ত্বক ও চুলের পরিচর্যা নিয়ে আমরা যতটা সচেতন থাকি হাতের নখ নিয়ে আমরা তেমন মাথা ঘামাই না। নখের যত্নে এই অবহেলা থেকে যতক্ষণ না বাড়াবাড়ি রকমের কোনও সমস্যা হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা বিশেষ আমল দিই না। আর সেখান থেকেই মাঝেমধ্যে নখের ওপর সাদা ছোপের সৃষ্টি হয়(white spots on nails)। তখন চিন্তা বাড়ে। এই সাদা দাগছোপকে বলা হয় লিউকনিচিয়া(leukonychia)। নখের ওপর এইরকম দাগ ছোপ (white spots on nails) যদিও ভয়ের কিছু নয়। তবে এটাকে অবহেলা করা বা নেল পালিশ দিয়ে ঢাকার ভুল করবেন না। নখের ওপর সাদা ছোপের (white spots on nails) একাধিক কারণ থাকে। সেই কারণগুলি কী এবং কীভাবে নখের যত্ন নিতে হবে তা জেনে নিন।
১.ম্যানিকিউরের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নখ
অনেক সময় ঘরে বসে কিংবা বিউটি পার্লারে ম্যানিকিউর করতে গিয়ে অপটু হাতে নখের পরিচর্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় নখের নীচে স্তরে থাকা ত্বক যাকে নেলবেড বলা হয়। এরকমটা হলে তখন নখের ওপর এই সাদা ছোপ সৃষ্টি হয়। আবার অনেক সময় ম্যানিকিউরে কোনও পদ্ধতিগত ভুল না থাকলেও তা যদি ঘন ঘন করা হয় তখনও নেলবেড ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। মূলত ম্যানিকিউরের সময় ইলেকট্রিক ফাইলের ব্যবহার বা জোর করে কিউটিক্যালকে ধাতুর সরঞ্জাম দিয়ে জোরে চাপ দেওয়া সহ এরকম একাধিক কারমণ এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। তবে শুধু এটাই নয় অনেক সময় ম্যানিকিউরের সময় অসাবধানতা কিংবা পদ্ধতিগত ক্রুটি থাকলে নখে ক্র্যাক দেখা দেয়, ভঙ্গুর হয়ে যায় এমনকি নখেরও ছাল ওঠে যেতে পারে।
এ ক্ষেত্রে যেটা করা যেতে পারে
ক্ষতিগ্রস্ত নখ বাড়তে দিন। প্রয়োজন হলে এ কাজে যাদের মুনসিয়ানা আছে যেমন নেল টেকনিয়ানদের পরামর্শ নিন। যারা নখের পরিচর্যা কিংবা নখ সাজানোর কাজ আপনার নেলবেডকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে দক্ষতার সঙ্গে করতে পারে।
২. ফাঙ্গাসের সংক্রমণ
অধিকাংশ সময়ে দেখা গেছে নখে কোনও ফাঙ্গাস সংক্রমণের হলে এরকম সাদা ছোপ সৃষ্টি হয়। নখে কোনও চিড় থাকলে এই জীবাণুগুলো সেই জায়গা দিয়ে নখের ভিতর ঢুকে পড়ে এবং নখের আশেপাশের চামড়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
ফাঙ্গাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বিশেষজ্ঞরা এই কাজগুলো করতে বলছেন। যেমন-
- নিয়মিত হাত ও পা ধুয়ে শুকনো করে মুছে নিন।
- নিয়মিত মোজা বদলান।
- পায়ের মাপ অনুযায়ী জুতো পড়ুন, এমন জুতো পড়ুন যাতে হাওয়া ভাল খেলতে পারে এবং যেটা বেশি আঁটোসাঁটো না তেমন জুতো পড়ুন।
- এমন নেল সালোঁ বাছুন যারা প্রত্যেকবার ম্যানিকউরের পর সব সরঞ্জাম স্টেরিলাইজ করে নেয়।
- পাবলিক স্পেসে যতটা সম্ভব খালি পায়ে হাঁটা চলা এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।
- এই সাদা ছোপ ছাড়াও ফাঙ্গাস সংক্রমণের কারণে অনেক সময় নখ ফেটে যায়, নখ ঘন হয়ে যায় আবার নখ হলদেটে কিংবা বাদামীও হয়ে যায়।
এ ক্ষেত্রে যেটা করা যেতে পারে
ফাঙ্গাল ইনফেকশনের ক্ষেত্রে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খান। ফাঙ্গাল ইনফেকশন সারতে সময় লাগে তাই এই জীবাণু সংক্রমণ সারতে কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতি বেগতিক হলে চিকিৎসক প্রয়োজনে নখ উপরে ফেলতে পারেন।
৩.মিনারেল ডেফিসিয়েন্সি
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন ক্যালসিয়াম বা জিঙ্কের অভাবেও অনেক সময় নখে এই সাদা ছোপ তৈরি হয়। তবে এই বিষয়টি নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।
৪. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় নখের সমস্যা হয়
অনেক সময় বিশেষ কিছু রোগের ওষুধের কারণে নখের সমস্যা হতে পারে। নখ ক্ষতিগ্রস্ত হয় আবার নেলবেড নষ্ট হয়ে য়ায়। যেমন-
- ক্যানসারের জন্য কেমোথেরাপির ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় নখের সমস্যা হতে পারে।
- ব্রণ সারাতে রেটিনয়েড ব্যবহার হলে নখের এরকম সমস্যা হতে পারে।
- বেশ কিছু অ্যান্টিবায়োটিক যেমন সালফোনামাইড ও ক্লোক্সাসিলিন খেলে সমস্যা হতে পারে।
- অ্যান্টিকনভালস্যান্টে ড্রাগস যেমন কার্বামাজেপাইন খেলে নখের এরকম সমস্যা হয়।
- উচ্চ রক্তচাপের জন্য ব্যবহার করা মেটোপ্রোলল নামের ওষুধে সমস্যা হয়
- অ্যান্টিফাঙ্গাল যেমন ইট্রাকোনাজোল ব্যবহারে সমস্যা হতে পারে।
- এই সব ওষুধের ব্যবহারে নখ বাড়তে সমস্যা হতে পারে, নখ পাতলা হয়ে যায় ও নখ ভঙ্গুর হয়ে যায়।
এক্ষেত্রে যেটা করা যেতে পারে
সাধারণত ওষুধের কারণে নখে এরকম ছোপ পড়লে তার সেরকম প্রতিকার নেই তবে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। যাতে ওষুধ বদলানো যায়।
৫.ভারী ধাতুর বিষক্রিয়া
অনেক সময় থ্যালিয়াম ও আর্সেনিকের মতো ভারী ধাতুর বিষক্রিয়ায় নখে এ রকম সাদা ছোপ পড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে আর্সেনিক বিষক্রিয়ায় সাদা দাগের মতো দেখা যায় নখের ওপর, এগুলিকে মিজ বলা হয়। থ্যালিয়ামের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই হয়। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে উপকার পাবেন।