Sunday, August 17, 2025
HomeদেশFourth Pillar | পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন, মোদি শাহ সামলাতে পারবেন?

Fourth Pillar | পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন, মোদি শাহ সামলাতে পারবেন?

Follow Us :

নয়াদিল্লি: সেই কবে সিনিয়র সিটিজেনদের (Senior Citizen) ছাড় বন্ধ করেছে মোদি সরকার (Modi Government), আজও সেই ছাড় ফেরত তো আসেইনি, উল্টে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে ফেরত আসবে না। মোদিজি আসার সঙ্গে সঙ্গেই দলের প্রবীণ নেতাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল মার্গদর্শক মণ্ডলীতে, ক’দিন পরেই দেখা গেছে মার্গ দর্শক মণ্ডলী আসলে বৃদ্ধ নেতাদের অ্যাসাইলাম। একইভাবে সরানো হয়েছিল ইয়েদুরিয়াপ্পাকে, ফলাফল হাতেনাতে। প্রবীণ এই নেতা নির্বাচনের আগেই কাছের লোকজনদের জানিয়েছিলেন, দল ৬৫ পার করলে হয়। মিলে গেছে। বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া রাজস্থানে বাতিলের খাতায়, সামনে রাজ্য সভাপতি চন্দ্রপ্রকাশ জোশি, প্রাক্তন সভাপতি সতীশ পুনিয়া, দুজনের আলাদা আলাদা লবি, দুজনের চোখ মুখ্যমন্ত্রিত্বের কুর্সির দিকে। বাতিল বসুন্ধরা রাজে জেতাতে পারেন কি না জানা নেই, কিন্তু দলকে হারানোর ক্ষমতা রাখেন বই কী। কাজেই রাজস্থানে বিজেপিতে বেজায় অসন্তোষই শেষ পর্যন্ত বিজেপির হারের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াতেই পারে। আপনি বলতেই পারেন যে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলত আর রাজ্যের নেতা শচীন পাইলটের মধ্যেও বিস্তর ঝামেলা চলছে, শচীন পাইলট তাঁর নতুন দল খোলার সিদ্ধান্তের দিকে এগোচ্ছেন বলেই তো মনে হচ্ছে।

সমস্যা হল, শচীন পাইলটের আজ অবধি কোনও কাজ বা কথা বিজেপিকে সমর্থন করছে না উল্টে তাঁর দাবি বসুন্ধরা রাজের সময়ে হয়ে থাকা দুর্নীতির তদন্ত করা হোক। সেক্ষেত্রে তিনি কংগ্রেস থেকে বের হলে আজকের দিনে ক’জন কংগ্রেস নেতা তাঁর সঙ্গে থাকবে? যেটুকু থাকবে তারা তো অশোক গেহলত সরকার বিরোধী ভোটই কাটবে, সেক্ষেত্রে অ্যান্টি ইনকমব্যান্সি ভোট ভাগাভাগি হওয়ার বেশি সম্ভাবনা। নিশ্চিতভাবে দৌসা বা সংলগ্ন এলাকায় শচীন কিছু আসন পাবেন, কিন্তু একমাত্র এক হাং অ্যাসেম্বলি অবস্থাতেই ও ধরনের কিছু আসন নিয়ে দর কষাকষি করা যায়, এটা শচীনও জানেন। তিনি সম্ভবত আগেই আরেকটু দর কষাকষি করছেন, তাঁর অনুগামীদের কিছু বেশি টিকিট ইত্যাদি নিয়ে।  তাঁর বয়স কম, তিনি জানেন যে ধরে খেললে আজ নয় তো কাল তিনিই নেতা। তবুও কংগ্রেসে এই কোন্দল আছে, যা কংগ্রেসের এক ঐতিহ্য বললেও ভুল হয় না। স্বাধীনতার পরের কথা বাদই দিলাম, স্বাধীনতার আগে কংগ্রেসের দুই গোষ্ঠীর মারপিটে মাথা ফেটেছে, ধুতি ছিঁড়েছে। কিন্তু পার্টি উইথ আ ডিফারেন্স বিজেপির মধ্যে রাজ্যে রাজ্যে এই কোন্দল, এই আকচা আকচি মোদি-শাহের জমানাতেই প্রবল হয়ে উঠেছে। একই ছবি ছত্তিশগড়ে, সেখানে রামন সিং মোদি-শাহের গুডবুকে নেই, কিন্তু রামন সিংও বসুন্ধরা রাজের মতনই জেতাতে নাও পারেন, হারানোর ক্ষমতা তো রাখেন, সেখানে নারায়ণ চান্দেল বা রাজ্য সভাপতি অরুণ সাওয়ের চোখ গদির দিকে। ওদিকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রামন সিংয়ের সাহায্য ছাড়া এঁদের কেউই সেই গদিতে বসতে পারবেন না। তেলঙ্গানায় বিজেপির লড়াইটা দ্বিতীয় স্থানে যাওয়ার জন্য, জেতার লড়াইয়ের সময় এখনও আসেনি। তার মানে প্রথম কারণ দলের মধ্যের লড়াই যার জন্য হাতছাড়া হতেই পারে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান আর ছত্তিশগড়। এর পরের কারণ হল যেহেতু রাজ্যে প্রচারের মুখ নেই, সেই নরেন্দ্র মোদিই হয়ে উঠবেন প্রচারের মুখ, সেই জন্যই রাজ্যের অ্যান্টি ইনকমব্যান্সির সঙ্গে যুক্ত হবে কেন্দ্র সরকারের অ্যান্টি ইনকমব্যান্সিও। নরেন্দ্র মোদি রাজস্থানে রাজ্য নির্বাচনের প্রধান মুখ হয়ে উঠলে স্বাভাবিকভাবেই মূল্যবৃদ্ধি বা রেল দুর্ঘটনাও ইস্যু হয়ে উঠবে, উঠছে। তিন নম্বর কারণ হল, ট্রাম্প কার্ডের অতি ব্যবহার। একটাই মুখ ব্যবহৃত হতে হতে হতে এখন একটা সময় তার কার্যকারিতা হারাতে বাধ্য, হারাচ্ছেও। প্রধানমন্ত্রী যখন রাজ্যের নির্বাচনে পাড়ায় পাড়ায় পদযাত্রা করেন, তখন সেই পদের ডিভ্যালুয়েশন হয় বইকী। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, এক বিকেলে উত্তমকুমারের ফোন, হ্যাঁরে তুই ওই হুট বলতে ঝুট সব জায়গায় গিয়ে হাজির হচ্ছিস কেন? মানুষ যদি প্রতিদিন তোকে শেক হ্যান্ড ডিসট্যান্স থেকে দেখে তাহলে তোকে নায়ক বলে মনে করবে কেন? ঠিকই তো, পাড়ার মোড়ে মোড়ে কে ঘুরছে? প্রধানমন্ত্রী। রাস্তায় লিফলেট বিলি করছেন দেশের হোম মিনিস্টার। অতি ব্যবহারের ফলে মোদিজির মুখ কার্যকারিতা হারাচ্ছে। চার নম্বর বিষয় হল জো জিতা ওহি সিকন্দর, যখন কেউ জিততেই থাকে, তখন কোনও প্রশ্ন ওঠে না, ব্যাটসম্যান পিটিয়ে রান আনছেন, কেউ প্রশ্ন করছে না, উনি ব্যাকরণ মেনে ব্যাট চালাচ্ছেন কি না। কিন্তু রান না আসলে, দু’ বার, তিন বার, চারবার আউট হয়ে গেলে? প্রশ্নের পর প্রশ্ন উঠবে। নরেন্দ মোদির, অমিত শাহের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়ে গেছে। এমনকী আরএসএস থেকেও আসছে সতর্কবার্তা। যত হারবে তত বড় হবে এই প্রশ্নের তালিকা। আজ যা নিয়ে অহো অহো রব উঠছে, তা নিয়েই ছি ছি রব উঠবে কাল। মিলিয়ে নেবেন, প্রশ্ন উঠবে এভাবে সিবিআই, ইডিকে ব্যবহার করে বিরোধীদের ভয় দেখানো অনৈতিক ছিল, এসব প্রশ্ন উঠবেই। ইতিমধ্যেই আরএসএস-এর কিছু মানুষের মুখে শুনেছি মোদিমুক্ত বিজেপি চাই, খুবই হাল্কা ছলে, কিন্তু এ সুর ছড়াতে কত সময় নেবে? পাঁচ নম্বর হচ্ছে প্রত্যেকটা রাজ্যের নির্বাচনের সময় একটা কথাতে সাংবাদিক থেকে আম আদমি একশো শতাংশ একমত। প্রত্যেকেই জানেন যে বিরোধীরা যদি খুব কম মার্জিনে জেতে, যদি হাং অ্যাসেম্বলি হয়, তাহলে সরকার কিন্তু শেষমেশ বিজেপির। মানে বিজেপি ম্যানেজ করে নেবে। কেন এরকম ভাবছেন মানুষ বা সাংবাদিকরা? কারণ সেটাই করছে বিজেপি, মোদি, অমিত শাহ। নির্লজ্জভাবে কর্নাটকে, মধ্যপ্রদেশে, মহারাষ্ট্রে, গোয়াতে এরকম সরকার বানাতে আমরা দেখেছি। মানুষ এই অনৈতিক বিষয়টা কি ভুলে গেছেন? মোটেই না। কিন্তু তার থেকেও বড় কথা এই দল ভাঙানো ইত্যাদি সাময়িক সরকার এনে দিলে কী হবে? পরবর্তীতে ভালো রকমের সমস্যা তৈরি করছে। ধরুন মধ্যপ্রদেশের গুনা, সেখান থেকে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া জিতেছেন বহুবার। ২০১৯-এ জ্যোতিরাদিত্যের এক ভক্ত অনুগামী কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে গেলেন, তাঁকেই গুনা আসনে বিজেপি প্রার্থী করল। নাম কৃষ্ণা পাল সিং যাদব। গাড়িতে জ্যোতিরাদিত্য বসে রয়েছেন, বাইরে থেকে ওনার সঙ্গে সেলফি তুলছেন এই কৃষ্ণ পাল সিং যাদব, এমন ছবিও রয়েছে। নির্বাচনে জ্যোতিরাদিত্য হারলেন, প্রায় ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ভোটে জিতলেন কৃষ্ণা পাল যাদব। এবার তিনি কী করবেন? তাঁকে ৬ বারের জেতা গুনা আসন ছেড়ে দেবেন সিন্ধিয়া? ২০২৪ তো দূরে, এখনই সেখানে লড়াই শুরু হয়ে গেছে, কংগ্রেস তাকিয়ে আছে পাকা আমটির দিকে।

আরও পড়ুন: Abhishek Banerjee | মঙ্গলবার সিজিও কমপ্লেক্সে যাচ্ছেন না অভিষেক 

এবং এই সমস্ত বিষয়গুলো মানুষের মাথায় আছে, আছে বলেই মধ্যপ্রদেশের সমীক্ষা বলছে বিজেপি হারছে। মধ্যপ্রদেশের যাবতীয় হাওয়া মোরগের দল কিন্তু ঘুরতে শুরু করে দিয়েছে। জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, বিজেপির প্রবীণ নেতা কৈলাস জোশি, যিনি মধ্যপ্রদেশে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীও ছিলেন, তাঁর ছেলে দীপক জোশি কংগ্রেসে যোগ দিলেন, ক’দিন আগে। আগে নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়লেই অমিত শাহ এসে হাজির হতেন আর বিরাট কনফিডেন্সের সঙ্গে একটা সংখ্যা বলে দিতেন। বাংলায় এসে বলেছিলেন, অব কি বার দুশো পার, দিল্লিতে বলেছিলেন অব কি বার বিজেপি সরকার। কর্নাটকে ১৩০ পাব বলেছিলেন, তার আগে হিমাচলে জয় তো সময়ের অপেক্ষা, একথাও বলেছেন। এবং এখন তিনি নির্বাচন জয়ের সংখ্যা নিয়ে বললে মানুষ ছেড়ে দিন, দলের লোকজনেরাও বিশ্বাস করে না। এবং এরই সঙ্গে গুচ্ছ গুচ্ছ সমীক্ষা আসছে, প্রত্যেকটাই মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান আর ছত্তিশগড়ে বিজেপির জন্য দুঃসংবাদ বয়ে নিয়ে আসছে। মধ্যপ্রদেশে ৬টা সমীক্ষার খবর এই মুহূর্তে আছে। তার মধ্যে একটা তো আরএসএস-এর নিজেদের সমীক্ষায় ২৩০টা আসনের মধ্যে ১০৩টা আসন পেতে পারে বিজেপি, এরকম কথা বলা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে এই সার্ভে ভাইরাল হয়েছে।  কিন্তু কংগ্রেস দলের সমীক্ষা জানাচ্ছে বিজেপি ৯৫টার বেশি আসন পাবে না। এপ্রিল ২০১৩ এ দৈনিক ভাস্করের সমীক্ষা জানাচ্ছে বিজেপি ৭০টা আসনের বেশি পাবে না। এবিপি আনন্দের সমীক্ষা জানাচ্ছে মধ্যপ্রদেশে বিজেপি হারছে। ওই একই সমীক্ষা ছত্তিশগড়ে কংগ্রেসকে এগিয়ে রেখেছে, রাজস্থানেও কংগ্রেস জিতছে বলে জানিয়েছে। সি ভোটারের সার্ভে বলছে রাজস্থানে অশোক গেহলতের কাজে ৬৮ শতাংশ মানুষ খুশি। হ্যাঁ এগুলো ফলাফল নয়, এগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা জানা নেই, কিন্তু মাহল বন রহা হ্যায়। মানুষ বলছে তিন রাজ্যেই আবার ফিরে আসছে কংগ্রেস। নির্বাচন এখনও খানিক দূরে, কংগ্রেস পাকা ঘুঁটি কাঁচিয়ে দিতে ওস্তাদ, এবং বিজেপি হারার আগে হেরে যাবে এটা ভাবাই যায় না, তারাও সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপাবে, অর্থবল নিয়ে তো কোনও কথাই হবে না, তবুও এই তিন রাজ্যের নির্বাচনের হাওয়া যে বিজেপির দিকে বইছে না, সেটা অনায়াসেই বলে দেওয়া যায়।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
PM Modi | দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ের সম্প্রসারণ প্রকল্পের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী, দেখুন সরাসরি
00:00
Video thumbnail
China | Robot Games | চীনে শুরু হচ্ছে বিশ্বের প্রথম হিউম্যানয়েড রোবট গেমস
00:00
Video thumbnail
Trump | ‘ট্রাম্প মাস্ট গো’, হোয়াইট হাউসের বাইরে ট্রাম্প বিরোধী প্রবল বি/ক্ষো/ভ
00:00
Video thumbnail
Rahul Gandhi | Bihar | বিহারে রাহুলের ভোট অধিকার যাত্রা, দেখুন Live
00:00
Video thumbnail
Kishtwar | Jammu-Kashmir | জম্মু কাশ্মীরের কিশতোয়ারে লাফিয়ে বাড়ছে মৃ/তের সংখ্যা, নিখোঁ/জ শতাধিক
06:15
Video thumbnail
Rajabazar Science College | রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে ছাত্রী-হোস্টেলে হঠাৎ ঢুকে পড়ে যুবক, তারপর কী হল?
11:04
Video thumbnail
Trump-Putin | Modi | ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে ভারতের লাভ! আদৌ লাগু হবে অতিরিক্ত শুল্ক? দেখুন বিগ আপডেট
04:31:16
Video thumbnail
India-Russia | Trump | বৈঠকে ট্রাম্পকে মাত পুতিনের, রাশিয়ায় অনড় দিল্লি, দেবে ডিভিডেন্ড?
04:36:01
Video thumbnail
India-Russia | ভারতকে প্রযুক্তিগত সহযোগিতার আশ্বাস রাশিয়ার, ভারতের স্বাধীনতা দিবসে বার্তা পুতিনের
04:36:01
Video thumbnail
China | Robot Games | চীনে শুরু হচ্ছে বিশ্বের প্রথম হিউম্যানয়েড রোবট গেমস
04:20