কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: ভারতের বিচার ব্যবস্থা কেবলমাত্র সংবিধানের প্রতিই দায়বদ্ধ, আর কারও কাছে নয়। এমনটাই মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনা। শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বিচার ব্যবস্থা একটি স্বাধীন সংস্থা। কোনও রাজনৈতিক দলের কাছে তার উত্তর দেওয়ার দায়বদ্ধতা নেই। অনেক সময় এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলি মনে করে, বিচার বিভাগ তাদের দলীয় এজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এটা অত্যন্ত ভ্রান্ত ধারণা।
দেশের প্রধান বিতারপতি বলেন, আমরা ঘটা করে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পালন করছি। ভারতীয় প্রজাতন্ত্রেরও ৭২ বছর হহে গেল। এখনও আমরা বুঝতে পারলাম না, সংবিধান আমাদের কী দায়দায়িত্ব দিয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকেই ভারতীয় সংবিধানতার ভূমিকা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল মনে করে, সরকারের প্রতিটা কাজকর্মকেই বিচার বিভাগ সমর্থন করবে। আবার বিরোধী দল ভাবে, বিচার বিভাগ তাদের হয়েই কেবল কথা বলে যাবে। তাঁর মতে, এই ধ্যানধারণা থেকেই সংবিধান এবং গণতন্ত্র সম্পর্কে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। প্রধান বিচারপতির ক্ষোভ, রাজনৈতিক দলগুলির এই সমস্ত মনোভাবই সাধারণ মানুষকে বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে হতাশ করে তুলছে।
বিচারপতি রমনা বলেন, এটা পরিষ্কার করে দেওয়া উচিত যে, বিচার ব্যবস্থা শুধু সংবিধানের প্রতিই দায়বদ্ধ। তিনি সহিষ্ণুতা এবং সংবেদনশীলতার উপরও জোর দেন। এই প্রসঙ্গে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নজির টেনে আনেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, মার্কিন সমাজের সহিষ্ণুতা এবং সংবেদনশীলতার জন্যই তারা পৃথিবীর সবচেয়ে সেরাদের আকর্ষণ করতে পারে। আমেরিকা শ্রেষ্ঠ সম্পদদের মর্যাদা দিতে জানে।
আরও পড়ুন: Mohammed Zubair: জুবেরের বিরুদ্ধে প্রমাণ লোপাট ও বিদেশি অর্থ নেওয়ার অভিযোগ, নতুন ৩ ধারায় মামলা
বিচারপতি রমনা আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াতে ইন্দো আমেরিকান সোসাইটির এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে ওই সব মন্তব্য করেন। শুক্রবারই সু্প্রিম কোর্ট বিজেপির সাসপেন্ডেড নেত্রী নূপুর শর্মাকে তীব্র ভাষায় তিরস্কার করে। দুই বিচারপতির অবসরকালীন বেঞ্চ বলে, সম্প্রতি দেশে আগুন জ্বালিয়েছে নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্য। ওই পরিস্থিতির জন্য একমাত্র তিনিই দায়ী। ওই বিজেপি নেত্রী নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন বলে আদালতে জানান। তাঁর বিরুদ্ধে করা সমস্ত এফআইআর নিরাপত্তার কারণে তিনি দিল্লিতে স্থানান্তরের আবেদন করেন।
সেই আবেদন খারিজ করে শীর্ষ আদালত বলে, তিনি নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন, না তাঁর জন্য দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে? সুপ্রিম কোর্ট বলে, ওই মহিলার মাথার উপর রাষ্ট্রশক্তির আশীর্বাদ আছে বলে তিনি যা খুশি তাই বলতে পারেন না। তিনি একটি দলের মুখপাত্র হয়েছেন বলে কী হয়েছে। আদালত দিল্লি পুলিসকেও এক হাত নিয়েছে। এই আবহে প্রধান বিচারপতির ওই মন্তব্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে আইনি মহল।