কর্নাটকে বিপুল জয় কংগ্রেসের। মুখ থুবড়ে পড়ল বিজেপি। ১০ মে ভোটের দিন বুথ ফেরত সমীক্ষায় যে পূ্র্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, তাতে ত্রিশঙ্কু ফলাফলের ইঙ্গিত ছিল। কিন্তু শনিবার ফল প্রকাশের পর দেখা গেল, বুথ ফেরত সমীক্ষার চেয়েও অনেক ভালো ভালো ফল করেছে কংগ্রেস। এককভাবে তারা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে। ২২৪ আসনের মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছে ১৩৬টি, বিজেপি ৬৫টি এবং জেডিএস ২৯টি পেয়েছে। অন্যান্যরা পেয়েছে চারটি। কংগ্রেসের ভোটপ্রাপ্তির হার ৪৩ শতাংশ, বিজেপির ৩৬ শতাংশ এবং জেডিএসের ১৩ শতাংশ।
দক্ষিণ ভারতের একমাত্র রাজ্য কর্নাটকে বিজেপি ক্ষমতায় ছিল। তাও আবার ঘুরপথে ক্ষমতা দখল করেছিল তারা। কংগ্রেস এবং জেডিএস জোট ভাঙিয়ে বিজেপি কর্নাটকে সরকার গড়ে। লোকসভা ভোটের ঠিক এক বছর আগে বিজেপির এই ভরাডুবি চিন্তায় ফেলে দিল কেন্দ্রের শাসকদলকে। মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই ইস্তফা দিয়েছেন বিকেলেই। তিনি বলেন, কেন এই বিপর্যয়, খতিয়ে দেখবে দল। আগামিকাল রবিবার কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখান থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর নাম চূড়ান্ত হবে বলে খবর। পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, তা নিয়ে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব মুখ খোলেননি। সিদ্দারামাইয়া নাকি শিবকুমার, তা নিয়ে দলের অন্দরে জল্পনা চলছে। যদিও সকালেই সিদ্দারামাইয়ার ছেলে যতীন দাবি করে বসেন, তাঁর বাবারই মুখ্যমন্ত্রী হওয়া উচিত।
কংগ্রেস এই দাক্ষিণাত্য বিজয়কে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়েছে। দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে বলেছেন, রাজ্যবাসী আমাদের বিরাট দায়িত্ব দিয়েছে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে আমাদের। রাহুল গান্ধী বলেন, এই জয় ঘৃণার বিরুদ্ধে ভালোবাসার জয়। তিনি কর্নাটকবাসীকে অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইটে জয়ের জন্য কংগ্রেসকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কংগ্রেসকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, এরপর বিজেপির বোঝা উচিত, তারা যা করছে, তা ঠিক হচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিজেপির অহংকার, ঔদ্ধত্য, এজেন্সির অপব্যবহার, দুর্বিষহ ব্যবহারের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদের ফসল এই ফলাফল। তবে তৃণমূল নেত্রী কংগ্রেস কিংবা রাহুল গান্ধীর নাম নেননি সাংবাদিক বৈঠকে এবং টুইটে। তিনি বলেন, বিজেপির শেষের শুরু হয়ে গিয়েছে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিযেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও টুইটে কর্নাটকে কংগ্রেসের জয়ের জন্য রাজ্যবাসীকে অভিনন্দন জানান। তিনিও কংগ্রেসের নাম করেননি।
বিজেপি কর্নাটক দ্বিতীয়বারের জন্য দখলে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাতদিনে ১৯টি জনসভা এবং ছটি রোড শো করেছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ছাড়াও একঝাঁক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা কার্যত কর্নাটকে চষে বেরিয়েছেন। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। কাজে দেয়নি মোদি ম্যাজিক। বিজেপি ভেবেছিল, শেষ মুহূর্তে মোদি প্রচারে নেমে বাজিমাত করবেন। কিন্তু দেখা গেল, মোদির ক্যারিশ্মা ফেল করেছে। বিজেপি সেই মেরুকরণের রাজনীতিকে প্রচারে প্রাধান্য দিয়েছে। তাদের ডবল ইঞ্জিন তত্ত্ব কর্নাটকের মানুষ খারিজ করে দিয়েছে।
কংগ্রেস নির্বাচনী ইস্তাহারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ক্ষমতায় এলে তারা বজরং দল এবং পিএফআইকে নিষিদ্ধ করবে। মোদি প্রচারে নেমে বজরং দল নিষিদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাসিঠাট্টা করেছেন। সভাতে তিনি জয় বজরংবলি ধ্বনি তুলে বলেন, কংগ্রেস নাকি বজরংবলিকে নিষিদ্ধ করবে। পাশাপাশি তিনি দ্য কেরালা স্টোরি সিনেমার প্রসঙ্গও তুলে সংখ্যালঘু বিদ্বেষকে কাজে লাগাতে চেয়েছেন। পক্ষান্তরে কংগ্রেস স্থানীয় সমস্যা, মানুষের রুটিরুজির সমস্যা, বিজলি, বেকারি, খাদ্য নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলিকে প্রচারে নিয়ে এসেছিল। রাহুল গান্ধীরা বিশেষ জোর দিয়েছিলেন বিজেপি সরকারের দুর্নীতির উপর। সরকারকে ৪০ শতাংশ কমিশনের সরকার বলে কংগ্রেস প্রচারকে তুঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল। তাতে কাজ দিয়েছে।
২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসের হাতে বিজেপির এই ভরাডুবি বিরোধীদের অক্সিজেন দেবে। বিশেষ করে বিরোধীদের মধ্যে কংগ্রেসের গ্রহণযোগ্যতা আরও বেড়ে গেল কর্নাটকের এই ফলে। যারা ভেবেছিল, কংগ্রেসকে দূরে সরিয়ে রেখেই বিরোধী জোটের সলতে পাকানো যাবে, তারাও এরপর কংগ্রেসকে সমঝে চলবে।