তেহরান: ইরানে মেয়েদের পড়াশোনা (Women Education) আটকাতে একের পর এক অমানবিক কাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে সেখানকার মৌলবাদীরা। কিছুদিন আগে নারীশিক্ষা বন্ধ করতে বিষ খাওয়ানোর (Poisoning) অভিযোগ ওঠে। তার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার স্কুলে মেয়েদের পড়াশোনা রুখতে বিষাক্ত গ্যাস হামলার (Gas Attacks) অভিযোগ উঠল। ১০৮ জন ছাত্রী বিষাক্ত গ্যাস হামলার শিকার হয়ে শ্বাসকষ্টের সমস্যায় হাসপাতালে ভর্তি বলে খবর।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, গত তিন মাসে বহু ছাত্রী (Students) অসুস্থ হয়ে পড়েছেন গ্যাস হামলায়। বুধবার ইরানের (Iran) আরদাবিল শহর এবং রাজধানী তেহরানে মেয়েদের ১০টি স্কুলে হামলা চালায় মৌলবাদীরা। ইরানের বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের দাবি, বিগত কয়েক মাসে বিষপ্রয়োগের ঘটনায় কমপক্ষে ১,২০০ জন ছাত্রী অসুস্থ হন।
একজন অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে এবং তার দুই বন্ধু বলেছে তারা একটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছে এবং তারপরই বিষাক্ত কটু গন্ধ পেয়েছে। এরপর অনেক ছাত্রী সেখানেই ঢলে পড়ে। স্কুলে পুলিশ ও অ্যাম্বুল্যান্স আসে।
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ইউনুস পানাহি বলেন, এটা সত্যি যে কিছু মানুষ চাইছে সব স্কুল, বিশেষ করে মেয়েদের স্কুল বন্ধ হয়ে যাক।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে হিজাব বিতর্কে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ইরান। মেয়েরা বাড়ির বাইরে বেরলেই হিজাব পরার আদেশ দিয় ইরান সরকার। এই ব্যক্তিস্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদে ইরানের মেয়েরা পথে নেমে আন্দোলন শুরু করেন। এরই মধ্যে ঠিকমতো হিজাব না পরার জন্য মাসা নামে বছর বাইশের এক তরুণীকে অমানবিকভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ ওঠে। এরপর অবস্থা আরও উত্তাল হয়ে ওঠে। মেয়েরা তাঁদের মাথার চুল কেটে ফেলে, গায়ের পোশাক খুলে প্রতিবাদে পথে নামেন। প্রতিবাদী ভূমিকায় দেখা যায় সে দেশের বিখ্যাত ব্যক্তিত্বরাও। প্রতিবাদ রুখতে কঠোর পদক্ষেপ নেয় ইরান সরকারও। একাধিক আন্দোলনকারীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: Meghalaya TMC: মেঘালয়ে সরকার গঠনের সম্ভাবনা জিইয়ে তুলল তৃণমূল, অ-বিজেপি দলগুলির সঙ্গে কথা চলছে
ইরানে কখনও মেয়েদের পোশাক নিয়ে হেনস্তা করা হচ্ছে, কখনও তাঁদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে। আবার কখনও তাঁদের সতীত্ব বা কুমারীত্বের সার্টিফিকেট দেখাতে হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৪১ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ইরানের ক্ষমতায় ছিলেন মোহাম্মদ রেজা পহেলভির সরকার। তাঁর শাসনকালে ইরানে নারীদের উচ্চশিক্ষা, পেশাগত জীবন, ভোটাধিকার, সরকারি দফতরে দায়িত্ব, পুরুষের সমান বেতনের আইন, স্বাস্থ্যসেবা ও সন্তান নেওয়া বা না নেওয়ার অধিকার ছিল। মহিলারা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী পোশাক পরতে পারতেন। তখন নারীদের বিষয়গুলো দেখভালের জন্য মন্ত্রিসভায় পদও রাখা ছিল।
রেজা শাহর শাসনকাল শেষ হওয়ার পর ১৯৭৯ সালে ইরানে নতুন ইসলামি প্রজাতন্ত্র গড়ে ওঠে। ওই ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠে নারীদের নিয়ন্ত্রণ ও দমিয়ে রাখা।