তেহরান: জয় হল আন্দোলনকারীদের, পিছু হটল ইরান সরকার (Iran Government)। নিষিদ্ধ হল ‘নীতি পুলিশ (Morality Police)’। সে দেশের মহিলারা কী ধরনের পোশাক পরবেন, তা নিয়ে ফতোয়া জারি করেছিল ইরান সরকার। আর সেই পোশাকবিধি (Dress Code) যাতে অক্ষরে অক্ষরে পালন হয়, তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল নীতি পুলিশের হাতে। বলা হয়েছিল, ইরানের মেয়েদের হিজাব (Head-Scarf) পরতে হবে। হিজাব ছাড়া প্রকাশ্যে বেরনো যাবে না, এমনকি তা মাথার থেকে কোনওভাবেই নামানো যাবে না। ঠিক মতো পোশাকবিধি না মানলে, পড়তে হবে সাজার কবলে। যা নিয়ে ইরানে তুমুল বিক্ষোভ (Protest) চলছে মহিলাদের। ইরান সরকারের ফতোয়ার বিরুদ্ধে কোনওভাবেই পিছু হটতে রাজি ছিল না সে দেশের মহিলারা। কিন্তু অবশেষে পিছু হটতে বাধ্য হল সরকার। যা নিয়ে উচ্চ্বাসে ফেটে পড়েছেন সে দেশের মহিলারা। একই রকম বিজয় উচ্ছ্বাস এই আন্দোলনকে সমর্থনকারী আন্তর্জাতিক মহলেও।
এই আন্দোলনে মাহসা আমিনি (Mahsa Amini) নামে বাইশ বছরের এক যুবতী মারা গিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর পরই এই আন্দোলন প্রবল রূপ নেয়। মহিলাদের জন্য বাধ্যতামূলক করে দেওয়া পোশাকবিধি না মানায় তথাকথিত নীতি পুলিশ গ্রেফতার করেছিল মাহসাকে। জেলবন্দি (Jail Custody) অবস্থাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। যা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ইরানের মহিলারা। বর্তমানে এই আন্দোলন তৃতীয় মাসে গড়িয়েছে দেখতে দেখতে। মহিলদের উপর গুলি চালিয়ে, আন্দোলনকে সমর্থনকারী প্রখ্যাত ও বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের আটক করেও, এই আন্দোলনকে দমাতে পারেনি ইরান সরকার।
আরও পড়ুন: মেহদি ম্যাজিক, রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে জয়ী বাংলাদেশ
শনিবার ‘আউটলাইনিং দ্য হাইব্রিড ওয়ার ডিউরিং রিসেন্ট রায়টস (Outlining the hybrid war during recent riots)’ নামক একটি অনুষ্ঠানে ইরানের প্রসেকিউটর জেনারেল (Iranian Prosecutor General) মহম্মদ জাফর মন্টাজেরি (Mohammad Jafar Montazeri) নীতি পুলিশকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে (Local Media) তিনি ইরান সরকারের তরফে জানান, নীতি পুলিশের অপারেশন শেষ হয়েছে।
নীতি পুলিশ কেন বন্ধ করে দেওয়া হল, সেই প্রশ্নের উত্তরে মন্টাজেরি জানান, নীতি পুলিশের সঙ্গে বিচারবিভাগের (Judiciary) আর কোনও সম্পর্ক নেই। অতীতে যেখান থেকে এটি শুরু হয়েছিল, সেখান থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হল। তবে, ইরানের মহিলাদের জন্য যে আইন চালু করা হয়েছিল, তা অবসান (Terminate) করা হচ্ছে কিনা, সে নিয়ে পরিষ্কার করে কোনও কিছু জানানো হয়নি। স্পষ্ট করা হয়নি নীতি পুলিশ ইরানে চিরতরে নিষিদ্ধ (Suspend) হয়েছে কিনা!
উল্লেখ্য, ইরান সরকার সে দেশের মহিলাদের জন্য পোশাকবিধি চালু করে হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করা হয়। যথাযথভাবে হিজাব না পরায় নীতি পুলিশ গ্রেফতার করেছিল মাহসা আমিনিকে (Mahsa Amini)। সরকারি রিপোর্টে বলা হয়েছিল, বিদ্যমান কোনও শারীরিক কারণে মৃত্যু হয় তাঁর। কিন্তু মাহসার পরিবারের দাবি ছিল, নীতি পুলিশ তাঁর উপর অকথ্য শারীরিক অত্যাচার চালানোতেই হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। তিনদিন কোমাতে থাকার পর মাহসার জীবনযুদ্ধ থামে। কিন্তু, থেমে যাননি ইরানের মহিলারা। দেশের সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন মহিলারা। অবশেষে ইরান সরকার পিছু হটায় এবং নীতি পুলিশকে নিষিদ্ধ ঘোষণা হওয়াকে আন্দোলনকারীরা মাহসার বিজয় হিসেবে দেখছেন।
ইরানে নীতি পুলিশ এক সময় পরিচিত ছিল গশত-এ এরশাদ (Gasht-e Ershad) নামে, যার ইংরেজি অর্থ হল গাইডেন্স প্যাট্রল (Guidance Patrol)। ২০০৬ সালে এই ইউনিট গঠিত হয়েছিল। শালীনতা এবং হিজাব সংস্কৃতির প্রসারের উদ্দেশ্যে সে দেশের তৎকালীন কট্টরপন্থী রাষ্ট্রপতি মহম্মদ আহমাদিনেজাদ (Mahmoud Ahmadinejad) এটি গঠন করেছিলেন। সেই ইউনিটই এতদিন নীতি পুলিশ হিসেবে কাজ করছিল।