কলকাতা: বন সহায়ক (bana sahayak) নিয়োগ নিয়ে রাজ্যের রিপোর্টে খুশি নয় কলকাতা হাইকোর্ট। বন সহায়ক নিয়োগ মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি লোপিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বন সহায়ক নিয়োগে রাজ্য সরকার যদি নিজের বিজ্ঞপ্তিকেই মান্যতা না দেয়, সেক্ষেত্রে আদালত চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না। এর পরই বিচারপতি বন্দোপাধ্যায় রাজ্য সরকারকে ফের রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। বুধবার মামলার শুনানি পর্বে রাজ্যের পক্ষ থেকে ১৭০ জনের মেধা তালিকা (merit list) জমা পড়ে আদালতে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ২১ ফেব্রুয়ারি।
আবেদনকারী সৈয়দ মহম্মদের আইনজীবী শমীক চট্টোপাধ্যায় বলেন, রাজ্যের পক্ষ থেকে যে মেধা তালিকা জমা পড়েছে, সেটি ৩০০ নম্বরের পরীক্ষার ভিত্তিতে নয়, ২০০ নম্বরের পরীক্ষার ভিত্তিতে। পাশাপাশি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বয়সসীমাকেও নিয়োগের ক্ষেত্রে মান্যতা দেওয়া হয়নি। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত বয়সসীমার উপরে ও নীচে থাকা বহু প্রাথীই চাকরি পেয়েছেন। আইজীবীর প্রশ্ন, বিজ্ঞপ্তিতে ৩০০ নম্বরের পরীক্ষার কথা বলা হলেও কেন ২০০ নম্বরে পরীক্ষা নেওয়া হল?
আরও পড়ুন: Suvendu Adhikary: কয়লা ভাইপো কে? জানতে চায় আদালত
সরকারি আইনজীবী পন্টু দেবরায়ের দাবি, ২০২০ সালে করোনার সময় পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম এবং বাঁকুড়াতে ক্যাজুয়াল বন সহায়ক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। করোনার জন্য তিনজন পরীক্ষক পাওয়া যায়নি। দুজন পরীক্ষককে দিয়েই ২০০ নম্বরের পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছিল। বিজ্ঞপ্তিতে সেই বিষয়টিও উল্লেখ রয়েছে। সরকারি আইনজীবীর দাবি, বিজ্ঞপ্তি মেনেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
আদালতের নির্দেশ, রাজ্য সরকারকে ২১ ফেব্রুয়ারি হলফনামা দিয়ে রিপোর্ট পেশ করতে হবে। কেন ৩০০ নম্বরের পরিবর্তে ২০০ নম্বরে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, হলফনামায় তার ব্যাখ্যা থাকতে হবে।
এর আগেও এই মামলায় বন দফতরের ভুমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি। তিনি বলেছিলেন, রাজ্যের দু’রকম তথ্যেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বেনিয়ম রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২০-র ২২ জুলাই বন সহায়ক পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের (contractual recruitment) একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রাজ্যের বন দফতর। এই বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োগে স্বজনপোষণ ও অস্বচ্ছতার অভিযোগে সৈয়দ মহম্মদ আলি সহ একাধিক চাকরিপ্রার্থী মামলা করেন। শুধু বন সহায়ক পদেই নয়, অন্যান্য পদে নিয়োগ নিয়েও অস্বচ্ছতার অভিযোগ ওঠে। সেই সময় বনমন্ত্রী ছিলেন রাজীব বন্দোপাধ্যায়। পরে ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের মুখে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যান রাজীব। তখন ভোটের প্রচারে নেমে বন সহায়ক পদে নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ এনেছিলেন। বিভিন্ন সভায় তাঁর অভিযোগ ছিল, শাসকদল এবং সরকারের উঁচুতলার অঙ্গুলিহেলনেই দুর্নীতি হয়েছে। এ ব্যাপারে কার থেকে কত সুপারিশ এসেছিল, তার প্রমাণও আছে বলে রাজীব দাবি করেছিলেন। পাল্টা রাজীবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তার তদন্তের জন্য বন দফতরকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
বিধানসভা ভোটে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে রাজীব পরাজিত হন। পরে তিনি বিজেপি ছেড়ে আবার তৃণমূলে ফিরে আসেন। এরপর বন সহায়ক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে সরকার আর অগ্রসর হয়নি।