জীবনের কঠিন বাস্তব মৃত্যু। তবে প্রত্যেকবারই মৃত্যু যখন দুঃসংবাদ হয়ে আমাদের কাছে আসে তখন একেবারে অন্তর থেকে নাড়া দিয়ে যায়। তবে সব থেকে বেশি কষ্ট দেয় আকস্মিক মৃত্যু। নশ্বর জীবনে মান অভিমান, চাওয়াপাওয়া, লাভক্ষতির সমস্ত হিসেবনিকেশ যেন এক লহমায় ওলটপালট হয়ে যায়। কাছের মানুষের এই আকস্মিক চলে যাওয়া মেনে নেওয়া সত্যি বড় কঠিন। কোন পরিস্থিতিতে মৃত্যু, মৃতের পরিবারের সদস্যরা, মৃতের উপর তাঁদের নির্ভরতা আরও জটিল করে তোলে হারানোর কষ্ট। যে ব্যক্তি বা পরিবার কাছের মানুষকে হারিয়ে বিমর্ষ এই সময় মানসিক বল বাড়াতে তাঁদের পাশে থাকাটা দরকার। তবে আপনার ব্যবহারে বা কথাবার্তায় অনিচ্ছাকৃত ভাবেও যেন তারা আঘাত না পান সেই বিষয়ে নজর রাখা দরকার। এই সময় কী করবেন আর কী করবেন না জেনে নিন-
নিজে থেকে দুর্ঘটনা নিয়ে পরিবারের কাছে প্রশ্ন করবেন না
মৃতের পরিবার আপনার সঙ্গে নিজে থেকে মৃত্যু নিয়ে আলোচনা করলে তাতে অংশগ্রহণ করুন। কিন্তু নিজে থেকে কিছু জানতে চাইবেন না। এই সময় বক্তা নয়, একজন ভাল শ্রোতার প্রয়োজন তাই তাঁদের কথা মন দিয়ে শুনুন।
দুর্ঘটনার জন্য মৃত ব্যক্তিকে দোষারোপ করবেন না
বেপরোয়া গাড়ি চালানো, কোনও ভুল অভ্যেস, সঙ্গদোষ কিংবা মাদকাসক্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় ভিক্টিমকে নিয়ে কুমন্তব্য করবেন না। একেই কাছের মানুষকে হারিয়ে মৃতের প্রিয়জনেরা বিমর্ষ সেই সময়ে এই কাজ একেবারেই সমীচীন না।
অন্যদের ক্ষতির কথা তুলবেন না
মৃত্যু এমনই এক কঠোর বাস্তব যে এর দুঃখ যাঁরা ভোগ করেন তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়া সত্যি খুব কঠিন। কী বলবেন আর কী বলবেন না ভেবে পান না। আপনার ক্ষেত্রে এ রকমটা হলে পাশে থাকার আশ্বাসটুকুও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের সঙ্গে যোগযোগ করুন কিংবা দেখা করুন। তবে পরিবারকে বোঝাতে গিয়ে অন্যদের ক্ষতির কথা বা উপমা দেবেন না । এতে আপনার সদিচ্ছা থাকলেও সামনের মানুষ কষ্ট পাবেন। মৃত্যুকে ঘিরে প্রত্যেক ব্যক্তির কষ্ট খারাপলাগা আলাদা আলাদা। সব কিছু এক করে দেওয়া কিংবা তুলনা টানা ঠিক না।
সান্ত্বনা দিতে গিয়ে এই কথাগুলো বলবেন না-
যেমন “যে ভাবে জীবনযাপন করত এক না একদিন এই ধরনের অঘটন হওয়ার ছিল”
“কেন, কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটল ”
“মন থেকে সব কিছু ভুলে একেবারে নতুন ভাবে জীবনযাপন করতে হবে”
“আমার সঙ্গে এ রকম হলে আমি এ সব সহ্য করতে পারতাম না”
“আপনি যতটা সহ্য করতে পারেন ঈশ্বর আপনাকে ততটাই কষ্ট দেয়”
সান্ত্বনার ভাষা খুঁজে না পেলে কোনও কথা না বলাই ভাল। এ ক্ষেত্রে আপনার উপস্থিতি যথেষ্ট। বরং এই কাজগুলো করার চেষ্টা করুন-
মৃত ব্যক্তির নাম করে তাঁকে নিয়ে কথা বলতে পারেন। তাঁকে ঘিরে আপনার যদি কোনও সুখস্মৃতি থাকে পরিবারের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারেন।
মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া থেকে তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। তাঁদের খোঁজ নিন। একাকিত্ব কিংবা মানসিক সমস্যা যাতে প্রিয় জনের মনে দানা বাঁধতে না পারে সেই চেষ্টা করুন।
মৃতের পর তার পরিবারের নিত্য জীবনযাপনে কোনও সমস্যা বা কতরকমের কাজে থাকে সেগুলিতে সাহায্য করতে পারেন। ছোট বাচ্চা বা পোষ্য থাকলে তাদের সামলানোর সাময়িক দায়িত্ব নিতে পারেন।
শেষকৃত্যে এবং শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজনে পরিবারের সাহায্য করতে পারেন। তাঁদের পাশে থাকতে পারেন।
(ছবি সৌজন্য: Flora Queen)