কলকাতা: দহনজ্বালায় যখন দিশেহারা বঙ্গসন্তান, তখন হেঁশেলের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারেও আগুন জ্বলছে। কারণ মাসকাবারির সামগ্রীসহ আনাজপাতি (Fresh Vegetables) থেকে বাঙালির মৎস্যমুখেও (Fresh Fish) লেগেছে টান। প্রকৃতির রুদ্ররূপের মতো বাজারে পা রাখলেই তপ্তপ্রদাহে শিরদাঁড়া বেয়ে জ্বলুনির স্রোত বয়ে যাচ্ছে। ডাল-ভাত খাওয়ার কথা ভাবলেও চালের (Price of Rice) দাম এখন আগুন। ডাল তো তথৈবচ। কয়েক মাসের মধ্যে মধ্যবিত্তের (Middle Class Family) নাগালের মধ্যে চালের দাম নয় নয় করে ৫০ পেরিয়ে গিয়েছে। ডাল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে। সরষের তেল (Mustard Oil) ও রিফাইন্ড তেল (Refined Oil) তো ডাবল সেঞ্চুরি দোরগোড়ায়। ফলে, বাজারে গেলেই অগ্নিমূল্যের (Price Hike) আগুনে ছারখার হচ্ছে আমবাঙালির পকেটবাবাজি।
একে রমজান মাস, তার দোসর মাছের অফসিজন। গ্রীষ্মকালের পুকুর-ভেড়ির জলছেঁচা হয়। অর্থাৎ মাছের প্রজনন সময়ের শেষে পুরনো জল ফেলে দিয়ে নতুন জল ভরে তাতে চারা মাছ ছাড়ার এটাই সময়। তাই দেশীয় মাছ এ সময়টায় বিলুপ্তপ্রায় হয়ে যায়। অন্যদিকে, রমজান মাস চলায় বহু বা বলা যায় অধিকাংশ মাছচাষি ও সবজি চাষি এবং বিক্রেতা মুসলিম সম্প্রদায়ের হওয়ায় উৎপাদন ও জোগানেও ঘাটতি দেখা যায়। তার উপর যা গরম পড়েছে, সবজি খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে আমসি হয়ে যাচ্ছে বলে অনেকে বাজারেও আসছে না। মাছের ক্ষেত্রেও ছোট ব্যাপারিরা বরফের জোগান দিয়ে মাছ বিক্রি করতে গিয়ে দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে। সব মিলিয়ে আঁশবঁটিতে রোজ ফালাফালা হচ্ছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরাই।
আরও পড়ুন: Weather Forecast | বৃষ্টির আগমনী বার্তা, আজ থেকেই রূপবদল প্রকৃতির
সেকারণেই যে কোনও বাজারে গেলে দেখা যাবে, দেড় কেজি থেকে ২ কেজির কাটা পোনা (রুই) ৩০০ টাকা। কাতলা হলে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। এর থেকে বড় সাইজের কাটা মাছ গড়পরতা সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। গোটা রুই ২০০ টাকা (ছোট সাইজের) এবং ওই মাপের গোটা কাতলা ২৮০-৩৫০ টাকা। যেহেতু ভেড়ি জল ফেলে দেওয়া হয় এই সময়, তাই এখন হাইব্রিড কই মাছ পাওয়া যাচ্ছে। যা ৫৫০-৬০০ টাকায় মিলছে। প্রমাণ সাইজের দেশি কই ৭৫০-৮০০ টাকা। একই কারণে মাগুর মাছও বাজারে উঠছে। সাধারণ সাইজের মাগুরই ৮০০ টাকা। যদিও অনেক বাঙালি প্রবল গ্রীষ্মের সময় কই-মাগুর জাতীয় জিওল মাছ কেনেন না।
মাসের ১৫ তারিখের পরেই সংসারের ব্যাঙ্কে টান পড়ে। তখন দুচোখের মণি হয়ে ওঠে তেলাপিয়া। অরিজিনাল তেলাপিয়া ২০০-২২০ টাকা। তেলাপিয়ার ভায়রা ভাই নাইলনটিকার কৌলীন্য একটু কম। তাই ১৬০-১৮০ এমনকী বড় সাইজের হলে ডাবল সেঞ্চুরি ছুঁয়ে ফেলেছে। খুবই স্বাদু, অনেকে আবার খান না, সেই গুলে মাছও অভিজাত মাছের তালিকায় উঠে এসে ৮০০ টাকা দর হাঁকিয়েছে। শোল ৪০০-৪৫০, ট্যাংরা সব থেকে কমে হলেও ৫০০। ছোট ট্যাংরা ৪৫০, পাবদা ৪০০-৫০০, ছোট পাবদা ৪০০, বাগদা চিংড়ি (সাইজ অনুযায়ী) ৭০০-৯৫০ টাকা, চাবরা চিংড়ি ৪০০-৪৫০, পমফ্রেট বড় ৯০০, ছোট ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা।
মাছ না খেলে বাঙালির খাওয়া হয় কিন্তু ঢেঁকুর ওঠে না। কিন্তু এই বাজারে যে একটু ঘাসপাতা খেয়ে থাকবেন তারও উপায় নেই। সবজির মধ্যে পটল ৫০, ঝিঙে ৫০-৮০, টম্যাটো ৩০-৪০, ঢেঁড়স ৪০, কাঁচা আম ৪০-৬০, উচ্ছে ৫০, বেগুন ৬০, কুমড়ো ৩০, কাঁচা লঙ্কা ১২০ টাকা কেজি। আর পাতিলেবু তো এখন সোনার মতো দামি। গুলি খেলার গুলির মতো সাইজের লেবুও ৫ টাকা পিস। শশা ৬০ টাকা গড়ে বাজার অনুযায়ী হেরফের হতে পারে।
সব শেষে বলা যায়, খবরদার ডাক্তারদের পরামর্শ শুনে ফলের দোকানের দিকে পা মাড়াবেন না। হিটস্ট্রোক হতেই পারে।