মুম্বই: ভোলবদলের রাজনীতির ‘ম্যাজিশিয়ান’ শরদ পাওয়ার (Sharad Pawar) এনসিপি-র (NCP) কর্তৃত্ব ত্যাগের কয়েকঘণ্টার মধ্যেই পালটি খেলেন। নিজের হাতে গড়া দলের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে চলেছেন ‘মারাঠা স্ট্রংম্যান’ শরদ পাওয়ার। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে তিনি তাঁর চূড়ান্ত মত জানাবেন। পাওয়ারের ভাইপো অজিত পাওয়ার (Ajit Pawar) মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একথা জানান। অজিত পাওয়ার এবং শরদ-কন্যা সুপ্রিয়া সুলে (Supriya Sule) এদিন সন্ধ্যায় দলের অন্য নেতাদের নিয়ে দেখা করেন পাওয়ারের সঙ্গে। আলোচনার পর সাংবাদিকদের অজিত বলেন, তিনি কয়েকদিন সময় চেয়েছেন।
অজিত জানান, কাকা বলেছেন আমি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিলাম। কিন্তু, তোমাদের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে ফের ভেবে দেখব। তার জন্য আমি দু-তিনদিন সময় চাই এবং ভেবে দেখব তখনই যখন দলের কর্মীরা তাঁদের ঘরে ফিরে যাবেন। পাওয়ারের ইস্তফার পরপরই দলের অনেক পদাধিকারীও ইস্তফা দেন। সে নিয়ে তিনি বলেন, কিছু নেতা পদত্যাগ করেছেন শুনলাম, সেটা বন্ধ করতে হবে।
আরও পড়ুন: Congress Joining | রাজ্যে তৃণমূলের ভাঙন অব্যাহত, মগরাহাটে শতাধিক কর্মীর যোগদান কংগ্রেসে
প্রসঙ্গত, এনসিপি-র অনেক নেতা-কর্মী শরদ পাওয়ারের বাড়ির সামনে বসে রয়েছেন। বেশ কয়েকজন পদস্থ নেতা ইস্তফা দিয়ে দেন। তাঁদের সকলেরই দাবি, পাওয়ারকেই দলের সভাপতি থাকতে হবে। দরকার হলে একজন কার্যকরী সভাপতি হিসেবে কাজ চালাবেন পাওয়ারের অধীনে, দাবি অজিতের। অজিত পাওয়ার আরও বলেন, আমরা কাকাকে বলেছি যে কর্মীরা এতটুকুও খুশি নয়। আপনি সভাপতি থাকুন এবং একজন কার্যকরী সভাপতি নিয়োগ করুন। উনি সেসব কথা শুনে আমাদের বাইরে এসে বসে থাকা কর্মীদের বোঝানোর কথা বলেন।
উল্লেখ্য, এদিনই দুপুরে এনসিপি সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান প্রবীণ রাজনীতিবিদ শরদ পাওয়ার। তাঁর জায়গায় কাকে বসানো হচ্ছে সেই নিয়ে আপাতত এনসিপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা হয়নি। পাওয়ার এনসিপির সভাপতির পদ ছাড়ার সিদ্ধান্তের ঘোষণায় শুধু মহারাষ্ট্র নয়, গোটা দেশেই রাজনৈতিক মহলে নানা চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। তিনি কি রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নিতে চান, না কি এর পিছনে অন্য কোনও ছক আছে, তা নিয়েও চলছে বিভিন্ন জল্পনা। লোকসভা ভোটের মুখে যখন বিজেপি বিরোধী জোট নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে, তখন পাওয়ারের এই সিদ্ধান্তে অ-বিজেপি শিবিরও বিস্মিত।
মাসখানেক ধরেই শরদ পাওয়ারের এনসিপিতে নানা ডামাডোল চলছে। পাওয়ারের ভাইপো অজিত পাওয়ার বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হবেন বলে রাজনৈতিক মহলে নানা চর্চা চলছিল। বলা হচ্ছিল এনসিপির বহু বিধায়ক অজিত-বিজেপির এই নতুন খেলার সঙ্গী হবেন। মাঝখানে বেশ কিছুদিন অজিতের খোঁজও মিলছিল না। পরে অবশ্য অজিতই সব জল্পনায় জল ঢেলে দিয়ে জানান, এসব কিছুই হচ্ছে না। শরদ পাওয়ারও জানিয়েছিলেন, ভাইপো এমন কোনও উদ্যোগ নিচ্ছেন না। তবে কাকা-ভাইপো এমন দাবি করলেও মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে এখনও জল্পনা অব্যাহত রয়েছে।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার শরদ পাওয়ার এনসিপির সভাপতির পদ ছাড়ার ঘোষণা করায় রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়ায়। এদিন আত্মজীবনী ‘লোক মাজে সঙ্গায়ে’র দ্বিতীয় সংস্করণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই পাওয়ার আচমকা সভাপতি পদ ছেড়ে দিচ্ছেন বলে ঘোষণা করেন। তাতে উপস্থিত সকলেই অবাক হয়ে যান। মুহূর্তের মধ্যে আলোড়ন পড়ে মহারাষ্ট্রের সর্বত্র। পওয়ার জানান, অনেক দিন হল তিনি এনসিপির সভাপতির পদ আঁকড়ে রয়েছেন। এবার অন্য কেউ এই পদে বসুন। পাশাপাশি এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ জানিয়ে দেন, তিনি রাজনীতি ছাড়ছেন না। তাঁর রাজ্যসভার সদস্যপদের মেয়াদ এখনও রয়েছে। আগামী দিনে তিনি মানুষের সঙ্গে মানুষের হয়েই কাজ করে যেতে চান। পাওয়ারের এই আকস্মিক ঘোষণায় এনসিপির অন্দরেও নানা প্রশ্ন উঠেছে। তবে তিনি রাজনীতি ছাড়ছেন না বলে জানানোয় দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা আশ্বস্ত হয়েছেন।
কংগ্রেস ছেড়ে এনসিপি প্রতিষ্ঠা করার পর থেকেই শরদ ২৫ বছর দলের সভাপতি পদে রয়েছেন। তাঁর ৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবন ঘটনার ঘনঘটায় ভরা। চারবার তিনি মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসেছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও হয়েছেন একাধিকবার। ২০০৪ সালে সোনিয়া গান্ধীর বিদেশিনী ইস্যুকে কেন্দ্র করে শরদ কংগ্রেস ছাড়েন। এনসিপি প্রতিষ্ঠা করেন। শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরের সঙ্গে তাঁর বরাবরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। পরে অবশ্য বালাসাহেবের মৃত্যুর পর তাল কেটে যায়। শরদের উদ্যোগেই কংগ্রেস, এনসিপি এবং শিবসেনার মহাবিকাশ আঘারি জোট মহারাষ্ট্রে সরকার গড়ে। গত বছর শিবসেনার ভাঙনের ফলে জোট সরকারের পতন হয়। বিজেপি এবং শিবসেনার (একনাথ শিন্ডে গোষ্ঠী) সরকার গঠন হয়।