কলকাতা: হেফাজতে থাকাকালীন ইডির (ED) অফিসাররা তাঁর উপর অকথ্য অত্যাচার করেছেন বলে অভিযোগ করলেন নিয়োগ কাণ্ডে (Recruitment Scam) ধৃত কুন্তল ঘোষ (Kuntal Ghosh)। বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল (TMC) নেতা কুন্তলের একটি চিঠি প্রকাশ্যে এসেছে। ১ এপ্রিল হেস্টিংস থানার (Hastings Police Station) ইনস্পেক্টর ইনচার্জকে (Inspector Incharge) লেখা ওই চিঠির ছত্রে ছত্রে বলা হয়েছে, বিজয় কুমার নামে ইডির এক অফিসার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) নাম বলানোর জন্য তাঁর উপর কেমন অত্যাচার চালিয়েছেন। অফিসাররা তাঁকে অশ্রাব্য গালিগালাজও করেছেন। অভিষেকের নাম না বলায়। চিঠিতে কুন্তলের অভিযোগ, বারবার তাঁর উপর নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে অভিষেকের নাম বলার জন্য। বলতে না চাইলেই মারধর করা হয়েছে। তবে শত অত্যাচার সত্ত্বেও তাঁর মুখ দিয়ে অভিষেকের নাম বলাতে পারেননি ইডির অফিসাররা। কুন্তলের আরও দাবি, ওয়াসিম আক্রম নামে ইডির এক অফিসার অবশ্য তাঁর সঙ্গে খুবই ভালো ব্যবহার করেন।
জেলবন্দি এই যুব তৃণমূল নেতার চিঠিকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এর আগেও আদালতে যাতায়াতের পথে কুন্তল সাংবাদিকদের কাছে ইডির হেনস্তা নিয়ে একাধিকবার মুখ খোলেন। তিনি দাবি করেন, অভিষেকের নাম বলানোর জন্য তাঁকে চাপ দিয়েছিলেন ইডির অফিসাররা। গত ২৯ মার্চ শহীদ মিনার ময়দানের সমাবেশে অভিষেক বলেন, সারদা মামলায় কুনাল ঘোষ, মদন মিত্ররা যখন গ্রেফতার হন, তখনও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অফিসাররা আমার নাম বলার জন্য তাঁদের চাপ দিয়েছিলেন। এর থেকেই বোঝা যায় ইডি-সিবিআইকে বিজেপি রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগান। অভিষেক ওই কথা বলার পর থেকেই আদালতে যাতায়াতের পথে প্রায়ই কুন্তল অভিযোগ করতেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বলার জন্য তাঁকে জোর করা হত। কিন্তু এতদিন তিনি শারীরিক অত্যাচারের অভিযোগ করেননি ইডির বিরুদ্ধে।
হেস্টিংস থানাকে লেখা কুন্তলের যে চিঠি প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে ইডি অফিসারদের নাম ধরে ধরে তিনি তাঁদের বিরুদ্ধে শারীরিক অত্যাচারের বিবরণ দিয়েছেন। অভিষেকের নাম না বললে তাঁর স্ত্রীকে ফাঁসানো হবে, তাঁকে ২১ বছর জেলে রেখে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দিতেন অফিসাররা, এমন অভিযোগও করেন কুন্তল। চিঠির বয়ান অনুযায়ী, কুন্তলের কাছে বারবার জানতে চাওয়া হয়, তিনি কাকে কত টাকা দিয়েছেন।
এর আগে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারককেও কুন্তল ইডি-সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে তিন পাতার চিঠি পাঠিয়েছেন। হেস্টিংস থানায় পাঠানো হয়েছে পাঁচ পাতার চিঠি। প্রেসিডেন্সি জেলের সুপারের মাধ্যমে ইমেল মারফত ওই চিঠি পৌঁছয় হেস্টিংস থানায়। এ ব্যাপারেই কলতাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ইডি। বুধবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে আবেদন করে ইডি। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, কুন্তল ঘোষের চিঠির উপর ভিত্তি করে ইডির বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না পুলিশ। তিনি বেলা ৩টের মধ্যে কলকাতার পুলিশ কমিশনার এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা বিচারককে চিঠির প্রতিলিপি আদালতে পেশের নির্দেশ দেন। আগামিকাল বৃহস্পতিবার কুন্তলের চিঠির প্রেক্ষিতে ইডির আবেদনে পুর্ণাঙ্গ শুনানি হওয়ার কথা। এদিনই হেস্টিংস থানার অতিরিক্ত ওসি অংশুমান রায় আদালতে জানান, কুন্তলের চিঠির ভিত্তিতে কোনও এফআইআর হয়নি। এদিনই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, তদন্তের গতি স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য এসব করা হচ্ছে। তদন্তকারী অফিসারদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের অতিচালাকি বরদাস্ত করা যাবে না।