিলেন। সেই সময় আলিপুর প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে রাকেশের সঙ্গে একাধিকবার দেখা করেছিলেন অধীর। এমনকি জেল থেকেই তাঁকে মনোনয়নও দিতে চেয়েছিলেন বলে শোনা যায়। শেষ পর্যন্ত তা ঘটেনি।
কলকাতা পুর নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়ায় কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। ধীরে ধীরে বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারাও চেষ্টা করেছিলেন তাঁকে ধরে রাখার। কিন্তু পারেননি। নয়াদিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে মুকুল রায় এবং কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের উপস্থিতিতে তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন – যোগী রাজ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পদ্ম বাতিলের আবেদন রাখবেন টিকায়েত
বিজেপি ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্র থেকে তাঁকে প্রার্থীও করেছিলেন। কিন্তু বিজেপিতে গিয়েও শক্তি প্রদর্শন করতে গিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন। কলকাতায় অমিত শাহর রোড শো’কে কেন্দ্র করে কলকাতার রাস্তায় নজিরবিহীন ঝামেলা ও বিদ্যাসাগর কলেজে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনাতেও রাকেশ সিংয়ের নাম জড়িয়ে পড়ে। ওই মিছিলে ‘ফাটাফাটি গ্যাং’কে জড়ো করার জন্য তাঁর একটি ভিডিয়ো বার্তা সেইসময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। গ্রেফতারও করা হয়েছিল তাঁকে। ‘দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’ সিনেমার প্রদর্শন বন্ধ করার লক্ষ্যে দক্ষিণ কলকাতার এক শপিংমলে হামলা চালানোর ঘটনাতেও মূল অভিযুক্ত রাকেশ সিং।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি নিউ আলিপুরে বিজেপি যুব নেত্রী পামেলা গোস্বামীর গাড়ি থেকে লক্ষাধিক টাকার কোকেন উদ্ধার করে পুলিশ৷ সেই সূত্র ধরে উঠে আসে রাকেশ সিংয়ের নাম৷ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠায় পুলিশ৷ কিন্তু তদন্তে সহযোগিতার নাম করে পালিয়ে যায় সে৷ পরে ২৩ ফেব্রুয়ারি রাকেশ সিংকে গলসি থেকে গ্রেফতার করেন লালবাজারের আধিকারিকরা৷ তার পর থেকে জেলেই ছিলেন তিনি৷ মাদক মামলায় জামিন চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন রাকেশ৷