অজমের: রাজস্থানের (Rajasthan) অজমেরের (Ajmer) পকসো (POCSO) আদালত কক্ষ (Couret Room)। বিবর্ণ। দেওয়ালের রং চটা, ঝুল, ধুলোময়। সেখানেই উপস্থিত বিচারক (Judge) , আইনজীবী (Advocate), অপরাধী, নির্যাতিতা। গত ডিসেম্বরের শেষদিনে শুরু হল শুনানি। শুরুতেই বিচারক-আইনজীবী-অভিযুক্তের উদ্দেশে নির্যাতিতা চিৎকার করে বলে উঠলেন, “এখনও কেন বারবার আমাকে আদালতে ডাকছেন? ৩০ বছর হয়ে গেছে। আমি এখন দাদি, আমাকে একা ছেড়ে দিন।”
মুহূর্তের আদালত কক্ষে ‘পিন ড্রপ সাইলেন্স’৷ মুহূর্তেই নীরবতায় মিশে গেল কান্নার শব্দ। নির্বাক আদালতে উপস্থিত বাকিরাও। খেদের সঙ্গে নির্যাতিতা বলে চলেছেন, ‘‘আমাদের পরিবার আছে৷ আমরা তাঁদের কী বলব!’
অজমের গণধর্ষণ মামলার খবরে নির্যাতিতার উক্ত বক্তব্যই ‘শিরোনাম’ করে খবর ছেপেছিল হিন্দি কাগজ দৈনিক ভাস্কর৷ ঘটনাটি ১৯৯২ সালের অজমেরের নারকীয় গণধর্ষণ কাণ্ড৷ যে খবর পরে ‘অজমের ব্লাকমেল’ নামে পরিচিতি পায়৷ যা আজও ঘটনায় জড়িতদের মনে আঘাত সৃষ্টি করে৷
২০০৪ সালে দিল্লি পাবলিক স্কুল (DPS) ‘এমএমএস’ কেলেঙ্কারি’র অনেক আগের ঘটনা অজমের গণধর্ষণ৷ যে ঘটনার ভিডিয়ো রেকর্ডিং এবং ফটো নির্দিষ্ট জায়গায় সংরক্ষিত হয় নির্যাতিতাদের মুখবন্ধ করার জন্য৷ অজমের গণধর্ষণ মামলার জন্ম হয়েছিল রাজনৈতিক কারণে৷ একই সঙ্গে ধর্ম, দায়মুক্তি এবং ছোট-শহরে গ্ল্যামারের বিষাক্ত মিশ্রণ থেকে৷ যার নির্ভীক সত্য সিটি ক্রাইম রিপোর্ট না হলে আদালতে পৌঁছাত না।
আরও পড়ুন-Mahatma Gandhi: গান্ধী হত্যার অন্যতম সাক্ষী রঘু…
শুধু তাই নয়, অজমেরের সকলেই জানে ঘটনায় মূল অভিযুক্ত কে বা কারা৷তারা বিখ্যাত চিশতী জুটি, ফারুক এবং নাফিস, যারা অজমের শরীফ দরগার খাদিম(অভিভাবক) পরিবারের সদস্য এবং তাদের বন্ধুদের দল। এরাই কয়েক মাস ধরে স্কুলগামী তরুণীকে হুমকি ও ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে ফাঁদে ফেলে এবং গণধর্ষণ করে। একটি ফটো কালার ল্যাবে গিয়ে মহিলাদের নগ্ন ছবির সঙ্গে জুড়ে দেয়৷ পরে তা ছড়িয়েও দেওয়া হয়৷ যা তাদের অপরাধ করতে সহায়তা করেছিল। ঘটনার কথা এলাকায় ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় ধর্মীয় উত্তেজনা ছড়ায়৷ কার্যত বন্ধ হয়ে যায় অজমের শহর৷ কিন্তু, অনেকেরই জানা ছিল না যে মহিলারা কারা এবং তাদের মামলা আলোচনার বিষয় হওয়ার পরে তারা কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেছে।
যদিও স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম নির্যাতিতাদের “আইএএস-আইপিএস কি বেটিয়া(আইএএস এবং আইপিএস অফিসারদের কন্যা)” বলে চিহ্নিত করে৷ যদিও তাঁরা কোনও অভিজাত পরিবারের ছিলেন না। অনেকেই সরকারি কর্মচারীদের বিনয়ী, মধ্যবিত্ত পরিবারের৷ যাইহোক সেই ঘটনায় হৈচৈ পড়তেই তাঁরা অজমের ছাড়েন।