নয়াদিল্লি: ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তানে মহিলাদের শিক্ষার অধিকারের (Right of Education for Women in Afghanistan) উপর হস্তক্ষেপ করেছে তালিবান (Taliban)। আফগানি মেয়েদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (Secondary and Higher Study)। আর তার ঠিক উল্টো ছবি আফগানিস্তান থেকে শত শত কিলোমিটার দূরে ভারতের রাজধানী অঞ্চল দিল্লিতে (Delhi, India)। দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির ভোগালের আবাসিক কলোনি (Residential Colony, Bhogal)। জঙ্গপুরার (Jungpura) অন্তর্গত মসজিদ রোডের (Masjid Road) এক ভাঙাচোরা গলিতেই রয়েছে একটি ভাড়াবাড়ি। সেই স্থানই হয়ে উঠেছে আফগানি কচিকাঁচাদের জন্য শিক্ষারমন্দির ও নিরাপদ স্থান। বিশেষত মেয়েদের জন্য।
সৈয়দ জামালউদ্দিন আফগান হাইস্কুল (Sayed Jamaluddin Afghan High School)। আফগানিস্তান থেকে ভারতের এসে যে সমস্ত শরণার্থী (Refugee) এসে ঠাঁই নিয়েছেন, তাঁদের শিশুরা এখানেই শিক্ষাগ্রহণ করেন। শিশুদের ক্লাস রুম যাওয়ার পথেই পড়বে প্রিন্সিপালের ঘর (Principal’s Room)। সেখানে চোখে পড়বে তালিবানদের ক্ষমতা দখলের আগেকার আফগানি জাতীয় পতাকা (Pre-Taliban Era Afghan Flag)।
২০২১ সালে সেদেশের গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেছিল তালিবান। তারপর অর্থাভাবে পড়ে স্কুলটি। স্কুল প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার দোরগোড়ায় এসে পৌঁছেছিল। শিক্ষার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল পড়ুয়াদের। প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মোট ২৭৮ জন পড়ুয়া রয়েছে সৈয়দ জামালউদ্দিন আফগান হাইস্কুলে। তাদের কথা ভেবে দিল্লিতে অবস্থিত আফগান দূতাবাসের (Afghan Embassy) আধিকারিকরা ভারতের বিদেশমন্ত্রকের (Ministry of External Affairs – MEA) দ্বারস্থ হয়।
আফগানিস্তানে তালিবান মেয়েদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে ঠিকই, কিন্তু ভারত যেমন নিজের দেশের বেটিদের পড়ানোর কথা বলে, তেমনই প্রতিবেশী দেশের বেটিদের শিক্ষার অধিকারকেও অগ্রাধিকার দেয়। দিল্লির মসজিদ রোডের গলিতে অবস্থিত এই স্কুলে এলেই চোখে পড়বে মেয়েদের শিক্ষা নিয়ে অসংখ্য বার্তা। তার মধ্যে কোথাও লেখা রয়েছে, “প্রিয় মহিলারা, আপনাদের সক্ষমতাতেই আপনাদের পরিচিতি।” কোথাও আবার নোটিস বোর্ডে কোনও পড়ুয়া লিখে রেখেছে, “প্রতিটি শিশুই ভিন্ন ভিন্ন ফুলের মতো এবং তারা সকলে মিলে এই পৃথিবীকে সুন্দর বাগান করে তোলে।” এরকম রয়েছে নানারকম মেসেজ।
স্কুলটি ১৯৯৪ সালে উইমেন’স ফেডারেশন অব ওয়ার্ল্ড পিস (Women’s Federation of World Peace) প্রতিষ্ঠা করেছিল আফগানিস্তান থেকে ভারতে চলে আসা শরণার্থীদের বাচ্চাদের পড়াশোনার জন্য শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে (Educational Centre for Children)। এরপর, ধাপে ধাপে বদল। ২০০৮ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় (Primary School) এবং ২০১৭ সাল উচ্চবিদ্যালয়ে (High School) পরিণত হয় স্কুলটি। ভারতে বসবাসরত শরণার্থীদের অনুরোধে তৎকালীন আফগান রাষ্ট্রপতি আশরফ গনি (Ashraf Ghani, Former President of Afghanistan) এই স্কুলের জন্য অনুদান পাঠানো শুরু করেছিলেন। কিন্তু তালিবান ক্ষমতা দখলের পর সেই অনুদান আসা বন্ধ হয়েছে। তারপরই ভারত সরকারের দ্বারস্থ হতে হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে না ছিল বাড়ি ভাড়া দেওয়ার অর্থ, আর না ছিল শিক্ষক-শিক্ষিকাকে পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য তহবিল। শেষ পর্যন্ত ভারত সরকার এগিয়ে আসায় স্কুল এখনও চলছে। জানা গিয়েছে এই স্কুল চালাতে মাসে ৫.৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়।