গাছগাছালি, ফল ও বিভিন্ন ফুলের নির্যাসে তৈরি এসেনশিয়াল অয়েল (Essential Oil) রান্না, রূপচর্চা, চিকিত্সা সহ অন্যান্য একাধিক কাজে ব্যবহার হয়। ল্যাভেনডার, জাসমিন, রোজমেরির মত এসেনশিয়াল অয়েলের নাম আমাদের প্রায় ঠোটস্থ। তবে নাম ও উপকারিতা জানলেও এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি জানা না থাকলে সমস্যা হতে পারে। যে কারণে আপনি এসেনশিয়াল অয়েল কিনেছেন তার যথাযথ উপকার আপনি পাচ্ছেন কিনা তা নির্ভর করছে ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতির ওপর। তাই ব্যবহারের সময় মাথায় রাখুন এই বিশেষ দিকগুলি।
- এসেনশিয়াল অয়েল প্রস্তুতকারকরা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় তেল তৈরির করেন। এই তেল কখনও রান্নার তেলে, কখনও ক্রিম, বডি ওয়াশ বা সাবানে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়। অনেকে আবার শুধুমাত্র এই তেলের ঘ্রাণ নিয়ে, গায়ে মালিশ করে কিংবা স্নানের জলে মিশিয়ে ব্যবহার করেন। তবে সবথেকে ভাল হয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে যদি এই তেল ব্যবহার করা যায়।
- চিন্তা বা উদ্বেগ থাকলে ল্যাভেনডার, ক্যামোমাইল বা রোজম্যারির সুবাসে আপনার মন ও শরীর শান্ত করে। এর ঘ্রাণ নিতে পারেন কিংবা এই তেল ডাইলিউট করে গায়ে মালিশ করতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের মতে এই তেল থাকা উপাদানগুলি আমাদের মস্তিষ্কে রাসায়নিক সংকেত পাঠায়। বিশেষ করে মস্তিষ্কের যে অংশের দ্বারা আমাদের আবেগ ও অনুভুতি নিয়ন্ত্রিত হয়।
- হাতে বা পায়ে যে এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করা হয়। সেই একই তেল চোখ নাক, মুখ বা গোপনাঙ্গে ব্যবহারযোগ্য নাও হতে পারে, এটা মনে রাখা প্রয়োজন। যেমন লেমনগ্রাস, পেপারমিন্ট বা দারুচিনি।
- এসেনসিয়াল অয়েল কেনার সময় সতর্ক থাকুন। বাজারে এসেনশিয়াল অয়েলের ভেজাল রমরমিয়ে বিক্রি হচ্ছে। তাই বিশ্বাসযোগ্য প্রস্তুতকারকের তৈরি তেল কিনুন। প্রয়োজনে ভাল করে তেলের শিশির লেভেল পরে নিন। তেল খাঁটি কিনা দেখে নিন। অনেক সময় এসেনশিয়াল অয়েলে অন্যান্য রসায়নের ব্যবহার করা হয়। সেক্ষত্রে এই তেল ব্যবহার করলে আপনার ত্বকে বা শরীরে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
- গাছগাছালির নির্যাস থেকে তৈরি বা একেবারে খাঁটি এসেনশিয়াল অয়েল বলে যে কোনও সমস্যা হবে না তা কিন্তু নয়। অনেকের প্রাকৃতিক ভেষজের ব্যবহারেও ত্বক ও স্বাস্থ্যের সমস্যা হয়। তাই এই তেল ব্যবহারের আগে ত্বকের অল্প একটি অংশে লাগিয়ে দেখে নিন। সমস্যা না থাকলে ব্যবহার করুন।
- তিন বছরের বেশি এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার না করাই ভাল। বিশেষ করে তেল দেখতে ও তেলের গন্ধে যদি বিস্তর ফারাক নজরে পড়ে, তাহলে বুঝবেন অক্সিজেন এক্সপোজারের ফলে খারাপ হয়ে গেছে। তত্ক্ষনাত বাতিল করে দিন।
- ক্ষতস্থানে বা ত্বকে জ্বালা বা চুলকানির সমস্যা থাকলে এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার ন করাই ভাল। এতে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
- কিউমিন অয়েল (Cumin Oil) বা সিট্রাস অয়েল(Citrus Oil) রান্নায় ব্যবহার হলেও ত্বকের পক্ষে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আবার ইউক্যালিপটাস এসেনশিয়াল অয়েল (Eucalyptus Essential Oil) গায়ে মালিশের পক্ষে ভাল কিন্তু কোনও মতে খাবারে ব্যবহার করা যাবে না।
- এসেনশিয়াল অয়েল যেহেতু গাছগাছালির, ফুল ও পাতা, ছালের নির্যাসে তৈরি হয় তাই এগুলি কনসেন্ট্রেটেড হয়। তাই এই তেল সরাসরি ব্যবহার না করে ডাইলিউট বা অন্য কোনও তেল,ক্রিম বা স্নানের জলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা ভাল। এমন ভাবে মেশানো উচিত যাতে এসেনশিয়াল অয়েল শুধুমাত্র ১ থেকে ৫ শতাংশ ভাগই যেন থাকে।
- বাচ্চা ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার না করাই ভাল। বিশেষ করে বার্চ ও উইন্টারগ্রিনের মতো এসেনশিয়াল অয়েল একেবারেই ব্যবহার করবেন না। এগুলোতে মিথাল সালিসিলেট নামক রসায়ন থাকে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
- বাড়িতে বাচ্চা থাকলে এসেনশিয়াল অয়েল সরিয়ে রাখুন। এগুলি খুবই গাঢ় ও ঘণ থাকে এবং অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহার হলে বা ভুল ভাবে ব্যবহার করা হলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
- এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করতে আপনি যতই আগ্রহী হোন না কেন আপনার ত্বকে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া, যেমন জ্বালা, চুলকানি অ্যালার্জি হলে তত্ক্ষণাত ব্যবহার বন্ধ করা উচিত। এবং ওই অংশ জলে ভাল করে ধুয়ে ফেলতে হবে।