কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার উত্তরসূরি হিসেবে এআইএডিএমকে’র (AIADMK) ক্ষমতা কুক্ষিগত করতেই ‘দলবিরোধী’ কার্যকলাপের দায়ে বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা ও পন্নিরসেলভামকে (OPS) বহিষ্কার করলেন নতুন সুপ্রিমো ইডাপড্ডি কে পালানিস্বামী (EPS)। সোমবার সকাল থেকে তামিলনাড়ুর রাজনীতি এই দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে উত্তাল হয়ে ওঠে। তারপরই এআইএডিএমকের সদর কার্যালয়ের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তামিলনাড়ুর রাজস্ব দফতর জয়ললিতার দলের অফিস সিল করে দিয়েছে, যাতে পরিস্থিতি আর বিগড়ে না যায়।
এদিন সাধারণ পরিষদের বৈঠকে প্রায় আড়াই হাজারের বেশি সদস্যের সমর্থন নিয়ে পালানিস্বামীর হাতেই দল পরিচালনার নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হয়। এরপরেই এআইএডিএমকেতে দ্বৈত নেতৃত্ব যুগের অবসান ঘটিয়ে দেওয়া হয়। ইপিএসের দীর্ঘদিনের শত্রু ওপিএসকে দলবিরোধী কাজের অভিযোগে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁকে ছাড়াও আরও ৩ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ইপিএস এবং তাঁর অনুগামীদের অভিযোগ, ওপিএস বাহিনী ডিএমকে সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। তারা সরকারপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশ করে এআইএডিএমকে দলকে দুর্বল করছে। বহিষ্কারের সিদ্ধান্তকে অগণতান্ত্রিক উল্লেখ করে ওপিএস বলেন, তাঁকে দলের কোঅর্ডিনেটর পদে বসিয়েছেন দেড় কোটি কর্মী। ইপিএস কিংবা তাঁর সহকারী নেতাদের কোনও অধিকার নেই তাঁকে বহিষ্কার করার। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাচ্ছেন তিনি।
এদিন প্রত্যাশামতোই ই পালানিস্বামী (EPS) অল ইন্ডিয়া আন্না দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাজাঘাম’এর (AIADMK) অন্তর্বর্তী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সোমবার সকালে মাদ্রাজ হাইকোর্টের নির্দেশের পর দলের দুই গোষ্ঠীর হাতাহাতি বাধে। ব্যাপক ঝামেলার মধ্যেও শেষমেশ সাধারণ পরিষদ ১৬টি প্রস্তাবই পাশ করিয়ে নেয়। যার মধ্যে অন্যতম ছিল— ইপিএসকে দলের অন্তর্বর্তী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করা। এছাড়াও আগামী ৪ মাসের মধ্যে দলের স্থায়ী সাধারণ সম্পাদক পদের নির্বাচন করা হবে বলেও প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। একইসঙ্গে কোঅর্ডিনেটর ও যুগ্ম কোঅর্ডিনেটর পদ দু’টির অবলুপ্তি ঘটানোর প্রস্তাবও গৃহীত হয়েছে।
মাদ্রাজ হাইকোর্টের সবুজ সংকেত পেয়ে এদিন সকালেই এআইএডিএমকে’র বিতর্কিত সাধারণ পরিষদের বৈঠক হয়। তার আগে এই বৈঠককে কেন্দ্র করে তুলকালাম কাণ্ড বেঁধে যায়। প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা তথা তামিলনাড়ুর প্রাক্তন শাসকদলের দুই শিবিরে তুমুল মারামারি, হাতাহাতি লাগে প্রধান কার্যালয়ের বাইরে। প্রাক্তন মন্ত্রী ও পন্নিরসেলভাম (OPS) গোষ্ঠীর আর্জি মাদ্রাজ হাইকোর্ট নাকচ করে দেওয়ার পরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পন্নিরসেলভাম গোষ্ঠী উচ্চ আদালতে সাধারণ পরিষদ বৈঠক স্থগিত রাখার আবেদন জানিয়েছিল। কারণ এই বৈঠকে অন্তর্বর্তী সাধারণ সম্পাদক পদটিকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা এবং কোঅর্ডিনেটর ও যুগ্ম কোঅর্ডিনেটর পদ দু’টির অবলুপ্তি ঘটানোর প্রস্তাব আনা হয়। সেটা আঁচ করেই পন্নিরসেলভেমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
দলের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে পন্নিরসেলভামকে বনাগারমের একটি বেসরকারি হলে আসার আমন্ত্রণ জানানো হলেও, তিনি এবং তাঁর অনুগামীরা রোয়াপিট্টার সদর কার্যালয়ে ঢোকার চেষ্টা করতেই দু’পক্ষে সংঘর্ষ বাধে। ওপিএস গোষ্ঠী সেখানে আসছে খবর পাওয়া মাত্রই ইপিএস গোষ্ঠীর সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ বাধে। লাঠিসোঁটা, পাথর ছোড়া এমনকী ধারালো অস্ত্র নিয়ে একে অপরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন গুরুতর জখম হন। বেশ কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। তাতেও দমানো যায়নি ওপিএসকে। পুলিস নিয়ে তিনি সদর কার্যালয়ের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকেন। সেখানে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দলের পতাকা উড়িয়ে দেন। তখনও বাইরে খণ্ডযুদ্ধ চলছে।