কলকাতা: ব্যবধানটা না না করে প্রায় দু’বছর৷ দেখা হয়েছে অনেকবার৷ কিন্তু ছোঁয়া যায়নি৷ একটিবারও হাতে হাত ধরে মারামারি করা যায়নি৷ চুল ধরে টানা যায়নি৷ আসলে সবই যে ভার্চুয়াল (Virtual Class) ছিল৷ অবশেষে পাশের সিটে বসা বন্ধুটাকে কাছে পেল ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়াটা৷ এখন চেহারায় অনেক পরিবর্তন এসেছে তাদের৷
কলকাতার এক সরকারি স্কুলের (School Reopen in West Bengal) এই ছবিটা শুধু এক জায়গায় আটকে নেই৷ এমন ছবি ধরা পড়েছে গোটা রাজ্যে৷ প্রায় প্রতিটা স্কুলে প্রায় প্রতিটা ক্লাসরুমে অনেকে আবার নিজের বন্ধুকেও চিন্তে পারেনি৷ ক্ষণিকের জন্য থ মেরে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা গিয়েছে তাদের৷
হবে নাই বা কেন? এক অজানা অসুখ তো সব চুরমার করে দিয়েছিল৷ যে অসুখ আটকে দিয়েছিল বন্ধুত্ব৷ স্কুলের মারামারি, বেঞ্চে পাশাপাশি বসার অধিকার কেড়েছিল৷ শৈশবকে ঘরবন্দি করেছিল৷ দু’বছরের সেই বেড়াজাল ভাঙল৷
আরও পড়ুন: Alipurduar School: দাঁতালে ভেঙেছে স্কুলের ঘর, বারান্দায় পড়ুয়ারা, হাতি পাহারায় ঠায় বসে বাবা-মায়েরা
স্বাভাবিক হচ্ছে দেশ-রাজ্য৷ করোনা আতঙ্ক কাটছে৷ বুধবার থেকে রাজ্যে খুলল প্রথম থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল৷ বাবা-মায়েদের চিন্তা, আতঙ্ক, ভয় কোনও কিছুই যেন খুদেদের উপর প্রভাব ফেলেনি৷ দু’বছরের এই বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছে তারা৷ আর পাশের বন্ধুটাকে দূরে সরাতে চায় না কেউই৷ শৈশব আর স্কুল এই দুইয়ের লড়াইয়ে আজ সত্যি হার মানল করোনা৷
শহরতলি থেকে শহর কলকাতা৷ স্কুল খোলার প্রথম দিনের ছবিটা একইরকম৷ কোনও স্কুলে মাস্টারমশাই-দিদিমণিরা ফুল-চকোলেট-গান দিয়ে পড়ুয়াদের বরণ করেন৷ কোথাও আবার প্রথম দিনটা গান-নাচ দিয়ে শুরু হল৷ কোথাও পড়ুয়ারা নাটক করল৷ যোগ দিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারাও৷ সবই যেন নতুন সূর্য দেখার চেষ্টা৷ করোনা আতঙ্ক ভুলে যাওয়ার চেষ্টা৷ গত দু’বছরে অনেক পাল্টে গিয়েছে পরিস্থিতি৷ স্কুল খুললেও মানতে হচ্ছে করোনা বিধি৷ এখন গা ঘেঁষে বসার অনুমতি নেই৷ অনুমতি নেই টিফিনের সময় স্কুলে মাঠে ধূলো মেখে মারামারি করার৷ অনুমতি নেই একই টিফিনে অন্যের হাত দেওয়ার৷ কিন্তু তাতে কি? স্কুল তো খুলল৷ বন্ধুটাকে পাশে পাওয়া গেল৷ কচি কাঁচারা বলছে, এটুকু চলুক৷ আস্তে আস্তে ঠিক হবে৷ খেলতে তো পারব৷
আরও পড়ুন: WB Covid Update: রাজ্যে সামান্য বাড়ল দৈনিক সংক্রমণ, কমল মৃত্যু
আর মাস্টারমশাই! যেন পড়ানো ছন্দ ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন৷ এটাই তো তাঁদের জগৎ ছিল৷ করোনা তো ভেঙে সব চুরমার করে দিয়েছিল৷ তাঁরাও অনেক সহকর্মী হারিয়েছেন৷ হারিয়েছেন বন্ধু ও প্রিয়জনকে৷ অনেকে তো পাশে বসা সহকর্মীকে আজ আর দেখতেও পাচ্ছেন না৷ প্লাস্টিকে মুড়ে সবার চোখের আড়ালে চলে গিয়েছিলেন তিনি৷ তাও কিছুটা শান্তি ফিরল৷ অতীত ভুলে আবার নতুন করে লড়াইয়ের অক্সিজেন পেতে শুরু করলেন তাঁরা৷