কলকাতা: অসহায় অবস্থা দেখে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনেছিলেন এক ছেলেকে। নিজের ছেলের মতো মানুষ করেছেন, বড় করেছেন। সেই ছেলেই অত্যাচার করে সম্পত্তির দাবিতে। বাধ্য হয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন পালক বাবা-মা। কোর্টের রায়, পোষ্য ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে সসম্মানে বাড়ি ঢুকুক বাবা-মা।
হাইকোর্টের রায় শুনে চোখে জল সালাউদ্দিন গাজীর। ১৩ নম্বর এজলাসের বাইরে তখন বাবাকে আশ্বস্ত করছেন অন্যান্যরা। কলকাতা হাইকোর্টের ল’ক্লার্ক কিশোর বেপারী ওই দম্পতিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ছেলে বৌমার হাতে অনেক মার খেয়েছেন। এবার নিজের বাড়িতে বাকি জীবনটা বুড়ো-বুড়ি মিলে শান্তিতে কাটান। জজ সাহেব বলে দিয়েছেন ছেলে, ছেলের বউকে বাড়ি থেকে বার করে দিতে। আপনারা যাতে শান্তিতে থাকতে পারেন।’
সালাউদ্দিন গাজীর বয়স ৬৬। স্ত্রী আঞ্জুমান আরাকে নিয়ে গার্ডেনরিচের রাজাবাগান থানা এলাকায় থাকেন। রেডিমেট জামাকাপড়ের ব্যবসা করে দিন চলে ওই দম্পতির। দারিদ্রের সংসারে এলাকারই এক শিশুপুত্রের অসহায় অবস্থায় দেখে দম্পতি সিদ্ধান্ত নেন ওকেই তাঁরা লালন পালন করে ভবিষ্যতে বড় করে তুলবেন। ১৯৯৯ সালে সাকুউদ্দিন গাজীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেন ওই দম্পতি। আইন অনুসারে পোষ্যপুত্র হিসাবে গ্রহণ না করলেও সাকুউদ্দিনের জীবনযাত্রায় কোনওরকম কার্পণ্য করেননি তাঁরা। স্বপ্ন ছিল, বড় হয়ে সাকু একদিন তাঁদের পাশে দাঁড়াবে।
সাকু বড় হল বটে, কিন্তু দুর্বিসহ হয়ে উঠল ওই দম্পত্তির জীবন। বিয়ে করল সাকুউদ্দিন। অভিযোগ, বিয়ের পর থেকে সাকু ও তাঁর স্ত্রীর অত্যাচার শুরু হল ওই বৃদ্ধ দম্পত্তির উপর। দাবি, অবিলম্বে সম্পত্তি ও জমানো অর্থ তাঁদের নামে করে দিতে হবে। ২০১৭ সালে অত্যাচার চরমে ওঠে। অভিযোগ, সিড়ি থেকে লাথি মেরে ফেলে দেওয়া হয় ওই দম্পতিকে। দম্পতির ওই অসহায় অবস্থা দেখে পাশে দাঁড়ান আইনজীবী শেখ ফজলুর রহমান। বিনা পারিশ্রমিকে থানায় নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু তাতেও কোনও সুরাহা মেলেনি। অভিযোগ ওই পোষ্য পুত্র বৃদ্ধ দম্পতিকে বাড়ি থেকে বের করে দেন।
আরও পড়ুন: শরিকি মামলায় বন্ধ হবে না নদিয়ার শতাব্দী প্রাচীন দুর্গাপুজো, রায় হাইকোর্টের
অবশেষে ২০১৯ সালে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই দম্পতি। বিচারপতি রাজশেখর মান্থার এজলাসে মামলা চলাকালীন আইনজীবী মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, আবেদনকারী একজন বয়স্ক নাগরিক। ছেলের অত্যাচার ও মারধরের ভয়ে আজ তারা বাড়ি ছাড়া। আদালত অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে এই বৃদ্ধ দম্পত্তির জীবন আরও দুর্বিসহ হয়ে উঠবে।
আরও পড়ুন: সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো খবর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ সুপ্রিম কোর্টের
সরকারি আইনজীবী আদালতে জানান, রাজাবাগান থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। পুলিশ বললেও ওঁর পোষ্যপুত্র কোনও কথা শোনেনি। অত্যাচার করেছে। বিচারপতি রাজশেখর মান্থার নির্দেশ, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাজাবাগান থানার পুলিশকে ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে বাড়িতে ঢুকিয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি সাকু ও তাঁর স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে দেবে পুলিশ। ভবিষ্যতে ওই বৃদ্ধ দম্পতির অনুমতি ছাড়া বা পুলিশকে না জানিয়ে পোষ্যপুত্র সাকুউদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী ওই বাড়িতে প্রবেশ করতে পারবেন না। চোখের জল মুছতে মুছতে বাকি জীবন শান্তিতে কাটানোর আশা নিয়ে হাইকোর্ট ছাড়লেন সালাউদ্দিন গাজী। এরপর আর কেউ দত্তক নেবেন কিনা তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
আরও পড়ুন: ছেলের জন্ম সার্টিফিকেট নিতে পুরসভায় যশ-নুসরত