ওয়েব ডেস্ক: আজ ১২ জুন। ১৯৭৫ সালে আজকের দিনে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর (Indira Gandhi) বিরুদ্ধে আদালতের রায় বদলে দিয়েছিল দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে। লোকসভা নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধীর জয়কে ১৯৭৫ সালের ১২ জুন বাতিল ঘোষণা করেছিল এলাহাবাদ হাইকোর্টের (Allahabad High Court)। সেই ঐতিহাসিক রায়ের আজ ৫০ বছর পূর্তি।
এলাহাবাদ হাইকোর্টের ২৪ নম্বর এজলাসে সেদিন সকাল ১০টা থেকে শ্রোতা ও দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা ও আগ্রহ ছিল তুঙ্গে। বিচারপতি জগমোহন লাল সিনহা (Justice Jagmohan Lal Sinha) রায়ে জানান, ১৯৭১ সালে রায়বেরিলি কেন্দ্র থেকে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জয় বৈধ নয়। নির্বাচনী দুর্নীতির বিরুদ্ধে আদালতের ওই রায় ভারতীয় গণতন্ত্রে এক যুগান্তকারী নির্দেশ।
সমাজবাদী নেতা রাজনারায়ণকে (Raj Narayan) এক লক্ষেরও বেশি ভোটে ১৯৭১ সালের ওই ভোটে পরাজিত করেন ইন্দিরা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ইন্দিরার ভাবমূর্তি তখন উজ্জ্বল। কিন্তু বিনা যুদ্ধে ময়দান ছাড়তে নারাজ ছিলেন রাজনারায়ণ। তিনি আদালতে অভিযোগ আনেন, নির্বাচনী প্রচারে সরকারি ব্যবস্থার অপব্যবহার এবং ভোট গ্রহণে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে জিতেছেন ইন্দিরা।
আরও পড়ুন: বিমান দুর্ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত করুক কেন্দ্র, দাবি অভিষেকের
সরকারি অফিসার ও কর্মীরা ইন্দিরার সভাগুলিতে মঞ্চ তৈরি থেকে লাউডস্পিকারের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিলেন। দ্বিতীয়ত, সরকারি চাকরিতে পদত্যাগ না করে যশপাল কাপুর ইন্দিরার নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। মূলত এই দুটি অভিযোগ প্রমাণিত বলে আদালত জানায়। সেই সঙ্গে পরবর্তী ছয় বছর ইন্দিরা ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না বলেও ঘোষিত হয়।
দেশের সর্বত্র এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে উৎসবের বিপরীতে কংগ্রেসি বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু হয়। সকলের নজর ঘুরে যায় সুপ্রিম কোর্টের দিকে। ২৪ জুন সুপ্রিম কোর্ট ওই রায়ে আংশিক স্থগিতাদেশ দেয়। তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ চালাতে পারবেন, কিন্তু সংসদে ভোট দান এবং সংসদ সদস্য হিসেবে বেতন তুলতে পারবেন না বলে রায় দেওয়া হয়। এই প্রেক্ষাপটে ১৯৭৫ সালের ২৫ জুনের রাতে ইন্দিরা দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। যার জেরে পরবর্তী একুশ মাসে দেশের সার্বিক চালচিত্র বদলে যায়।
১৯৭৭ সালে ওই পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ইন্দিরাকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশের জনগণ। কিন্তু ক্ষমতায় আসা জনতা পার্টি দীর্ঘস্থায়ী হয় না। ১৯৮০ সালে ফের ক্ষমতায় আসেন ইন্দিরা। কিন্তু ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর নিজেরই নিরাপত্তারক্ষী দ্বারা বাড়িতেই নিহত হন ইন্দিরা। অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির থেকে শিখ সন্ত্রাসবাদীদের উৎখাত করতে ১৯৮৪ সালের জুনে তাঁর নির্দেশে হওয়া অপারেশন ব্লুস্টারের পরিণতিতে ৬৬ বছর বয়সেই নিহত হন ইন্দিরা। এই হত্যাকাণ্ডের জেরে ভয়ংকর হিংসাত্মক হামলায় কয়েক হাজার শিখ নিধন হয়। যা ভারতীয় ইতিহাসের এক অন্ধকারময় অধ্যায়।
অন্যদিকে ক্ষমতায় এসেই ইন্দিরা সংবিধানে গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন এনেছিলেন। ৩৯তম সংশোধনী মারফত আর্টিকল ৩২৯-ক তিনি যুক্ত করেন। যার দ্বারা প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এবং লোকসভার অধ্যক্ষের নির্বাচন সম্পর্কে আদালতে চ্যালেঞ্জ করায় নিষেধাজ্ঞা আনা হয়। এই সংশোধনীর বৈধতাও চ্যালেঞ্জ করেন রাজনারায়ণ। এক্ষেত্রেও ওই সংশোধনীর অধিকাংশটাই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বাতিল হয়। ভারতীয় বিচারব্যবস্থা ও সংবিধানের ক্ষমতা ও স্বচ্ছতা আবারও এভাবে প্রমাণিত হয়।
দেখুন অন্য খবর: