লন্ডন: আর মাত্র একদিনের অপেক্ষা। তারপরই আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তি পাবে প্রিন্স হ্যারির আত্মজীবনী (Autobiography) স্পেয়ার (Spare by Prince Harry)। বইটি হাতে পাওয়ার জন্য অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন দেশ-বিদেশের অগণিত বইপ্রেমীরা (Book Lovers)। তার আগে রবিবার একটি ইন্টারভিউ (Interview) সম্প্রচারিত হয়েছে সে দেশের এক টেলিভিশন চ্যানেলে (TV Channel)। জনপ্রিয় একটি বিট্রিশ সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অনেক কথা বলেছেন ব্রিটেনের রাজপরিবারের (British Royal Family) ছোট যুবরাজ। তিনি এটাই বলেছেন, তিনি বইটি প্রকাশিত করে পরিবারের কোনও সদস্যের প্রতি আঘাত করতে চাননি ইচ্ছাকৃতভাবে। কিন্তু যা ঘটেছে, তা তিনি সবার সমক্ষে আনতে চেয়েছেন। তাই তিনি আত্মজীবনীতে তাঁর অভিজ্ঞতা এবং স্মৃতিকথা (Experience and Memory) পাঠকদের উদ্দেশে তুলে ধরেছেন।
আগামী ১০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হতে চলা বইটিতে তাঁর মা প্রয়াত প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু (Death of Princess Diana) সম্পর্কেও নিজের অনুভূতির কথা জানিয়েছেন হ্যারি। ১৯৯৭ সালে প্যারিসে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় (Car Accident) মারা যান যুবরানী ডায়না। ছোট যুবরাজের বয়স তখন ১২ বছর। মায়ের কফিন (Coffin) নিয়ে যখন বাকিরা হাঁটছেন, তখন তিনি তাঁদের পিছনেই ছিলেন। প্রিন্সেস ডায়নার কফিন যখন কবরস্থ করা হচ্ছে, সে সময়ের টুকরো স্মৃতিতে হ্যারি লিখেছেন, লোকজন ছিল, আরও অন্যান্য অনেক কিছু ছিল, কিন্তু তাঁর সঙ্গে চিরকালের মতো যেটা রয়ে গিয়েছে, তা হল নিস্তব্ধতা আর শূন্যতা।
আরও পড়ুন: Samantha-Shakuntalam : সামান্থা এবার শকুন্তলা
মায়ের মৃত্যু নিয়ে যে গোপন সরকারি ফাইল (Secret Government File) এসেছিল, সেটাও পড়েছিলেন ছোট যুবরাজ। গ্রাফিক্যাল বর্ণনা এবং দুর্ঘটনাস্থলের ছবি (Graphic Descriptions and Photographs of the Scene) দেখেছিলেন তিনি। বড় হওয়ার পর প্যারিসের পন্টে ডে আলমা টানেলে (Pont de l’Alma Tunnel) ড্রাইভারকে দিয়ে গাড়ি ছুটিয়েছিলেন। সেই একই গতিতে, যে গতিতে থাকাকালীন প্রিন্সেস ডায়ানার গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। হ্যারির মতে ওই দুর্ঘটনা সংক্রান্ত অনেক তথ্যই এখনও অজানা রয়েছে। তা নিয়ে অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত। তবে নতুন করে তদন্ত হোক, তা হ্যারি মন থেকে চান না।
বড় ভাই প্রিন্স উইলিয়াম (Prince William) তাঁর গায়ে হাত তুলেছিলেন, সে কথা তো আগেই জানা গিয়েছে। তবে ইন্টারভিউতে আরও কিছু নতুন কথা জানা গিয়েছে। ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময় ছোটভাইকে এড়িয়ে চলতেন বড় যুবরাজ। মার্কিন অভিনেত্রী মেগান মার্কলের (US Actress Meghan Markle) সঙ্গে বিয়ের আগে জোর করে হ্যারির দাড়ি কামিয়ে দিতে চেয়েছিলেন প্রিন্স উইলিয়াম। মাঝখানে খবর রটেছিল, ব্রিটেনের ছোট যুবরানি রাজপরিবার সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করেছেন, বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ এনেছেন (Allegation of Racism)। হ্যারি বলেছেন, এই খবরের কোনও সত্যতা নেই। মেগান কোনওদিনই এই কথা বলেননি। তাঁর স্ত্রী সম্পর্কে রাজপরিবারে একটা পক্ষপাতদুষ্টতা রয়েছে, তার নিষ্পত্তি হওয়া উচিত।
ছোটবেলায় যেরকম অভাবনীয় মানসিক যন্ত্রণার (Mental Trauma) মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি, তার সঙ্গে নিজের মতো করেই লড়াই করেছেন হ্যারি। কোনওরকম থেরাপিও নেননি। প্রিন্সেস ডায়ানা মারা যাওয়ার পর ক্যামিলা পার্কারকে (Camilla Parker) বিয়ে করেন তাঁর বাবা রাজা তৃতীয় চার্লস (King Charles III)। তাতে কোনওভাবেই হ্যারির মত ছিল না। আরও একটি কথা বারবার মনে করে দিতে চেয়েছেন ছোট যুবরাজ। সেটা হল, রাজপরিবার ছাড়ার পর, রাজপরিবারের উপাধি (Royal Title) স্বেচ্ছায় ত্যাগ করার পর, এখন তিনি অনেক খুশি আছেন। এরকম খুশি সম্ভবত তিনি কোনওদিন ছিলেন না। তাঁর বাকি জীবনটা তিনি এভাবেই কাটিয়ে দিতে চান।