ভ্রমাসাগর : পরিবারের সদস্যরা কেবলই তার খুঁত ধরত। নিজের ভাইবোনের সঙ্গে বারংবার তার তুলনা করা হত। পরিবারের কাছ থেকে দিনের পর দিন এই অপমান আর সহ্য করতে পারেনি ১৭ বছরের মেয়ে। সুযোগ বুঝে বাবা ও মা সহ পরিবারের সকলের খাবারেই বিষ মিশিয়ে দেয় সে। যার ফলে মৃত্যু হয় ৪ জনের।
চলতি বছরের জুলাই মাসে কর্নাটকের একটি কৃষক পরিবারের ৪ সদস্যের মৃত্যু হয়। তার তিন মাস পর পুলিশ সেই পরিবারেরই ১৭ বছরের কিশোরীকে গ্রেফতার করে। তাকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, দিনের পর দিন নিজের পরিবারের কাছে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হতে হয়েছে তাকে। নিজের ভাই-বোনের সঙ্গে তার তুলনা করা হত বারংবার। আর সেই রাগের বশবর্তী হয়েই সে পরিবারের সকলকে খুন করেছে। পুলিশের তরফে নাবালিকার বিরুদ্ধে ৩০২ ধারা এবং ৭০ ধারার অধীনে মামলা রুজু করে তাকে একটি হোমে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন : আগামী ২৫ অক্টোবর থেকে কর্নাটকে খুলছে প্রাথমিক স্কুল
১২ জুলাই একই পরিবারের বাবা, মা, দাদি, বোন ও ভাই গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানেই ৪ জনের মৃত্যু হয়। কিন্তু ঘটনাক্রমে সেই পরিবারের একমাত্র ছেলে বেঁচে যায়। কিন্তু সেও ওই বিষ মেশানো খাবার খেয়েছিল। এই ঘটনায় কর্নাটকের ভ্রমাসাগর পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেন। ৪ জনের দেহ ময়নাতদন্তের পর জানা যায় যে, কীটনাশক মেশানো খাবার খাওয়ার ফলে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু পুলিশ সন্দেহভাজনক কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি। পরিবারটি কৃষক সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল এবং তাঁদের কোনও শত্রুও ছিল না বলে জানায় পুলিশ। জীবিত অবস্থায় যখন ছেলেটি ফিরে আসে, তখন তার সঙ্গে তার বোন, ওই ১৭ বছরের কিশোরীর তর্ক শুরু হয়। তর্কাতর্কির মধ্যেই সে স্বীকার করে নেয় যে, সে বাবা-মা সহ পরিবারের সকল সদস্যর খাবারে বিষ মিশিয়ে ছিল। বোনের মুখে এই ধরণের কথা শুনে তার ভাই হতভম্ব হয়ে যায় এবং পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। কিশোরীর অভিযোগে ছিল, তাকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে এনে পরিবারের কাজে নিযুক্ত করা হয়েছিল। অথচ তার বোন স্কুলে যেত। বিনা কারণে অনেক সময় পরিবারের হাতে লাঞ্চিত হত সে। আর সহ্য করতে না পেরে সে পরিবারের সকলকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১২ জুলাই তার পরিবারের খাবার জন্যযে খাবার বানানো হয়, তাতে কীটনাশক মিশিয়ে দেয়। পরিবারের লোকেরা রাতের অন্যান্য খাবারের সঙ্গে এই কীটনাশক মেশানো খাবারও খায়। রাত ১১টা ৩০ মিনিট নাগাদ পরিবারের সদস্যরা পেট ব্যথা বমি ও অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে দাভানাগেরে একটি হাসপাতালে মারা যায়। কিন্তু কিশোরীর ভাই একমাত্র বেঁচে যায়। পরে দাদার সঙ্গে ঝগড়ার ফলে খুনের কারণ ও খুনির পরিচয় সামনে আসে। আপাতত ওই কিশোরী পুলিশি হেফাজতে রয়েছে।