Sunday, August 3, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar: মৎস্যপুরাণ ও এক ভাঁড়ের গল্প

Fourth Pillar: মৎস্যপুরাণ ও এক ভাঁড়ের গল্প

Follow Us :

মাছ নিয়ে কথা বলব, কারণ গুর্জরবাসী এক অর্বাচীন বাঙালির মাছ খাওয়া নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করেছেন। সে কথায় আসব, তার আগে মাছ নিয়ে কিছু কথা। মাছ মানেই আমিষ? গুজু মেড়ো খোট্টা উড়ে ইত্যাদি অপশব্দ ব্যবহার না করেও বলা যায়, আমিষ নিরামিষ খাবারের বিভাজন যাঁরা করেছেন, তাঁরা হিন্দুশাস্ত্র, পুরাণ তেমনভাবে পড়েননি, এবং কে না জানে মূর্খদের যে কোনও বিষয়ে কথা বলার এক সহজাত প্রবণতা থাকে। আমাদের অসংখ্য পুরাণের অন্যতম বৃহদ্ধর্মপুরাণে বলা আছে, ইলিশ খলিশ্চৈব ভেটকি মদগুর এব চ। রোহিতো মৎস্যরাজেন্দ্র পঞ্চমৎস্য নিরামিষাঃ। মানে ইলিশ, খলশে, ভেটকি, মাগুর এবং রুই মাছ নিরামিষ গোত্রেই পড়ে। অনেকে আবার এই শ্লোকের আরও গূঢ় অর্থ বার করে বলেন, এখানে ইলিশ গোত্রের মাছ, মানে মোহনার মাছ, ভেটকি মানে ভরা সমুদ্রের মাছ, মাগুর মানে জিওল মাছ, খলশে মানে ছোট চুনো মাছ আর রুই মানে কার্প গোত্রের, রুই, কাতলা, মৃগেল ইত্যাদির কথা বলা হয়েছে। তার মানে বিরাট মৎস্য সম্ভার আসলে নিরামিষ বলেই জানানো হয়েছে। কী কাণ্ড বলুন তো, এই পুরাণ অনুযায়ী এই বাংলার ৫০-৬০ শতাংশ মানুষ নিরামিষভোজী। অবশ্য তাতে কীই বা এসে যায়, নিরামিষ যখন হয়ে ওঠে এক আগ্রাসী রাজনৈতিক হাতিয়ার, তখন এসব যুক্তিতে তো কাজ হয় না। আর সবচেয়ে বড় কথা আমি মাছ খাব না মাংস খাব, তা নিয়ে তুমি বলার কে হে? ভাত দেওয়ার মুরোদ নেই কিল মারার গোঁসাই? ওই গুর্জর ভাঁড় মঙ্গলকাব্য পড়েছেন? পড়া তো দূরস্থান, এমন কিছু আছে বলেও কি জানেন, যা আমাদের ঘরে নিত্য পাঠ হয়। সামনে নারায়ণশিলা রেখে পুরুত ঠাকুর পড়েন, বাচ্চা, বুড়ো, মহিলারা শোনে, সেই মঙ্গলকাব্য। তো মঙ্গলকাব্যের রচয়িতা অনেকে, তার মধ্যে দ্বিজ বংশীদাসের মনসামঙ্গলে কই মাছ রান্নার পদ্ধতিও দেওয়া আছে। “বড়ো বড়ো কই মৎস্য, ঘন ঘন আঞ্জি, জিরা লঙ্গ মাখিয়া তুলিল তৈলে ভাজি”। কেবল কই? পাবদা, রুই মাছের কথাও আছে, “পাবদা মৎস্য দিয়া রান্ধে নালিতার ঝোল। পুরান কুমড়া দিয়া রান্ধে রোহিতের ঝোল।” নালিতা শাক বা পাট শাক দিয়ে পাবদা মাছ, বেসন সর্বস্ব কড়ি নয়। জালালুদ্দিন ফতেহ শাহ তখন বাংলার নবাব, বিজয় গুপ্ত লিখলেন আরেক মনসামঙ্গল, সেখানেও আছে মাছ রান্নার কথা— 
“রান্ধি নিরামিষ হল হরষিত।
মৎস্যের ব্যঞ্জন রান্ধে হয়ে সচকিত।
মৎস্য মাংস কুটিয়া থুইল ভাগ ভাগ।
রোহিত মৎস্য রান্ধে কলতার আগ।
মাগুর মৎস্য দিয়া রান্ধে থিমা গাচ গাচ।
ঝাঁঝ কটু তৈলে রান্ধে খরসুল মাছ।
ভিতরে মরিচ গুঁড়া বাহিরে জড়ায় সূতা।
তৈলে পাক করি রান্ধে চিংড়ির মাথা।“
মানে নিরামিষ রাঁধার পর আনন্দিত সেই পাচক এবার মাছ রান্না শুরু করলেন। বাঙালির এই মৎস্যপ্রেম কেন? ঈশ্বর গুপ্ত সেই কবেই লিখে গেছেন তার কারণ, “ভাত-মাছ খেয়ে বাঁচে বাঙালি সকল। ধানে ভরা ভূমি তাই মাছ ভরা জল।” ভৌগোলিক কারণেই আমাদের খাবারে চলে এসেছে মাছ ভাত। ঈশ্বরী পাটনি যখন অন্নদার কাছে প্রার্থনা করছেন, আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে, তখন এই বাংলার মা বোনেরা প্রার্থনা করেন, আমার সন্তান যেন থাকে মাছে ভাতে। এটাই বাঙালি। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেবী চৌধুরানি ওই গুর্জর ভাঁড়ের পড়ে ওঠার কথা নয়। গুরু ভবানী পাঠক, মেনে নিচ্ছেন, আপাত বিধবা প্রফুল্লের মাছ খাওয়া, সেই অংশটা পড়ে শোনাই, “প্রথম বৎসর তাহার আহারের জন্য ভবানী ঠাকুর ব্যবস্থা করিয়াছিলেন— মোটা চাউল, সৈন্ধব, ঘি ও কাঁচকলা। আর কিছুই না। নিশির জন্য তাই। প্রফুল্লের তাহাতেও কোন কষ্ট হইল না। মার ঘরে সকল দিন এত জুটত না। তবে প্রফুল্ল এক বিষয়ে ভবানী ঠাকুরের অবাধ্য হইল। একাদশীর দিন সে জোর করিয়া মাছ খাইত- গোবরার মা হাট হইতে মাছ না আনিলে, প্রফুল্ল খান, ডোবা, বিল, খালে আপনি ছাকা দিয়া মাছ ধরিত; সুতরাং গোবরার মা হাট হইতে একাদশীতে মাছ আনিতে আর আপত্তি করিত না।” আর পাঁচ বছরের মাথায় ওই ভবানী পাঠক প্রফুল্লর খাওয়াদাওয়াতে কোনও বাধা নিষেধ রাখলেন না। কে ছিলেন এই ভবানী পাঠক? এক নিষ্ঠাবান চিৎপাবন ব্রাহ্মণ। এটাই তো আমাদের দেশ, এটাই তো আমাদের সমাজ। যে দেশে কালিদাস রচনা করেন অভিজ্ঞানম শকুন্তলম। তার ক্লাইম্যাক্স-এ এক জেলে মাছ ধরে কাটার পরে পেট থেকে পায় সেই অভিজ্ঞান, সেই চিহ্ন, যে আংটি রাজা দুষ্মন্ত দিয়েছিলেন শকুন্তলাকে। সেই আংটি পাওয়ার পরেই রাজা দুষ্মন্তের মনে পড়ে যায় শকুন্তলাকে। হ্যাঁ, তখনও জেলে ছিল, মাছের বাজার ছিল, মাছ বিক্রি হত। আমাদের দুই পুরাণ কাহিনি রামায়ণ আর মহাভারত। রামায়ণে জনকের বাড়িতে রাম-সীতার বিয়ের অনুষ্ঠানে মাছ রান্নার কথা আছে। আর মহাভারতে অর্জুনের লক্ষ্যভেদ, দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভায় মাছের চোখে তির বিদ্ধ করতে হবে, এটাই তো ছিল শর্ত। মাছ আমাদের সাহিত্যে এসেছে, মাছ আমাদের ধর্মে এসেছে, মাছ এসেছে পুরাণে, মঙ্গলকাব্যে। তা এসেছে কারণ মাছ এক সুষম খাবার, সহজে প্রোটিন পাওয়া যায়, এমন খাবার। হতেই পারে তা কারও নাপসন্দ, তাই বলে মাছ নিয়ে ভাঁড়ামো, মাছ খাওয়াকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা, আমরা, বিশেষ করে বাঙালিরা সহ্য করব কেন? এ বাংলায় নতুন বউ যখন শশুরবাড়িতে ঢোকে, তখন তাকে বরণ করা হয়, তার বাঁ হাতে দেওয়া হয় একটা জান্ত ল্যাটা মাছ, নতুন বউকে সেই ল্যাটা মাছ ছেড়ে দিতে হবে বাড়ির লাগোয়া পুকুরে, এ আমাদের বাঙালি বিয়ের রীতি, শহরে পুকুর নেই, তাই এক গামলা জলে সেই ল্যাটা মাছ খেলা করে। বাঙালি বিয়ের গায়ে হলুদে পাত্র বাড়ির থেকে আসে হলুদ মাখানো রুই মাছ, সেই মাছ রান্না হয়, মুড়ো থাকে কনের জন্য, গুর্জর ভাঁড় এ সামাজিকতা জানেন না। আমাদের বাড়ির সন্তানদের ঘুমপাড়ানোর ছড়া “আয় আয় চাঁদ মামা টি দিয়ে যা, ধান ভানলে কুঁড়ো দেব, মাছ কাটলে মুড়ো দেব, চাঁদমামা খোকার কপালে টি দিয়ে যা।” কিংবা খোকা যাবে মাছ ধরতে ক্ষীর নদীর কূলে, ছিপ নিয়ে গেল কোলা ব্যাঙে মাছ নিয়ে গিলে চিলে। ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গলে কত রকমের মাছের নাম রয়েছে, যা খাওয়া হত—
‘চিতল ভেকুট রুই কাতল মৃগল 
বানি লাঠা গড়ই উল্কা শউল শাল
পাঁকাল খয়রা চাঁদা তেচক্ষা এলেঙ্গা
গুঁতিয়া ভাঙন রাগি ভোলা ভোলচেঙ্গা।
মাগুর গাগড় আরি বাটা বাচা কই
কালবসু বাঁশপাতা শঙ্কর ফলুই
শিঙি ময়া পাবদা বোয়ালি ডানিকোণা
চিংড়ি, ট্যাংরা পুঁটি চান্দা গুঁড়া লোনা
গাঙ্গদারা ভেঙ্গা চেঙ্গ কুড়িশা খালিশা
খরশুলা তপসিয়া পাঙ্গাস ইলিশা
কত মাছ এখন আর পাওয়াই যায় না। কিন্তু ছিল, মাছে ভাতে বাঙালির জীবনে এত শত মাছ ছিল। ডঃ বিধানচন্দ্র রায়, যাঁকে সাক্ষাৎ ধন্বন্তরি বলা হত, তিনি বলতেন যদি কেউ ভাতের সঙ্গে একবাটি মাছের ঝোল খায়, তার অন্য কিছু খাবার দরকার হয় না। রবি ঠাকুরের চোখের বালিতে এই মাছের ঝোলের কথা আছে, বিহারী আর মহেন্দ্রর ভুল বোঝাবুঝি ভাঙার পরে রাজলক্ষী দুজনকে বসিয়ে মাছের ঝোল রান্না করে খাইয়েছিলেন, এটাই ছিল তাঁর শেষ সাধ, তারপর তিনি মারা যান। স্বামী-শিষ্য সংবাদ, ১৮৯৮ সন, শিষ্য শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী স্বামিজীকে জিজ্ঞেস করছেন, অনেকের চক্ষে ব্যাভিচারাদির পাপ অপেক্ষাও যেন মাছ মাংস খাওয়া বেশি পাপ, এই মতটা কোথা হইতে আসিল? স্বামীজী জবাবে বললেন, “কোত্থেকে এল তা জেনে তোর দরকার কী? তবে ওই মত ঢুকে যে তোদের সমাজের ও দেশের সর্বনাশ সাধন করছে তা তো দেখতে পাচ্ছিস? দেখ না, তোদের পূর্ববঙ্গের লোক খুব মাছ মাংস খায়, কচ্ছপ খায়, তাই তারা পশ্চিমবঙ্গের লোকের চেয়ে সুস্থ শরীর। শুনেছি, পূর্ববঙ্গের পাড়াগেঁয়ে লোকে অম্বলের ব্যারাম কাকে বলে তা বুঝতেই পারে না।” শিষ্য স্বামীজীর কথায় সায় দিয়ে যখন বলেন যে, দেশে আমরা দু’ বেলাই মাছ ভাত খাইয়া থাকি। তখন বিবেকানন্দ বলেন, তা খুব খাবি, ঘাসপাতা খেয়ে পেটরোগা বাবাজীর দলে দেশ ছেয়ে ফেলেছে। শিষ্য জিজ্ঞেষ করেন, কিন্তু মহাশয়, মাছ মাংস তো রজোগুণ বাড়ায়, তখন স্বামীজী বলেন, আমি তো তাই চাই, দেশের যে সব লোককে এখন সত্ত্বগুণী বলে মনে করছিস, তাদের ভেতর ১৫ আনা লোকই হল ঘোর তমভাবাপন্ন।”
আমাদের সামনে সেসব তমভাবাপন্ন মানুষের চেহারা আজ পরিষ্কার, তাদের নিজেদের খাদ্যাভ্যাস অস্বাস্থ্যকর, কিন্তু তারা অন্যদের খাবার নিয়ে কটু কথা বলে। এবার বলেছেন গুর্জরবাসী পরেশ রাওয়াল। কেবল মাছ রান্না বা খাওয়া নিয়েই নয়, মাছ খেলেই সে বাংলাদেশি হয়ে যায়, এটাও তেনার ধারণা। আগে গরু খাওয়া নিয়ে বলছিলেন, এবার মাছ খাওয়া নিয়ে বলছেন। এরপর, অন্তত আমার, বমি উঠে আসা গট্টে অ্যা সবজি খাওয়া বাধ্যতামূলক করবেন। আসলে যে যেমন পরিবেশে মানুষ হয়েছে। আমাদের এই বাংলায় আমিষ ছেড়েই দিন, নিরামিষ রান্নার আয়োজন দেখলে ওনাদের চোখ কপালে উঠবে। আমরা খাবারে ধর্ম মেশাইনি, আমাদের অন্নদামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল থেকে রবি ঠাকুর, বঙ্কিম সেই কথাই বলে গেছেন। আমাদের লখিন্দর বেহুলার বিয়ের মেনুতে থাকে ১৫ পদের মাছ, হ্যাঁ ইলিশও ছিল। আমাদের ছেড়ে দিন, ওই গুজরাটেই আছে সিন্ধিরা, তাদের বাড়িতে জামাই এলে ইলিশ মাছ মাস্ট। শেষ করি এক তথ্য দিয়ে, গুজরাটের সামান্য যে মোহনা অঞ্চল আছে সেখানেও ইলিশ মাছ পাওয়া যায়, গুজরাটে স্ত্রী ইলিশকে বলে মদেন, আর পুরুষ ইলিশের নাম পালওয়া। অমন বিস্বাদ ইলিশ দুনিয়াতে আর কোথাও নেই। প্রকৃতিও তাঁর বুদ্ধি আর অভিজ্ঞতা থেকেই গুর্জরবাসীদের ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত করেছেন, যে ইলিশকে বাঙালি বলে জলের রুপোলি শস্য। বুদ্ধদেব বসু লিখছেন,
“রাত্রি শেষে গোয়ালন্দে অন্ধ কালো মালগাড়ি ভরে
জলের উজ্জ্বল শস্য, রাশি রাশি ইলিশের শব
নদীর নিবিড়তম উল্লাসে মৃত্যুর পাহাড়।
তারপর কলকাতার বিবর্ণ সকালে ঘরে ঘরে
ইলিশ ভাজার গন্ধ; কেরানীর গিন্নির ভাঁড়ার
সরস সর্ষের ঝাঁজে। এল বর্ষা, ইলিশ উৎসব।“
এই মাছে ভাতে বাঙালির মাছ খাওয়া নিয়ে একটা অসংলগ্ন বাক্য, কোনও পাগলের প্রলাপ, কোনও শয়তানি বয়ান আমরা সহ্য করব না।  

 

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
জনতা যা জানতে চায় | বিহার বাহানা, বাংলা নিশানা?
00:00
Video thumbnail
Calcutta High Court | দিঘায় রো/হি/ঙ্গা বিরোধী মিছিলের অনুমতি শুভেন্দুকে, মানতে হবে কোন কোন শর্ত?
00:00
Video thumbnail
Rahul Gandhi | রাহুল গান্ধীর রাজনৈতিক অ্যা/টম বো/ম, 'দেশ চালাচ্ছে অ/বৈ/ধ সরকার'
00:00
Video thumbnail
Durgapur Incident | দুর্গাপুর কাণ্ডে ধৃ/তদের আদালতে পেশ, কী নির্দেশ?
00:00
Video thumbnail
Asansol | landslide | আসানসোলে ভয়াবহ ধস, আ/ত/ঙ্কিত সাধারণ মানুষ, দেখুন কী অবস্থা
05:14
Video thumbnail
Abhishek Banerjee | বিগ ব্রেকিং, ইন্ডিয়া জোটের নৈশভোজে যোগ দেবেন অভিষেক
03:22
Video thumbnail
জনতা যা জানতে চায় | বিহার বাহানা, বাংলা নিশানা?
02:31:26
Video thumbnail
Donald Trump | 'ভারত মৃ/ত অর্থনীতির দেশ' বি/স্ফো/রক ট্রাম্প, ট্রাম্পের মন্তব্যে কড়া সমালোচনা
03:36:01
Video thumbnail
Calcutta High Court | দিঘায় রো/হি/ঙ্গা বিরোধী মিছিলের অনুমতি শুভেন্দুকে, মানতে হবে কোন কোন শর্ত?
11:09:06
Video thumbnail
জনতা যা জানতে চায় | বিহার বাহানা, বাংলা নিশানা?
09:00:54

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39