গুরুগ্রাম: জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, এনডিআরএফের ১১০ জনের একটি দল একটানা প্রায় ২০ ঘণ্টা ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কাজ করছে রাজ্যের এনডিআরএফ টিম, এমনকি দমকলের কর্মীরাও। কিন্তু এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত গুরুগ্রামে ভেঙে পড়া বহুতলের ছাদের ধ্বংসাবশেষ সম্পূর্ণ ভাবে সরিয়ে ফেলা সম্ভব হয়নি। উদ্ধারকাজ অব্যাহত। শুক্রবার সকালে এনডিআরএফের তরফে সরকারি ভাবে ২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়। এনডিআরএফের এক কর্তা জানান, গুরুগ্রামের ধ্বংসস্তূপ থেকে এ পর্যন্ত একটিই দেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। আর একটি দেহ এখনও চাপা পড়ে রয়েছে। উদ্ধারকারীদের আশঙ্কা, আরও বেশ কয়েক জন ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে রয়েছেন। সেই সংখ্যাটা কত, উদ্ধারকারীরা তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।
গুরুগ্রাম পুলিস শুক্রবারই এই ঘটনায় একটি মামলা রুজু করে। চিন্টেল প্যারাডিসো হাইজিংয়ের নির্মাণকারী সংস্থার বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ এনেছে পুলিস। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সন্ধে ৬টা নাগাদ গুরুগ্রামের ১০৯ সেক্টরে চিন্টেল প্যারাডিসো হাইজিং কমপ্লেক্সের একটি বহুতল আবাসনের একাংশ ভেঙে পড়ে। হরিয়ানা পুলিসের এক পদস্থ কর্তা জানান, আবাসনের নির্মাণকারী অশোক সোলামন-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে আইপিসি-র ৩০৪এ ও ৩৪ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। বহুতল ভেঙে মৃত একতা ভরদ্বাজের স্বামী এফআইআরটি দায়ের করেন। একতা ভরদ্বাজ ভেঙে পড়া টাওয়ার ডি-র তিন তলার বাসিন্দা ছিলেন। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারেরও অভিযোগ এনেছেন তিনি।
একতার স্বামী রাজেশ ভরদ্বাজ জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি ছেলের ফোন পেয়েছিলেন। ছেলে ফোনে জানায়, টাওয়ারের কয়েকটি তলের ছাদ ভেঙে পড়েছে। আমার স্ত্রীও গুরুতর জখম হন। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। সন্ধে ৭টা নাগাদ স্ত্রীর মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: Gurugram Roof Collapse: গুরুগ্রামের ঘটনায় নজর, সকলের নিরাপত্তা কামনা মুখ্যমন্ত্রীর
রাজেশ ভরদ্বাজের এফআইআর অনুযায়ী, ছেলের ফোন পেয়ে চটপট বাড়ি ফিরে আসি। দেখি, ষষ্ঠ ও সপ্তমতল ভেঙে পড়েছে। উদ্ধারকারী দল ও পুলিসকর্মীরা একযোগে ধ্বংস্তূপ সরাচ্ছেন। সেখান থেকে আমার স্ত্রীকেও উদ্ধার করা হয়। কিন্তু, হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও শেষরক্ষা হয়নি। চিকিৎসকেরা স্ত্রীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তাঁর ধারণা, ডি-টাওয়ারের ধ্বংসস্তূপের নীচে আরও মৃতদেহ চাপা পড়ে রয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ডি টাওয়ারের আর এক বাসিন্দা কৌশল কুমারের দাবি, বৃহস্পতিবার সন্ধে ৬টা নাগাদ অ্যাপার্টমেন্টের ষষ্ঠতলের ড্রয়িংরুম থেকে প্রথমতল পর্যন্ত ভেঙে পড়ে। এখনও ওই টাওয়ারের কিছু কিছু অংশ ভেঙে পড়ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তাঁর কাছ থেকেই জানা যায়, ডি টাওয়ারে চারটে পরিবার ছিল। মোট ৬টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ২টি খালিই ছিল।
পুলিসের প্রাথমিক তদন্তে সামনে আসে, ডি-ব্লকের ষষ্ঠতলে ড্রয়িংরুমের সংস্কারের কাজ চলছিল। সেইসময় ষষ্ঠতল থেকে গ্রাউন্ড ফ্লোর পর্যন্ত সবক’টি তল হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর জানিয়েছেন, তিনি ব্যক্তিগত ভাবে পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে চলেছেন।
আরও পড়ুন: Gurugram Collapse: গুরুগ্রামের বহুতলে দুর্ঘটনা, হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল ছাদ, হতাহতের আশঙ্কা