বর্ধমান: আজ মহানবমী। নবমী নিশি পোহালেই উমা পাড়ি দেবে কৈলাশে পাড়ি দেবেন। এক ঝাঁক মন খারাপ নিয়ে মায়ের জন্য ফের বছর ভর অপেক্ষা। শেষলগ্নে সবটুকু আনন্দ চেটেপুটে নিতে ব্যস্ত উৎসবপ্রিয় বাঙালি। পুজোর আনন্দ উসুল করতে সকাল থেকেই পথে নেমেছেন মানুষ। নবমীতে বর্ধমানের (Burdwan) সর্বমঙ্গলা মায়ের মন্দিরে (Sarvamangala Maa),কুমারী পুজো। এখানে নয়জন কুমারীকে কুমারী পুজোয় (Kumari Puja) করা হয়। কুমারী পুজোর অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে নবরাত্রি অনুষ্ঠান। অবিভক্ত বাংলায় প্রথম কুমারী পুজোর সূচনা হয় এই সর্বমঙ্গলা বাড়ি থেকেই। দেবী দুর্গার যেমন নটি রূপ আছে, ঠিক তেমনি কুমারী মায়ের নটি রূপ আছে সেই কারণেই নটি কুমারীকে এখানে পুজো করা হয়।
বর্ধমানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সর্বমঙ্গলা। তিনি বাংলার লৌকিক দেবতা ও বটে। তিনি পূর্ব বর্ধমান জেলার সর্বমঙ্গলা মন্দিরে পুজিত হন। এই মন্দিরটিকে অনেকে শক্তিপীঠ বলেন। সেই মতে এখানে দেবীর নাভি পরেছিল। দেবী সর্বমঙ্গলা ও ভৈরব।
আরও পড়ুন: ছাতা হাতে শেষ হবে এবারের দুর্গা পুজো? কী জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা
কথিত আছে, প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে শহর বর্ধমানের উত্তরাংশে বাহির সর্বমঙ্গলা পাড়ায় বাগদিরা পুকুরে মাছ ধরতে গিয়ে একটি শিলামূর্তি পেয়েছিল। সেটিকে প্রস্তর খণ্ড ভেবে তার উপরে শামুক–গুগলি থেঁতো করতো। সেই সময় দামোদর নদ লাগোয়া চুন তৈরির কারখানার জন্য শামুকের খোলা নেওয়ার সময় শিলামূর্তিটি চলে যায় চুন ভাটায়। তখন শামুকের খোলের সঙ্গে শিলামূর্তিটি পোড়ানো হলেও মূর্তির কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে সেই রাতে স্বপ্নাদেশ পাওয়া পর বর্ধমানের রাজা সঙ্গম রায় শিলামূর্তিটিকে নিয়ে এসে সর্বমঙ্গলা নামে পুজো শুরু করেন। পরবর্তীকালে ১৭০২ সালে টেরাকোটার নিপুণ কারুকার্য খচিত সর্বমঙ্গলা মন্দির নির্মাণ করেন মহারাজাধিরাজ কীর্তিচাঁদ মহতাব। ক্রমে মূল মন্দিরের আশেপাশে গড়ে ওঠে নাট মন্দির, শ্বেত পাথরের তৈরি রামেশ্বর ও বাণেশ্বর নামে দুটি শিব মন্দির। কালো পাথরে তৈরি হয় মিত্রেশ্বর, চন্দ্রশ্বর ও ইন্দ্রেশ্বর নামে আরও তিনটি শিব মন্দির।
সর্বমঙ্গলা মন্দিরের নিত্যপুজো ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে রাজবংশের শেষ যুবরাজ উদয়চাঁদ মহতাব ট্রাস্ট কমিটি গঠন করেন।তাঁর পুজো প্রায় সাড়ে তিনশো বছরেরও বেশি পুরোনো। সর্বমঙ্গলার ঘট প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে শারদোৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা করা হয়ে থাকে পূর্ব বর্ধমানে।কুমারি পুজাও হয়। এবছর ইংরেজির ১৫ তারিখে শুরু হয় নবরাত্রি অনুষ্ঠান আর শেষ হবে আজ এই নটি কুমারীকে পুজো করে নবরাত্রি পুজো। এই পুজো দেখতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমিয়েছে মন্দির চত্বরে। পুজো শেষে কয়েক হাজার মানুষকে ভোগ নিবেদন করবেন মন্দির কর্তৃপক্ষ যে রীতি চলে আসছে প্রায় ৩৫০ বছর ধরে।
আরও অন্য খবর দেখুন