কলকাতা: আগামী সপ্তাহেই ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে সরকারিভাবে আলোচনা শুরু করতে চায় কংগ্রেস। জাতীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব একগুঁয়ে মনোভাব ছেড়ে নমনীয় হওয়ার পক্ষপাতী আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে। তিন রাজ্যের বিধানসভা ভোটে বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নিয়ে শতাব্দী প্রাচীন এই দলটি এবার অনেক সতর্ক পদক্ষেপ করার পথে হাঁটতে চলেছে। দলীয় সূত্রের খবর, সমঝোতার বিষয়টি প্রদেশ নেতৃত্বের হাতে পুরোপুরি না রেখে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব নিজেদের কাঁধে নিয়ে অগ্রসর হতে চায়। তবে কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা বলেন, তার মানে এই নয় যে, প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের গুরুত্ব দেওয়া হবে না। তাঁদের মতামতও শোনা হবে।
ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের সঙ্গে লোকসভা ভোটে আসন সমঝোতা কোন ফর্মুলায় হবে, তার সূত্র কী হবে, সে সব নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কংগ্রেস হাইকম্যান্ড জাতীয় জোট কমিটি গঠন করেছে। মুকুল ওয়াসনিকের নেতৃত্বাধীন ওই কমিটিতে রয়েছেন অশোক গেহলট, সলমন খুরশিদ, মোহন প্রকাশের মতো প্রবীণ নেতারা। কমিটি দুদিন ধরে দিল্লিতে বৈঠকে ব্যস্ত। বিভিন্ন রাজ্যের কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে কথা বলে প্রবীণ নেতারা রাজ্যগুলির পরিস্থিতি বুঝে নিচ্ছেন। প্রদেশ নেতাদের বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে, জাতীয় প্রেক্ষাপটের কথা মাথায় রেখে তাঁদের আসন সমঝোতার আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। তাঁদের মনে রাখতে হবে, এটা বিধানসভার নয়, লোকসভার ভোট। এখানে বিজেপিকে হারানোই ইন্ডিয়া জোটের মূল লক্ষ্য। তার জন্য প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদেরও নমনীয় হতে হবে।
আরও পড়ুন: অযোধ্যায় শুরু প্রধানমন্ত্রীর রোড শো, হাত নেড়ে অভিবাদন মোদির
দলের এক প্রবীণ নেতা বলেন, রাজ্যগুলির বাস্তব অবস্থাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। যেমন কেরলে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের জোট হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইন্ডিয়া জোটে বামেরা এবং কংগ্রেস আছে, থাকবে। ওই নেতা বলেন, পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি, পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশেও প্রধান দল বা সরকারে আসীন আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে সমঝোতায় যেতে হবে জাতীয় রাজনীতির কথা মাথায় রেখেই।
গত ২৮ ডিসেম্বর নাগপুরে কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবসের সভার আগে দলের জাতীয় জোট কমিটি বাংলার নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। সেখানে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এবং ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য দীপা দাশমুন্সি জানিয়ে দেন, বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়া সম্ভব নয়। বরং বামেদের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়াই হতে পারে। দিল্লি থেকে ফিরে শুক্রবার কলকাতায় অধীর অবশ্য বলেন, বাংলায় জোট বা আসন সমঝোতার প্রশ্নে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে হাইকম্যান্ড।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম থেকেই দাবি করে আসছেন, যে রাজ্যে যে দল শক্তিশালী, তাদের সামনে রেখে চলতে হবে বাকি দলগুলিকে। তার মধ্যেই গত বুধবার দেগঙ্গায় দলের এক সভায় নেত্রী ঘোষণা করেন, সারা দেশে ইন্ডিয়া জোট, বাংলায় তৃণমূল। বিজেপিকে এখানে তৃণমূল একাই শিক্ষা দিতে পারে, অন্য কোনও দল নয়। রাজনৈতিক মহল মনে করেছে, বাংলায় যে তৃণমূল একাই লড়তে প্রস্তুত, সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা।
দলের এক নেতা বলেন, বিভিন্ন রাজ্যের ক্ষেত্রে নেতাদের নানা মত থাকতে পারে সেখানকার স্থানীয় রাজনীতির কথা মাথায় রেখে। কিন্তু লোকসভার নির্বাচন সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষিত। সেখানে রাজ্যের চিন্তা দূরে সরিয়ে জাতীয় রাজনীতিকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে।
দেখুন আরও অন্যান্য খবর: