ইম্ফল: তফসিলি উপজাতিদের নিয়ে আদালতের একটি রায়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের ক্ষুদ্র এই পাহাড়ি রাজ্যে নতুন করে হিংসাত্মক উত্তেজনা তৈরি হয়। শনিবার রাজ্যের রাজধানী ইম্ফলের কয়েকটি এলাকায় নতুন করে হিংসা ছড়িয়ছে। প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মানুষকে সেনা শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি অফিসে সেনা ও আধা সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। গত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই কার্যত যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে মণিপুর। শুক্রবার গভীর রাতে চূড়াচাঁদপুরে গুলি করে খুন করা হয়েছে বাড়িতে ছুটি কাটাতে আসা এক সিআরপিএফ কমান্ডোকে। এমনকী ইম্ফলে হিংসার বলি হয়েছেন ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিসের এক আয়কর আধিকারিক।
পরিস্থিতি সামলাতে শুক্রবার মণিপুরে ৩৫৫ ধারা জারি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তারপরেই এই ঘটনা। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআরপিএফের তরফে শুক্রবার ছুটিতে থাকা মণিপুরের জওয়ান ও অফিসারদের অবিলম্বে নিকটবর্তী শিবিরে রিপোর্ট করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবরে মণিপুরের চুরাচাঁদপুরে চারজন গুলিবিদ্ধ মারা গিয়েছেন।
আরও পড়ুন: Amarta Sen | Visva Bharati University | প্রতীচীর সমানে ধরনা মঞ্চে শামিল শুভাপ্রসন্ন থেকে গৌতম ঘোষ
মণিপুর প্রশাসন সূত্রা জানা গিয়েছে, বুধবার মণিপুরি ছাত্র সংগঠন অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুরের তরফে মেইতেই জনগোষ্ঠীর দাবির বিরোধিতা করে একটি মিছিল বের করে। সেখান থেকেই হিংসার সূত্রপাত। এই বিক্ষোভের জেরে একাধিক বাড়িতে আগুনও ধরে যায়। বিষ্ণুপুর ও চুরাচন্দপুর জেলায় মোতায়েন থাকা ভারতীয় সেনা, আধা সেনার তরফে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের সরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রায় ৪ হাজার গ্রামবাসীকে সেনার অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে জায়গা দেওয়া হয়েছে।
মূলত সমতল এলাকার বাসিন্দা মেইতেইরা মণিপুরের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী। অন্য দিকে, কুকি, অঙ্গামি, লুসাই, নাগা, থাড়োয়াসের মতো প্রায় ৩০টি জনজাতি গোষ্ঠীর বাস পাহাড়ি এলাকায়। তাদের আশঙ্কা, জনজাতির মর্যাদা পেলেই পাহাড়ি এলাকার জমিতে হাত বাড়াবে মেইতেইরা। এখন জনজাতির মর্যাদা না পাওয়ায় তারা ওই জমি কিনতে পারে না।
প্রসঙ্গত, মণিপুরের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে রাজ্যের বনাঞ্চল এবং জলাভূমির উপর জনজাতি মানুষদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার অভিযোগে আন্দোলন চলছিলই। প্রশাসনের অনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিলের ডাক দিয়েছিল রাজ্যের জনজাতি ছাত্র ইউনিয়ন। সম্প্রতি সে রাজ্যের মেইতেই সম্প্রদায় তাদের তফসিলি উপজাতিভুক্ত করার দাবি তুলেছে। গত ২৮ এপ্রিল মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের (Manipur Chief Minister N Biren Singh) একটি অনুষ্ঠানমঞ্চ ও উদ্বোধনস্থল আগুনে ছাই করে দেয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মিলিত ফোরাম (Tribal Leaders Forum)। বিজেপি (BJP) নেতৃত্বাধীন মণিপুর সরকারের আচরণের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ বলে মনে করা হচ্ছে।