নয়াদিল্লি: হিজাব বিতর্কে জরুরি শুনানির আর্জি খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। কর্নাটক হাইকোর্টের অন্তর্বর্তী আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে, বৃহস্পতিবারই শীর্ষ আদালতে স্পেশাল লিভ পিটিশন দায়ের করেছিলেন কর্নাটকের উদুপির কলেজের পাঁচ ছাত্রী। সুপ্রিম কোর্টে জরুরি শুনানির আর্জি গ্রাহ্য হল না।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন কর্নাটক হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী নির্দেশে জানায়, এই মামলার নিষ্পত্তি না-হওয়া পর্যন্ত কলেজে ধর্মীয় পোশাক পরে আসা যাবে না। নিষেধাজ্ঞা শুধু হিজাবে নয়, কলেজে গেরুয়া স্কার্ফ পরেও আসা যাবে না। তা স্পষ্ট করে দেয় কর্নাটক হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।
অন্তর্বর্তী রায়ে, স্কুল-কলেজ-সহ কর্নাটকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি অবিলম্বে খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়। কর্নাটক সরকারের এক নির্দেশের প্রেক্ষিতে অশান্তির আশঙ্কায় তিন দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: Karnataka Hijab Row: রায়ের আগে স্কুল-কলেজে ধর্মীয় পোশাক নয়, হিজাব বিতর্কে নির্দেশ কর্নাটক হাইকোর্টের
প্রধান বিচারপতি ঋতুরাজ অবস্থির নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ সতর্ক করে বলে, ধর্মীয় পোশাক পরার জন্য ছাত্রছাত্রীদের কোনও ভাবেই জোরাজুরি করা যাবে না। মামলার নিষ্পত্তি পর্যন্ত পিটিশনার-সহ সব পক্ষকে অপেক্ষা করতে হবে। আগামী সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। রাজ্যে শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখতেই অন্তর্বর্তী এই নির্দেশ বলে জানায় পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।
হিজাব বিতর্কের সূত্রপাত গত জানুয়ারিতে। কর্নাটকের উদুপির এক কলেজে। হিজাব পরে কলেজে গেলে, কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানায়। ছয় ছাত্রীকে ক্লাস করতে বাধা দেওয়া হয়। ক্রমে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এই নির্দেশের পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে। হিন্দুত্ববাদী ছাত্ররা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গেরুয়া স্কার্ফ পরে আসা শুরু করে। বিষয়টি ক্রমশ সাম্প্রদায়িক দিকে গড়াতে থাকে। আশান্তির আঁচ পেয়ে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমতা বা শৃঙ্খলা নষ্ট হয়, এমন কোনও ধর্মীয় পোশাক পরে আসা উচিত নয়।
আরও পড়ুন: Pakistani Fishing Boats: বিএসএফ, বায়ুসেনার যৌথ তল্লাশিতে গুজরাতে আটক ১১টি পাক নৌকা
হিজাব নিয়ে এই বিতর্কের মধ্যেই কর্নাটক হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন উদুপির ওই কলেজের পাঁচ ছাত্রী। কলেজ কর্তৃপক্ষ হিজাব নিয়ে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করে, তা চ্যালেঞ্জ করা হয়। মামলার পিটিশনারদের দাবি, হিজাব পরা মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। দেশের সংবিধান এই অধিকার দিয়েছে।
পিটিশনারদের আরও দাবি, তাঁরা ছোট থেকেই হিজাব পরে আসছেন। এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও আগে হিজাব পরে এসেছেন। তখন কোনও আপত্তি ওঠেনি। তাঁরা হিজাব পরবেন, কি পরবেন না, তা অন্য কেউ ঠিক করে দিতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন উদুপির ওই ছাত্রীরা। তাঁদের অভিমত, হিজাব ইস্যু খুব সামান্য। পড়ুয়াদের মধ্যেই এটা সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। রাজনৈতিক নেতারা বিষয়টিতে নাক গলানোর কারণেই হিজাব নিয়ে আজ এত উত্তেজনা।
আরও পড়ুন: Kerala HC: হিজাব পরে মুসলিম মেয়েদের মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসার অনুমতি কেরল হাইকোর্টের
বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ জানার পরেই, শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হন পিটিশনাররা। মামলাকারী ছাত্রীদের কথায়, সামনেই পরীক্ষা রয়েছে। আমরা চাই না ধর্মীয় পোশাক বিতর্কে ক্লাস ব্যাহত হোক। আদালতের উপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে। বিতর্কের দ্রুত নিষ্পত্তিতেই তাঁরা ‘সু্প্রিম’ দ্বারস্থ হয়েছেন।