নয়াদিল্লি: ঢোক গিলল দিল্লি পুলিস৷ চাপে পড়ে মেনে নিল, আদালতের রায় বেরনোর আগে মহম্মদ জুবেরের জামিন খারিজ নিয়ে ভুল তথ্য তারাই সংবাদমাধ্যমকে দিয়েছে৷ শনিবার দিল্লির পাতিয়ালা আদালতে অল্ট নিউজের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ জুবেরের জামিনের আবেদনের শুনানি ছিল৷ কিন্তু দুপুর তিনটের পর খবর রটে যায়, জামিনের আবেদন খারিজ করে আদালত জুবেরকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠিয়েছে৷ জুবেরের আইনজীবী সৌতিক বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি পুলিসের বিরুদ্ধে ভুয়ো খবর পাচারের মতো বিস্ফোরক অভিযোগ তোলেন৷ পরে জানা যায়, সৌতিকের অভিযোগ ভুল নয়৷ অমিত শাহের নিয়ন্ত্রণাধীন দিল্লি পুলিসই ওই ভুয়ো খবর রটিয়েছে৷ দিল্লি পুলিসের ডিসিপি কে পি এস মালহোত্রা বলেন, ‘অল্ট নিউজের সহ প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ জুবেরের ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানোর ভুল খবর পুলিসই মিডিয়াকে দিয়েছে৷’
দিল্লি পুলিসের ভূমিকায় স্বভাবতই ক্ষুব্ধ আইনজীবী মহলের একটা বড় অংশ৷ তাদের মতে, রায় ঘোষণার আগে তথ্য ফাঁস করে আদালতের গরিমা নষ্ট করেছে দিল্লি পুলিস৷ এতে সাধারণের মনে বিচারব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাবে৷ পুলিসই যদি আইনবিরুদ্ধ কাজ করে তাহলে পুলিস সম্পর্কেও খারাপ ধারণা তৈরি হবে৷ এদিন দিল্লির পাতিয়ালা কোর্টে জামিনের আবেদন করেছিলেন জুবের৷ সব পক্ষের সওয়াল জবাব শোনার পর রায় সংরক্ষিত রাখেন বিচারক৷ এর কিছুক্ষণ বাদে পুলিসের ডেপুটি কমিশনারের মেসেজ পৌঁছয় সংবাদমাধ্যমগুলির কাছে৷ ওই মেসেজে লেখা, জুবেরের জামিনের আবেদন খারিজ হয়েছে৷ তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে৷ জুবেরের আইনজীবী সৌতিক প্রশ্ন তোলেন, রায়ে কী বলা হয়েছে তা কেপিএস মালহোত্রা জানলেন কী করে? পরে অবশ্য ওই পুলিসকর্তা ভুল স্বীকার করে নেন৷ এদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল৷ আদালত এখনও রায় ঘোষণা করেনি৷ বিচারক কিছুক্ষণের জন্য এজলাসে বসেন৷ ফের চলে যান৷
শনিবারই জুবেরের চার দিনের পুলিস হেফাজতের মেয়াদ শেষ হয়। জুবেরের বিরুদ্ধে এদিন প্রমাণ লোপাট ও বিদেশি অর্থ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। দিল্লি পুলিস ধৃত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে নতুন তিনটি মামলা দায়ের করে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ২০১ (প্রমাণ লোপাট), ১২০বি (ফৌজদারি ষড়যন্ত্র) এবং বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৫ নম্বর ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। তদন্তকারীরা জুবেরের মোবাইল ফোন এবং একটি হার্ডডিস্ক বাজেয়াপ্ত করেছে। পুলিসের দাবি, জুবেরের বিভিন্ন বক্তব্য এবং পোস্টে ধর্মীয় ভাবাবেগকে আঘাত করা হয়েছে। ওই সব পোস্টের জন্য দেশে হিংসা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জুবেরের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩-এ (বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতার প্রচার) এবং ২৯৫-এ (ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে বিদ্বেষপূর্ণ কাজ) ধারায় এফআইআর দায়ের করা হয়।
যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, জুবেরের ওয়েবসাইটে বিজেপির ভণ্ডামি এবং নানা অপকীর্তির মুখোশ খুলে দেওয়া হয়। এর জন্যই কেন্দ্রের শাসকদলের এত রাগ জুবেরের উপর। সেই কারণেই তাঁকে অন্যায় ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এবং বিভিন্ন সংগঠন তিস্তার গ্রেফতারিরও তীব্র সমালোচনা করেন।