নদিয়া: ৪৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী বনেদি বাড়ির পুজোর (Bonedi Barir Durga Puja) ইতিহাস নিয়ে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে রয়েছে তরফদার বাড়ির দুর্গাপুজো (Durga Puja 2023)। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ম্লান হয়ে পড়ে এই পুজো। অর্থের অভাবে বন্ধও হয়ে গিয়েছিল সেই পুজো। ধীরে ধীরে বনেদি বাড়ির পুজো থেকে বারোয়ারি পুজো হয়ে ওঠার গল্প জানা যাক।
১৭৫৫ সালে জনৈক গঙ্গোপাধ্যায় বাংলাদেশের বরিশালে ২০০ বছরের প্রাচীন বুড়ো মা নামে এই দুর্গাপুজো তরফদার বাড়িতে সূচনা করেন। এ দেশ ও দেশ মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চারশো বছরের পুরনো এই দুর্গাপুজো। তরফদার বাড়ির সদস্যরা জীবন জীবিকা এবং পেশার টানে রাজ্যের এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস করেন। বেশ কিছু বছর আগে পর্যন্ত তাঁরা মাঝেমধ্যে এক-আধবার আসলেও শেষ ২০ বছর তাঁদেরও আর দেখা যায়নি। স্থানীয় বসবাসকারী এক শরিক প্রদীপ তরফদারদের পক্ষে ব্যয়বহুল দুর্গাপুজো চালানো অসম্ভব হয়ে ওঠেছিল। তার উপর পরিবারের এক সদস্যের মৃত্যু হওয়ায় বন্ধ ছিল এক বছর।
তবে পাড়ার একটি ক্লাবের সদস্যরা ঠাকুরদালান এবং সংলগ্ন ছোট্ট একটু জায়গা, অর্থের বিনিময়ে শরিকদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে, আবার সাড়ম্বরে পুজো শুরু করেন। এ বিষয়ে বর্তমান এক শরিক জানান, পরিবারের এক সদস্যের মৃত্যুতে ক্লাব এই পুজোর দায়িত্ব নেয়। তারপর থেকে তা আর ফেরেনি পরিবারের হাতে। যদিও এতে তাঁদের প্রবল আপত্তি আছে এমন নয়, বিভিন্ন সমস্যা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, তাঁরাও বর্তমানে ক্লাব পরিচালিত পুজোয় অংশগ্রহণ করেন প্রতিবছরেই।
আরও পড়ুন: মহালয়ার গুরুত্ব বাঙালিদের কাছে অপরিসীম, কেন?
যদিও দুবছর করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আর পাঁচটা পুজোর মতোই আড়ম্বরহীন পুজো করেছিল ক্লাব কর্তৃপক্ষ। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর এ বছর তাদের বাড়তি পাওনা সরকারি অনুদান। ক্লাবের মহিলা সদস্যরা ঠিক করেছেন চার দিন ধরে চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, তবে বহিরাগত কোনও শিল্পী নয়, পাড়া এবং শান্তিপুরের বিভিন্ন কলাকুশলীরা অংশগ্রহণ করবেি তাতে।
পুরনো রীতি অনুযায়ী, অষ্টমীতে মহাভোগ বিতরণ করা হবে সকলের জন্য। এই ভোগের বিশেষত্ব থোড়ের তরকারি, চালতার টক। চাল কুমড়োর ভোগ দেওয়া হয় নবমী ও দশমীতে। সম্পূর্ণ সাবেকিয়ানায় একচালার দুর্গা প্রতিমা নির্মাণ করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় উদ্যোক্তাদের। কারণ মাটির সাজে সময় এবং ধৈর্য লাগে অনেক। তাই মৃৎশিল্পীর অভাব হয়ে পড়ছে ইদানীং। তাই আরও বেশি সময় নিয়ে রীতি অনুযায়ী জন্মাষ্টমীতে কাঠামো পুজোর বদলে, পয়লা বৈশাখে কাঠামো পুজোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। রংয়ের কাজ বাদে সমস্তটাই মোটামুটি তৈরি হয়ে গিয়েছে।
এই পুজোর আরও এক বিশেষ রীতি, ষষ্ঠীর দিন পুজো শুরুর আগে এবং দ্বাদশীতে বিসর্জনের আগে বরণ পরিবারেরই কোনো সধবা মহিলা করে থাকেন প্রথমে। তারপর পাড়া-প্রতিবেশী, বহিরাগত সকলেই। এখানে সিঁদুর খেলতে আসেন শান্তিপুরের বিভিন্ন পাড়ার মহিলারা।