কলকাতা: সোমবার দিনভর একের পর এক নাটকের সাক্ষী হয়ে থাকল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta Highcourt)। এদিন যা ঘটল, তা নজিরবিহীনও বটে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির (SSC Recruitment) একাধিক মামলা চলছে কলকাতা হাইকোর্টে। তা নিয়ে চলছে নানা আইনি টানাপড়েন। তার মধ্যেই এদিন তিন দফায় ডিভিশন বেঞ্চের পরিবর্তন হল। অধিকাংশ বিচারপতিই কমিশনের দুর্নীতি মামলা শুনতে রাজি হলেন না। প্রবীণ আইনজীবীদেরও অনেকে মনে করতে পারলেন না, অতীতে কখনও এধরনের ঘটনা ঘটেছে কি না।
এদিন সকালে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন এবং বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চ কমিশনের মামলা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে চেয়ে আবেদন করেন।
প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব পরে ঘোষণা করেন, বিচারপতি টি এস শিভাগ্নানমের ডিভিশন বেঞ্চ স্কুল সার্ভিস কমিশনের মামলা শুনবে। এই ঘোষণার কিছুক্ষণ পরেই বিচারপতি শিভাগ্নানম বেঁকে বসলেন। তিনি জানিয়ে দিলেন, এই সব মামলা তাঁর পক্ষে শোনা সম্ভব নয়।
সমস্যায় পড়ল হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি একটু পরে জানালেন, নতুন বেঞ্চ হচ্ছে। নাম ঘোষণা হল বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি অজয় কুমার মুখোপাধ্যায়ের। গোল বাঁধল আবার। বিচারপতি সৌমেন সেন জানালেন, তিনি ব্যক্তিগত কারণে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মামলা থেকে অব্যাহতি চান। তখন সন্ধ্যা গড়িয়ে গিয়েছে। আবার ব্যস্ততা প্রধান বিচারপতির। কিছুক্ষণ পর জানানো হল, বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির বেঞ্চ শুনবে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মামলা। ততক্ষণে রাত হয়ে গিয়েছে। এই বেঞ্চ অবশ্য আর মামলা শুনতে অরাজি হয়নি।
আরও পড়ুন- SSC Recruitment: নিজাম প্যালেসে হাজির এসএসসি উপদেষ্টা কমিটির চার সদস্যই
এদিন বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন এবং বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানির কথা ছিল এসএসসির উপদেষ্টা কমিটির চার সদস্যের একটি আবেদনের। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চ দুর্নীতি মামলায় ওই চার সদস্যকে সিবিআই দফতরে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে তাঁরা ডিভিশন বেঞ্চে যান। তারই শুনানি হওয়ার কথা ছিল। আচমকাই বিচারপতি ট্যান্ডনের বেঞ্চ স্কুল সার্ভিস কমিশনের সমস্ত মামলা অব্যাহতি চেয়ে বসে। হতাশ ওই চার অফিসার ছোটেন প্রধান বিচারপতির এজলাসে। তিনি জানান, বিচারপতি টি এস শিভাগ্নানমের বেঞ্চ মামলা শুনবে। অফিসাররা ছুটে যান ওই বেঞ্চে। ততক্ষণে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি মামলা শুনবেন না। আবার তাঁরা প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ। তিনি জানালেন, মামলা শুনবে বিচারপতি সৌমেন সেনের বেঞ্চ। পরে তাঁরাও বেঁকে বসেন।
এদিকে একক বেঞ্চের নির্দেশ ছিল, সোমবার বেলা দুটোর মধ্যে ওই চার অফিসারকে সিবিআই দফতরে হাজির হতে হবে। কলকাতা এবং বিধাননগর পুলিশকে তাঁদের হাজিরা নিশ্চিত করতে হবে। শেষে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেঞ্চ ঠিক না হওয়ায় একক বেঞ্চের নির্দেশ মতো চার অফিসারকে হাজির হতে হল সিবিআই দফতরে। তাঁরা হাজিরা এড়াতে পারলেন না। কলকাতা হাইকোর্ট সাক্ষী হয়ে রইল এক নজিরবিহীন ঘটনার।